এ লেভেলের ফল খারাপ, ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ - দৈনিকশিক্ষা

এ লেভেলের ফল খারাপ, ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনার কারণে পরীক্ষা ছাড়াই কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালের বিশ্বব্যাপী ‘এ’ লেভেলের ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। বাংলাদেশে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রকাশিত ফলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালের অধীন দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর ফলাফল পাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই অভিযোগ তুলেছেন, আগের ফল মূল্যায়ন করে এই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ নতুন ফলে তাদের ‘ডাউন গ্রেড’ (আগের তুলনায় খারাপ ফল) হয়েছে। কীভাবে, কিসের ভিত্তিতে গ্রেডিং হলো তার কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী অভিভাবকরা।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ্যাসোসিয়েশন’ নেতারা বলছেন, এ ধরনের সমস্যা কেবল বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই হয়েছে। করোনার কারণে পরীক্ষা ছাড়া আগের ফলাফল মূল্যায়ন করে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে গ্রেড পাঠানো হয়েছে কেমব্রিজ হয়ত আরও কঠোরভাবে ফলাফল মূল্যায়ন করে গ্রেডিং করেছে। এতে অনেকের ফল প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো ফলের তুলনায় খারাপ হয়েছে। যা হয়ত শিক্ষার্থীদের আগের সিরিজে পাওয়া ফলের থেকেও খারাপ হয়েছে। বিষয়টি কেমব্রিজকে জানানো হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা ফলের বিরুদ্ধে ‘আপিল’ করতে পারে। আগামীকাল ১৮ আগস্ট কেমব্রিজ প্রকাশিত ফল নিয়ে একটি অবস্থান জানাবে। সেখানে আপিলের ফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য আপিলের সুযোগ থাকবে বলে আশা করছেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ও অধ্যক্ষরা। এর আগে গত ১১ আগস্ট বিশ্বব্যাপী চলতি বছরের জুন সিরিজের ফল প্রকাশ করে কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল। তবে করোনার কারণে পরীক্ষা না নিয়ে বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের সহায়তায় গ্রেডিং প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল কেমব্রিজ। এক বিজ্ঞপ্তিতে কেমব্রিজ জানিয়েছিল, এক সঙ্গে ১৩৯টি দেশের চার হাজার স্কুলের নয় লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রেড ইস্যু করা হয়েছে।

কেমব্রিজ এ্যাসেসমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক মহেশ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ একটি সঙ্কটময় বছর হিসেবে পরিণত হয়েছে। যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সারাবিশ্বের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর। বিশ্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় কেমব্রিজ শিক্ষার্থীরা তাদের জুন সিরিজের পরীক্ষা দিতে পারেনি। যার কারণে আমরা শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে গ্রেড প্রদানের জন্য একটি কঠোর প্রক্রিয়া তৈরি করেছি। পুরো প্রক্রিয়া জুড়ে আমরা স্কুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি এবং আমাদের গ্রেডিং পদ্ধতিটি সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেছি। তবে ফল প্রকাশের পর এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও আপত্তি তুলেছেন, তাদের ‘ডাউন গ্রেড’ দেয়া হয়েছে। আগের সিরিজে যে ফল ছিল এখন অজানা কারণে তার থেকেও খারাপ ফল দেয়া হয়েছে। অনেকের আবার ফল আগের তুলনায় বেশি হয়েছে। গত ক’দিন ধরেই রাজধানীতে অবস্থিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে অসন্তোষের খবর পাওয়া যাচ্ছিল।

ফল প্রকাশের পর থেকেই সানিডেল, স্কলাস্টিকা, এসএফএক্স গ্রিন হেরাল্ড, টার্কিশ হোপ ইন্টারন্যাশনালসহ কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালের অধীন দেশের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আপত্তি উঠেছে ফল আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। তবে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা তাদের অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাচ্ছিলেন না স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এমন অবস্থায় রোববার গ্রিন রেলাল্ডসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সকাল থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘অধ্যক্ষের কাছে আমরা জানতে চাই আগের তুলনায় খারাপ ফল কেন হলো : আগের সিরিজে গ্রেড ‘এ’ থাকলে এখন কিভাবে ‘বি’ দেয়া হলো? আগের ‘বি’ থাকলে এখন কিসের ভিত্তিতে ‘সি’ দেয়া হলো। আবার অনেকের আগে ‘কি’ থাকলেও এখন কিভাবে ‘এ’ হলো? আমরা তাদের অভিযোগের সদুত্তর চাই।’

সকাল থেকেই গ্রিন রেলাল্ডের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের দাবি তুলে ধরেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী আলফি বলছিলেন, ‘কীভাবে এমন রেজাল্ট দেয়া হলো, কিসের ভিত্তিতে দেয়া হলো কিছুই আমাদের কাছে পরিষ্কার না। আগের ফলের ভিত্তিতে দিলে কেন আগের তুলনায় খারাপ গ্রেড হবে? আমার মতো অনেকেরই আগের তুলনায় ডাউন গ্রেড হয়েছে। আবার অনেকের ভালো হয়েছে। এটা কীভাবে হলো।’

এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমার বাবাসহ তিনজন অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা কেবল এইটুকু জানতে পেরেছি, ১৮ আগস্ট ফলাফল নিয়ে কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল কিছু একটা বক্তব্য জানাবে। হয়ত ফলাফলের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ দেয়া হতে পারে। তবে তাও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। ডাউন গ্রেডের কারণে এখন আমিসহ অনেকে বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতেই পারব না। কারণ সেখানে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতাও অনেকের থাকবে না। অথচ আগের ফল হিসেবেও এমন হওয়ার কথা ছিল না।’ গ্রিন হেরাল্ডের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ বছর ১২৮ শিক্ষার্থীর ফলাফল ডাউন গ্রেড হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ধরনের ফল উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট হবে। ন্যূনতম যোগ্যতা না থাকায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেকে আবেদন করতে পারবে না। আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ডা. রাব্বি বলেছিলেন, এমন ফল কোনোভাবেই মানা যায় না। কর্তৃপক্ষও কিছু স্পষ্ট করছে না। আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ। টার্কিশ হোপ স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রাবেয়া খাতুন বলেছিলেন, অনেক শিক্ষার্থীর ডাউন গ্রেড হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষক বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ আমাদের প্রতিষ্ঠানেও একই সমস্যা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। কেমব্রিজকে সব জানানো হচ্ছে। সানিডেলের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা হতাশ। কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড দ্বারা তাদের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের ফল প্রকাশ করেছে। সেখানে ডাউন গ্রেড কিভাবে হতে পারে। আমরা ফলের সংশোধনী চাই। আপিল করতে চাই।

এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে গ্রিন রেলাল্ডের প্রিন্সিপাল সিস্টার আশা ভার্জিনিয়া গমেজ  বলেছেন, ‘১৮ আগস্ট রেজাল্ট নিয়ে কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল একটি আপডেট দেবে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু তারা বলতে পারছেন না। সেখানে কি আপীলের কোন সুযোগ আসছে ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা জানি না। আমরা জানি ১৮ তারিখ একটা আপডেট দেবে।’ এ বিষয়ে অন্য কোনো প্রশ্নের উত্তর এখন দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান প্রিন্সিপাল সিস্টার আশা।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিএম নিজাম উদ্দিন অবশ্য মনে করছেন, অবশ্যই আপিলের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, আমরা সমস্যার বিষয়গুলো কেমব্রিজকে জানিয়েছি। এমন সমস্যা পৃথিবীর অন্য বহু দেশে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার কারণে পরীক্ষা ছাড়া আগের ফলাফল মূল্যায়ন করে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে গ্রেড পাঠানো হয়েছে কেমব্রিজ হয়ত আরও কঠোরভাবে ফলাফল মূল্যায়ন করে গ্রেডিং করেছে। এতে অনেকের ফল প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো ফলের তুলনায় খারাপ হয়েছে। 

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004957914352417