কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ সনদ ‘দাওরায়ে হাদিস’ মাস্টার্সের সমমর্যাদা পেতে যাচ্ছে। এসংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকের এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (১৩ আগস্ট) সচিবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অনুমোদন পাওয়া ‘দাওরায়ে হাদিস’ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর সনদের মর্যাদা পাবে।
২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমর্যাদা ঘোষণা করে সরকার। ওই দিন গণভবনে আলেমদের এক অনুষ্ঠানে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফীর উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির দাবি দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময় এর জন্য আন্দোলনও হয়েছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ সময়ে এসে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। একটি টাস্কফোর্সও করেছিল সরকার। তবে ঘোষণা কার্যকর করার আগেই বিদায় নেয় চারদলীয় জোট সরকার।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার জোরালো হয় কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে সরকার শিক্ষানীতি ঘোষণার সময়ই কওমি শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়নে আহমদ শফীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে দেয় সরকার।
কওমি মাদরাসা মূলত ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দের আলোকে প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা। এখানে কোরআন-হাদিসের মূলধারার শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। বাংলাদেশে কয়েক হাজার কওমি মাদরাসায় প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। কওমি মাদরাসায় মূলত ছয়টি শিক্ষাস্তর আছে। এগুলো হলো ইবতেদাইয়্যাহ (প্রাথমিক), মুতাওয়াসসিতাহ (নিম্ন মাধ্যমিক), সানাবিয়্যাহ আম্মাহ (এসএসসি), সানাবিয়্যাহ খাসসাহ (এইচএসসি), মারহালাতুল ফজিলত (স্নাতক), মারহালাতুত তাকমিল বা দাওরায়ে হাদিস। শেষেরটি তাদের সর্বোচ্চ স্তর।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কওমির ছয় স্তরের মধ্যে শুধু শেষটিকে সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কওমি মাদরাসা বোর্ডগুলোর সনদের মান বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে। এই কমিটিকে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই কমিটির অধীনে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কমিটি দাওরায়ে হাদিসের সিলেবাস প্রণয়ন করবে, পরীক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ করবে এবং অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবে। ফলাফল ও সনদ তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমও এ কমিটি পরিচালনা করবে।