করোনা সংক্রমন শুরু হওয়ার পর থেকে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমমানের প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ায় বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ একটি ঘন বসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ। বিধায় সরকার জনস্বাস্থ্যে ঝুঁকি বিবেচনায় জেএসসি, জেডিসি ও এইচএসসি তথা সমমানের পরীক্ষাসমূহ বাতিল করেছে এবং এইচএসসি ও সমপর্যায়ে মূল্যায়নের কলাকৌশল নির্ধারনে শিক্ষা বোর্ডসমূহ কাজ করছে। কিন্তু ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৯ম শ্রেণি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত উপনীত হয়নি।
এ অবস্থায় মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা ও উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, খুলনা অঞ্চল, খুলনা একাধিকবার Zoom Apps-এর মাধ্যমে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে এবং বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে পাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মতামত জানতে চেয়েছেন। খুলনা অঞ্চল ১০ জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ যার যার মতামত জানিয়েছেন। তৎপ্রেক্ষিতে যশোর জেলার প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:
যশোর জেলায় সরকারি/ বেসরকারি/ বিশেষ ব্যবস্থায় পরিচালিত বেশ কিছু ভাল মানের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় যশোর জিলা স্কুল, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, যশোর সরকারি শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, দাউদ পাবলিক স্কুল, মিউনিসিপাল প্রিপারেটর স্কুল অন্যতম। উপজেলা গুলোতেও বেশি ভাল মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দাউদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, যশোর কালেক্টরেট স্কুলের অধ্যক্ষ মহোদয় জনান-অত্র প্রতিষ্ঠানে যথারীতি অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম চলছে এবং রুটিন অনুসারে ক্লাস টেস্টও নেওয়া হয়। অভিভাবকগণ অনলাইন শিক্ষার্থীদের বেতন ও ফি পরিশোধ করে, কাউকে কোনরূপ চাপ দেওয় হয়না। বার্ষিক পরীক্ষা তাঁরা নিতে আগ্রহী এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে তাঁরা পরীক্ষার নেওয়ার মতামত দেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অভিভাবক ও শিক্ষকগণের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের বাড়ী প্রশ্ন পাঠিয়ে দিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন। এক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেতন/ ফি নেওয়া হয়নি।ঐ সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের যুক্তি-এতে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রমের প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহও পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে, তবে কিভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায়-এ বিষয়ে সবাই চিন্তা ভাবনা করছেন এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। অনেকে সরাসরি পরীক্ষা না নিয়ে, বিশেষ কোন পদ্ধতিতে মুল্যায়ন করা যায় কিনা, সেই চিন্তা করছেন।সর্বোপরি সবাই পরীক্ষা/মূল্যায়নের পক্ষে।
বর্ণিত বিষয়ে তাদের প্রস্তাবসমূহ:
ক) করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনে শিক্ষাবর্ষ একটু পিছিয়ে দিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
অথবা
খ) জাপানের এক স্কুল শিক্ষার্থী সাদা খাতা জমা দিয়ে মূল্যায়নে প্রথম হয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার খাতাটি আপাত দৃষ্টিতে সাদা খাতা মনে হলেও, সেটা সাদা খাতা ছিল না। এখানের সৃজনশীলতা ছিল। এ ধরণের মূল্যায়নের কৌশল নেওয়া যেতে পারে।
অথবা
গ) শ্রেণি ভিত্তিক প্রত্যেক বিষয়ের ওপর ৩/৫ টি অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
অথবা
ঘ) সমসাময়িক ঘটনা বলার উপর প্রবন্ধ লেখা/ গবেষণা ধর্মী কাজ দিয়ে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
অথবা
ঙ) জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বর্ষ চলছে, এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশর, রাজনৈতিক জীবনদশা থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত তাঁর উন্নয়ন ভাবনা ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ কিভাবে উন্নত দেশে উপনীত হতে চলছে, তার ওপর দুই হাজার/তিন হাজার/পাঁচ হাজার শব্দের প্রবন্ধ লেখার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
অথবা
চ) পড়ালেখার পাশাপাশি বৃক্ষরোপনসহ অন্যান্য সামাজিক কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।