করোনাভাইরাসের এই সময়ে পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে। বড় বড় স্কুল নিজেরাও অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। তবে উচ্চশিক্ষার ৩২ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ লাখই এখনো পড়ালেখার বাইরে রয়ে গেছে। তিন মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও এখনো অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারেনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো। ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে আজ বৃহস্পতিবার ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বৃহস্পতিবার (২২৫ জুন) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত ১৭ মার্চ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত এই ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই উচ্চশিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষাতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর করোনার যে পরিস্থিতি তাতে আগামী ৬ আগস্টের পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। ফলে ছুটি আরো বাড়লে বড় সেশনজটে পড়তে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় তিন লাখ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অধ্যয়ন করছে সাড়ে ২৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে প্রায় পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থী। করোনাকালে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তারা ইতিমধ্যে অনলাইনেই চলতি সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়েছে। আগামী জুলাই মাস থেকে সামার সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রমও অনলাইনে শুরু হবে।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের অধিভুক্ত কলেজগুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও সরকারি কলেজগুলোতে অনলাইনে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও বড় বড় কিছু সরকারি কলেজ ছাড়া অন্যরা কেউ অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারেনি।
জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অনলাইনে শতভাগ কার্যক্রম চালাচ্ছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
মূলত মহামারিকালে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়িতে অবস্থান, অনলাইন ক্লাসের জন্য সামগ্রীর সংকট, ইন্টারনেটের উচ্চদাম ও কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস শুরু করা যাচ্ছে না। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে অনীহাও অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে খোঁজ নিতে সম্প্রতি ইউজিসি একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। সেখান ৪০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ৭২টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৮৬.৬ শতাংশের স্মার্টফোন আছে। ৫৫ শতাংশের ল্যাপটপ আছে। অপরদিকে সব শিক্ষকের ল্যাপটপ আছে। কিন্তু ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খরচ, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার উপযোগী ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, অনলাইনে ক্লাসরুম সত্যিকার ক্লাসরুমের মতো নয়।
উচ্চশিক্ষার ক্ষতি পোষাতে ইউজিসির নীতিনির্ধারকরা বেশ কিছু পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে এগোচ্ছেন। সেগুলো হচ্ছে, সাধারণ ছুটির আগে নেওয়া শ্রেণি কার্যক্রমের ওপর অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে চলতি সেমিস্টার শেষ করা। যারা অংশ নিতে পারবে না তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা। এরপর জুলাইয়ে শুরু হওয়া সেমিস্টারের পাঠদানও অনলাইনে শুরু করা। আর ক্যাম্পাস খোলার পর ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে নামিয়ে আনা, ছুটি কমিয়ে আনা, সিলেবাস কমানো ইত্যাদি।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস গ্রহণের প্রতিবন্ধকতা জানতে আমরা একটি সমীক্ষা চালিয়েছি। সেখানে ইন্টারনেটের উচ্চদাম ও ধীরগতির ইন্টারনেটই প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই, সেটিও একটি সমস্যা। শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেটের দাম কমানো এবং অসচ্ছলদের বিনা মূল্যে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা হলে অনলাইনে শিক্ষা সহজ হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘আমরা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই, যা একটি বড় সমস্যা। এমফিল, পিএইচডির মতো ক্লাসগুলো আমরা অনলাইনে নিচ্ছি। করোনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে আমাদের ভিন্ন চিন্তা করতে হবে।’