করোনা সনদে অবিশ্বাস : দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারছেন না ১৫২ শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

করোনা সনদে অবিশ্বাস : দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারছেন না ১৫২ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে দক্ষিণ কোরিয়ার চেগু গুয়েনবাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেয়েছেন এমডি ইশতিয়াক আহমেদ। গত মার্চে বসন্ত সেমিস্টারে তার ক্লাস শুরুর কথা ছিল। ৯ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া হয়নি ইশতিয়াকের। কবে যেতে পারবেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তার মতো আরও ১৫১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ পেয়ে একই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

স্কলারশিপ পেলেও কেন তাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না- জানতে ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। জবাব এসেছে, গত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে যত জন কোরিয়া গেছেন, তাদের মধ্যে ৭৮ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। যদিও দেশ থেকে তারা করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে টেস্টে অনেকের করোনা পজিটিভ আসছে। এই হার যতদিন শূন্যের কাছাকাছি না আসবে, ততদিন ভিসা দেওয়া হবে না।

বিপাকে পড়া শিক্ষার্থীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। গত ৭ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে চিঠি দিয়েছেন। তবে এখনও সাড়া পাননি। একাধিক শিক্ষার্থী বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের করোনা পরীক্ষায় ভরসা রাখতে পারছে না। এ কারণে তাদের যাওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ভারত, পাকিস্তান, নেপালের মতো দেশের শিক্ষার্থীদের যেতে বাধা নেই। তারা ক্লাস শুরু করে দিয়েছেন। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের ১৩৯ নাগরিক দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে করোনা শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে দেশটির শিক্ষার্থীরা যেতে পারছেন। শিক্ষার্থীরা একই ধরনের তৎপরতা চান বাংলাদেশের পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। 

ইশতিয়াক আহমেদ ঢাকার সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগ (ইইই) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ২০১৮ সালে। তিনি জানান, তার জন্য শতভাগ বৃত্তি পাওয়া সহজ ছিল না। আইইএলটিএস করে দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপের জন্য ৭০০ পৃথক আবেদন করেন। এক বছর ধরে চেষ্টার পর চেগু গুয়েনবাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের অধীনে গবেষণার জন্য শতভাগ স্কলারশিপ পান। যেতে না পারায় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ছেলে পারভেজ আহমেদ ২০১৯ সালে এসএইচসি পাস করেন। তিনি ডেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকে (বিবিএ) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পেয়েছেন ৪০ ভাগ স্কলারশিপ। কিন্তু তারও একই দশা। মার্চে ক্লাস শুরু হলেও তিনি এখনও যেতেই পারেননি। আগামী মার্চের আগে যেতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো তার জন্য আর অপেক্ষা করবে না। তার দক্ষিণ কোরিয়ায় লেখাপড়া করা হবে না।

করোনায় যেতে না পারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩৩ জন ছাত্র, বাকিরা ছাত্রী। স্নাতক থেকে পিএইচডির শিক্ষার্থী রয়েছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস চললেও করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ায় সরাসরি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। আবার প্রকৌশল ও বিজ্ঞানের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষণাগারে সরাসরি কাজ করতে হয়। তাই অনলাইনে দূরশিক্ষণও সম্ভব হচ্ছে না। বিপাক থেকে উদ্ধার পেতে শিক্ষার্থীরা একবার দূতাবাসে আরেকবার মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিচ্ছেন।

তবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়াবিষয়ক উইংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি তাদের হাতে নেই। পুরোপুরি নির্ভর করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্তের ওপর। তারা যদি মনে করে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, তাহলে কিছুই করার নেই। বাংলাদেশ থেকে কিছুসংখ্যক নাগরিক নেগেটিভ সনদ নিয়ে সেখানে গিয়ে করোনা পজিটিভ হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। করোনা পরীক্ষার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

দূতাবাস শিক্ষার্থীদের জবাব দিয়েছে, তারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। যেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিলম্বে যোগ দেওয়ার কারণে ক্ষতির মুখে পড়তে না হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার স্বার্থে দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশিদের করোনা শনাক্তের হার শূন্য না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বদল করেনি সরকার।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দ্রুত ক্লাস শুরু করার স্বার্থে তারা যে কোনো শর্ত মেনে নিতে রাজি। দূতাবাস নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকে করোনা পরীক্ষা করে নিজ খরচে দেশছাড়ার আগে ১৫ দিন এবং দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে আরও ১৫ দিন কঠোর কোয়ারেন্টানে থাকতে সম্মত আছেন। মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তাদের কষ্টার্জিত স্কলারশিপ বাতিল হলে জীবন গড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।

 

 

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032219886779785