বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া উচ্চমাত্রার সংক্রামক করোনা ভাইরাসে দেশে একজনের মৃত্যু আর আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার খবরে উদ্বেগ বাড়ছে। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে যারাই আসছেন তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত ৯ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১২ সদস্যের একটি দল ১০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে কানাডার টরেন্টো থেকে দেশে পেরে। তাদের মাধ্যে একজন বাদে বাকি ১১ জন রীতিমতো অফিস করছেন। এদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, জয়েন্ট চীফ (পরিকল্পনা), একজন আরেকজন একটি সংস্থার পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক এবং ৭ জনই বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
এদিকে বিদেশ ফেরত কর্মকর্তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব আবু নাসের বেগ স্বাক্ষরিত আদেশটি জারি করা হয়। এছাড়া বিদেশ ভ্রমণের অনুমতির প্রস্তাব আপাতত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠাতেও নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক অন-লাইনে বা ই নথিতে দাপ্তরিক কাজ করতে বলা হয়েছে আদেশে।
সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে দেশের বিভিন্ন বিচারিক আদালতের ৩০ জন বিচারক ঢাকায় অবতরণ করার পর তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, গত ২৮ ফেব্রয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিজস্ব বিমান সংস্থা ‘এমিরেটস এয়ারলাইন্স’ এর একটি ফ্লাইটে কানাডার টরেন্টোতে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দলটি। সেখানে ১০ দিনব্যাপী ‘ম্যানেজারিয়াল ট্রেনিং ফর প্লানিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড ইআইএমএস’ অফিসিয়াল প্রশিক্ষণে অংশ নেন তারা। পরে গত ৯ মার্চ একই এয়ারলাইন্সে দেশে ফিরেন কর্মকর্তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব মো: কাজী শাহজাহান ছুটি নিয়ে হোম কোয়রেন্টাইনে আছেন। বাকিরা নিয়মিত অফিস করছেন। এ অবস্থায় বিদেশ ফিরত এ ১১ কর্মকর্তাকে নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা। বিদেশ ফেরত কর্মকর্তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত হওয়া দরকার বলে মত বাকিদের।
আরও পড়ুন: করোনা : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব মো: শাহজাহান কানাডার টরেন্টোতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে গিয়েছেন। আর বাকি ১১ কর্মকর্তা প্রতিদিন অফিস করছেন। অফিসের কাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলায়-জেলায়। এ নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আতঙ্কিত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন-২) মো. ফজলুর রহমান ও পরিকল্পনা শাখার যুগ্ম-প্রধান কাজী মনিরুল ইসলাম হোম কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে প্রতিদিন অফিস করছেন।
সূত্র জানায়, হোম কোয়ারেন্টাইনে যাননি কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আব্দুস সালাম। গতকাল বুধবার পৌনে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি বোর্ড অফিসে অবস্থান করছিলেন। বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস হোম কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে প্রতিদিন অফিস করছেন। তিনি গতকাল ঢাকায় এসেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় অংশ নিতে। তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে নতুন স্কুল-কলেজের অনুমোদন ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম মোস্তফা খানে নামে মহিলা কলেজের অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার একজন কর্মকর্তা তার খুবই ঘনিষ্ঠ তাই তিনি কাউকে পরোয়া করেন না মর্মে অভিযোগ বরিশাল বোর্ডের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর। কিন্তু ভয়ে তারা মুখ খুলতে চাননা।
দিনাজপুর বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর সিদ্দিকও যাননি হোম কোয়ারেন্টাইনে। তিনি গতকাল ঢাকায় এসেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একই সভায় অংশ নিতে। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: গাজী হাসান কামালও হোম কোয়ারেন্টাইনে যাননি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো: মোরাদ হোসেন মোল্লা, শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (ব্যানবেইজ) পরিচালক মো: ওসমান ভূঁইয়া এবং এস্টাবলিস্টমেন্ট অব ‘ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ প্রকল্পের পরিচালক মো: সামসুল আলমও হোম কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে প্রতিদিন অফিসে যোগ দিচ্ছেন।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মকর্তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের জন্য ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর এসব কর্মকর্তাদের নিজ বাড়িতে অবস্থান করে ইনথিতে ও অনলাইনে কাজ করতে বলা হয়েছে।