কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় অবস্থিত ধোকড়াকোল কলেজে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে আড়াই কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে কলেজটির সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। এদিকে কলেজের সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়ায় তার পরিবর্তে নতুন একজনকে সভাপতি মনোনীত করে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে ওই সভাপতি উচ্চ আদালতে মামলা করার ফলে সভাপতি পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, ৭-৮ বছর ধরে স্থানীয় সাবেক ব্যাংকার আবু তালেব নামের এক ব্যক্তি ধোকড়াকোল কলেজে সভাপতি পদে আছেন। তার সময় উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি শাখাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ছিল ৩৬ জন। প্রত্যেকের কাছ থেকে সভাপতি আবু তালেব ও অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কলেজের উন্নয়নের জন্য যেসব সরকারি অনুদান এসেছে কাজ না করেই তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য এলাকাবাসী ও কলেজের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
কলেজের কয়েক শিক্ষক জানান, এলাকাবাসীর সহায়তায় সাবেক সচিব আ ফ ম আব্দুস সাত্তার এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলকাকলি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেসা সবুজের বাবা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য সুলতানা তরুণ আবু তালেবকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। পরে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে আব্দুর রউফ নির্বাচিত হয়ে আবু তালেবকে বহাল রাখেন। এই সুযোগে অধ্যক্ষের যোগসাজশে আবু তালেব পুরো কলেজকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করে যাচ্ছেন।
শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, আবু তালেবের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠায় কয়েক মাস আগে তাকে সরিয়ে বর্তমান সাংসদ সেলিম আলতাফ জর্জ সভাপতি হিসেবে জেবুন্নেসা সবুজকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেন। তাকে নিয়োগ দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এদিকে মেয়াদ পার হওয়ার আগে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে আবু তালেব আদালতে মামলা করেন। এতে জেবুন্নেসার সভাপতির পদটি স্থগিত করে আবু তালেবকে দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। ফলে এ পদে ফের বহাল হন আবু তালেব।
কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন বলেন, সভাপতি নিয়োগ হয় এমপিদের পছন্দে। আগের এমপিরা আবু তালেবকে নিয়োগ দেন। কলেজে যেসব নিয়োগ হয়েছে তাতে কোনো অনিয়ম হয়নি। আর আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই।
সভাপতি আবু তালেব বলেন, আমার মেয়াদ পার হওয়ার আগেই অবৈধভাবে আমাকে সরিয়ে দেয়া হয়। তাই মামলা করেছি। নিয়োগ নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাংসদ সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, আবু তালেব দীর্ঘদিন কলেজকে কুক্ষিগত করে অনিয়ম করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে শিক্ষক ও এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ। অভিযোগ ওঠায় তার পরিবর্তে নতুন একজনকে সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়।