কষ্টের ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখি ভাতা এবং স্বপ্নের জাতীয়করণ - দৈনিকশিক্ষা

কষ্টের ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখি ভাতা এবং স্বপ্নের জাতীয়করণ

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

‘যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া পড়শীর ঘুম নেই ‘-আমাদের দেশের এমপিওভুক্ত পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর অবস্থা যেন গ্রামের সে প্রবাদ বাক্যের বাস্তব উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। তাদের একান্ত ন্যায় সঙ্গত দু’টো পাওনা-বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখি ভাতা থেকে তারা নির্মম ভাবে বঞ্চিত। অথচ সে কথাটি দেশের ক’জন মানুষ জেনেছেন কিংবা জানতে পেরছেন? তারা ক’জনের কাছে তাদের দুঃখের কথাটি বলেছেন? নাকি, না পাবার সে আরেক অন্য রকম তৃপ্তি?  ‘ভোগে নয় , ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’-এ মহৎ বাক্যটির ওপর তাদের বড় আস্থা বুঝি! বৈশাখি ভাতা আর ইনক্রিমেন্ট না পেলে ও তারা যেন ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার সংকল্পটাই নিয়েছেন। টু শব্দটি নেই।

মেজর দু’টো দাবী। অন্য কারো মাইনর এক-দু’টো হলে ও আসমান-জমীনে কেউ না শুনে থাকতে পারতো না। আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে আওয়াজ উঠতো।

এমনি করে কেউ কোনদিন অধিকার ভোগ করতে পারেনি। নিজের অধিকার নিজেকে আদায় করে তবেই ভোগ করতে হয়। আরেক বৈশাখ সমাগত প্রায়। সেটি ও পেরিয়ে গেলে বৈশাখি ভাতার কথা কেউ কোনদিন আর মুখেই নিতে পারবে না। যে কোন কিছুর একটা টাইম লিমিট তো থাকেই। আর ইনক্রিমেন্ট?  সেটি ও আরেক জুলাই মাস পেরিয়ে গেলে বাসি হয়ে যাবে। তারপর এক সময় শিক্ষক-কর্মচারীর এ দু’টো ন্যায্য দাবী কালের গর্ভে হেরে যাবে। কেউ কোনদিন দাবীগুলো আর মুখে তুলতে পারবেনা। কেবলি অনাগত ভবিষ্যতে বৈষম্যের জ্বালায় ধুকে ধুকে জ্বলে মরতে হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ আজ কেবল সময়ের দাবী নয়, যুগের অন্যতম চাহিদা ও বটে। অনেকের ধারণা- শিক্ষা জাতীয়করণ করলে শিক্ষক ও কর্মচারীরাই লাভবান হবেন বেশী। কিন্তু, তাদের জানা দরকার যে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন এবং মানসম্মত ও টেকসই শিক্ষার জন্য জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। এ ধারণাটি কেবল মাথায় রাখলে তবে জাতীয়করণ না করে উপায় নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, শিক্ষার কলকাঠি যাদের হাতে তারা শিক্ষা কিংবা শিক্ষক বান্ধব কোনটিই নন। এরা শিক্ষা ও শিক্ষক বিদ্বেষী। তারা মনে করে, জাতীয়করণে শিক্ষক-কর্মচারীরই লাভ বেশী। তাই, এ কাজে তাদের ঘোর আপত্তি। দেশ ও জাতি গঠনের কারিগরদের যতো খাটো করে দেখা যায়, তত তাদের মনে তৃপ্তি! আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষকদের প্রতি তাদের অবহেলার আর কত উদাহরণ দেব? এ বছর পাঠ্যপুস্তকের ভুল ও নানা অসঙ্গতি সে অবহেলার প্রতিচ্ছবি নয় কী? না হলে, ছাগল গাছে ওঠে আম খেতে যায় কোন দুঃখে? নাকি-‘পাগলে কীনা বলে’ আর ‘ছাগলে কীনা খায়’ সে কথাটির যথার্থতা ফুটিয়ে তোলার অপচেষ্ঠা?
শিক্ষা ও শিক্ষকদের নিয়ে যত তামাশা হবে, জাতি তত পেছাতে থাকবে। আমাদের যারা কর্তা, তাদের সে সত্যটি শীঘ্রই উপলব্ধি করতে হবে।

বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগি করে আমাদের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের শিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে হবে। জাতি গঠনের কারিগরদের জীবনমান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ববাসী প্রায় সকলেই জেনে গেছে যে, আমাদের এ দেশ মধ্যম আয়ের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। তাহলে আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষকদের দুরাবস্থা জিইয়ে থাকবে কেন?  এ আমাদের দেশ ও জাতির লজ্জা। এ লজ্জা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অবিলম্বে জাতীয়করণ করা অপরিহার্য। এর আগে এমপিওবিহীন শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও প্রদান এবং এমপিওভুক্তদের বৈশাখি ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট দিয়ে কৃতার্থ করার জোর দাবী জানাই। জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা প্রদান করে জাতিকে কলংকমুক্ত করা আজ আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048229694366455