কাঠগড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন! - Dainikshiksha

কাঠগড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও অপ্রীতিকর ঘটনায় দু’টি কারণে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। বিবেকের কাছে বার বার প্রশ্ন রেখেও সদুত্তর পাচ্ছি না।

ইতিমধ্যে, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। যা ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। সম্প্রতি সিনেট অধিবেশনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দাবি জানাতে গিয়ে শিক্ষকের হাতে ছাত্র, এমনকি ছাত্রের হাতেও শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়। প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে এ লজ্জা কিভাবে হজম করবো?

আমার প্রশ্ন যেই সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নেই। ছাত্র প্রতিনিধি নেই। অর্ধেকের বেশি আসন শূণ্য, সেটা সিনেট অধিবেশনের হয় কি করে? সিনেট অধিবেশন কি শুধু তিন সদস্য ভিসি প্যানেল নাম প্রস্তাবের জন্য? যাদের নাম এসেছে তারা অবশ্যই যোগ্য মানুষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি এই তিনজনের নাম মাননীয় রাষ্ট্রপতি চ্যান্সেলরের কাছে পাঠাতো কি পার্থক্য হতো?

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি যে অর্ডিন্যান্সের ক্ষমতাবলে ভিসি প্যানেলের তিনজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করেছিলো, এই অর্ডিন্যান্স প্রণয়নে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী হিসেবে আজ আমি নিজেই নিজের কাঠগড়ায়। স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে ১৯৭৩ সালের কথা। আমি তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী ভিসি। অবশ্য তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও শিক্ষক ছিলেন। অত্যন্ত সৎ ও সরল মনের মানুষ ছিলেন তিনি। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকার কথা সবার জানা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, সৎ ও সরল মনের এই মানুষটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছিলেন না। শিক্ষক-ছাত্র সবার মাঝে এ নিয়ে অঘোষিত অসন্তুষ্টি ছিলো। এ পরিস্থিতি চলাকালে বঙ্গবন্ধু সাথে এক সাক্ষাৎকারে বললাম- ম্যাক স্যার (মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী) সবার শ্রদ্ধেয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকভাবে চালাতে পারছেন না। পারবেন বলে মনেও হয় না। মনে হলো আমার এই অভিযোগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুও ওয়াকিবহাল। বঙ্গবন্ধু বললেন ম্যাক স্যার না পারলে কাকে ভিসি করবো?

আমি কেমেস্ট্রির ছাত্র। তাই বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরীর চেহারা ভেসে আসতে লাগলো। বিশেষ করে সাবেক চ্যান্সেলর মোনায়েম খান ও সাবেক ভিসি ওসমান গনির বিরুদ্ধে মতিন স্যারের লড়াই আমার কাছে তাকে লড়াকু নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছে। স্যারের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই বঙ্গবন্ধুর কাছে মতিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করলাম। বঙ্গবন্ধু বললেন, ড. মতিনের চিন্তা ও চেতনায় ফিজিক্স ছাড়া কিছু আছে বলে মনে হয় না। তবে এটা ঠিক যে, স্পষ্টভাষী ও লড়াকু। বঙ্গবন্ধু বলেন- উনার সঙ্গে কথা বলে দেখ। প্রস্তাব শুনে মতিন স্যার বললেন, বঙ্গবন্ধু হুকুম করলে আমি কবরেও যেতে রাজি। তবে এর সাথে দু’টি শর্ত জুড়ে দিলেন তিনি। প্রথমত সর্বজন শ্রদ্ধেয় ম্যাক স্যারের মনে কষ্ট দেয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্ত শাসন সম্পর্কিত অর্ডিন্যান্স না হলে ১১ দফা আন্দোলনে শহীদ, সকল আন্দোলনকারী ছাত্র শিক্ষকদের আত্মত্যাগ অস্বীকার করা হবে।

দু’-একদিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে মতিন স্যারের দু’টি শর্ত সম্বলিত ইতিবাচক মতামত জানলাম। বঙ্গবন্ধু সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে। বললেন মনিরুল হক চৌধুরী যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কিত অর্ডিন্যান্সের অগ্রগতি জানাবেন। তড়িঘড়ি করে ছুটে গেলাম মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রী মহোদয় তৎকালীন শিক্ষা সচিব মোকাম্মেল হককে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অডিন্যান্সের অগ্রগতি জানতে চান।

আলাপচারিতায় শিক্ষাসচিব মহোদয়ের কাছে শুনলাম, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক উদ্যোগী হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের (ওসমান গনি সমর্থকদের বাদে) সঙ্গে আলোচনাক্রমে স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কিত অর্ডিন্যান্স’৭৩ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। মূলত ঐ প্রস্তাবগুলো অর্ডিন্যান্স আকারে দ্রুত বঙ্গবন্ধু কাছে পৌঁছে যায়। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তা গেজেট আকারেও প্রকাশিত হয়।

অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভিসি হলেন। শুনেছি ম্যাক স্যার বিষয়টি জেনে বলেছেন- আল্লাহ্‌ আমাকে বাঁচিয়েছেন। তিনি হাসিমুখে মতিন চৌধুরীকে জানিয়েছেন অভিনন্দন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কিত অর্ডিন্যান্স গেজেটের ১৫ দিনের মধ্যে মতিন স্যার একদিন আমাকে ডাকলেন। একহাজার ছয়শ’ টাকা নিজের বেয়ারার চেক আমাকে দিয়ে বললেন গ্র্যাজুয়েট রেজিস্টার্ড নির্বাচনে এটা কাজে লাগবে। প্রতিজনে ২০-৫০ টাকা লাগতে পারে। অতিরিক্ত টাকা প্রয়োজন হলে জোগাবে তোমরা। যথারীতি আমাদের ২-৩শ’ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট হলো। অন্যান্য সূত্র থেকেও হলো আরো সদস্য। বিশ্ব শান্তি পরিষদের ব্যানারে আলী আক্কাস ও জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র ছেলে সফিউল্লাহ্‌ ভাই এর নেতৃত্বে ২৫ জন গ্র্যাজুয়েট নির্বাচিত হলেন। ছাত্র/ঢাকসু প্রতিনিধি হিসেবে মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মাহবুব উজ্জজামান, নূহ আলম লেলিন, ইসমত কাদির গামা ও আমি মনোনীত হলাম। (চলবে)

ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003303050994873