কেনো বিদেশমুখী তারুণ্য - দৈনিকশিক্ষা

কেনো বিদেশমুখী তারুণ্য

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : দেশে থাকতে চায় না তরুণরা। শুধু ছেলে নয়, মেয়েরাও চলে যেতে চায় বিদেশ। শিক্ষার্থী ছাড়াও কাজের সন্ধানে দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভালো সুযোগ-সুবিধা ও নিশ্চিত জীবনের সন্ধানেই দেশ ছাড়ছে তরুণরা। এর মধ্যে কেউ যাচ্ছে পড়াশোনা করতে, কেউ চাকরির সন্ধানে। যারা পড়তে যাচ্ছে তাদের মধ্যেও ফিরে আসার প্রবণতা কমছে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গত ১০ বছরে বিদেশ যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এর কারণ হিসেবে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগের অভাব, কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা, সীমিত বেতনকাঠামো, নিম্নমানের জীবনযাপনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে। সোমবার (২৫ মার্চ) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জয়শ্রী ভাদুড়ী।

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে এ সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ১১২ এবং ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ হাজার ৬০৯। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছাড়ে ৪৯ হাজার ১৫১ জন শিক্ষার্থী, যা তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৮। বিদেশে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য নিয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি-লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়, বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শীর্ষ পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ৮ হাজার ৫২৪ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে ৬ হাজার ৫৮৬, কানাডায় ৫ হাজার ৮৩৫, মালয়েশিয়ায় ৫ হাজার ৭১৪ ও জার্মানিতে ৫ হাজার ৪৬ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছেড়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় ৪ হাজার ৯৮৭, জাপানে ২ হাজার ৮২, প্রতিবেশী ভারতে ২ হাজার ৬০৬, কোরিয়া প্রজাতন্ত্রে ১ হাজার ২০২ এবং ১ হাজার ১৯০ জন শিক্ষার্থী সৌদি আরবে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছে।

দেশের শিক্ষা-সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশে বাংলাদেশের তুলনায় ভালোমানের শিক্ষার সুযোগ শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করছে। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করছে বিদেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের মতে, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বৃদ্ধি এবং দেশে তরুণদের কাজের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে থামানো যেতে পারে মেধাবীদের বিদেশযাত্রা। দেশের শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছে এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে এটি আপাত অর্থে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফেরত না আসা অথবা দেশে তাদের জন্য ভালো কোনো সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারা দেশের ভবিষ্যৎ হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা যদি বিদেশ গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সেটা তো দোষের কিছু না। এ ক্ষেত্রে তারা দেশের জন্য রেমিট্যান্সও পাঠাবে। তবে ঢালাওভাবে সবাই যদি এদিকে ঝুঁকতে চায় তাহলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে দেশকে এগিয়ে নিতে উদ্ভাবন দরকার। কাজেই মেধাবীরা ফিরলে অবশ্যই দেশের জন্য ভালো হবে। কিন্তু কাউকে জোর করে তো আটকে রাখা যাবে না। এ ক্ষেত্রে যারা বিদেশে যাচ্ছে তারা ফিরলে যেন যোগ্যতা অনুযায়ী উপযুক্ত কাজ ও সম্মান পায় সে ব্যবস্থা সরকারি ও বেসরকারিভাবে করতে হবে। তরুণ মেধাবীদের দেশে রাখতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের করতে হবে, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। প্রযুক্তির বিকাশে মনোযোগ দিতে হবে এবং চাকরির পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভালো স্কলারশিপ ও উচ্চ সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ বিদেশে ভালোমানের গবেষণাগার ও বেতনকাঠামো, যা দেশে তুলনামূলক কম। এসব বিষয়ে আকৃষ্ট হয়ে উচ্চশিক্ষায় মেধাবীদের বিদেশগামিতা বাড়ছে এবং অধিকাংশই সেখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে দেশ প্রতিনিয়ত ভালোমানের শিক্ষার্থী ও গবেষক হারাচ্ছে। তবে এ কথা সত্য, আমরা সুযোগ তৈরি করতে পারছি না। কেননা যোগ্যতা অনুসারে এই মেধাবীরা যে বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাশা করে সেটা দেশে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একটা বৈষম্য থেকে যাচ্ছে। যদিও প্রাইভেট সেক্টরে কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে সেটাও তুলনামূলক অপ্রতুল বলা চলে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত জুনাইদ মোকাদ্দেস বলেন, ‘আমাদের সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ পড়ছে মানে তাকে বিসিএস বা প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পেতে হবে। কিন্তু চাইলেই সবাই সরকারি চাকরি পায় না। অনেকের আবার এর প্রতি আগ্রহও নেই। আর বেসরকারি খাতে চাকরির নিশ্চয়তা নেই। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে বিদেশে পাড়ি জমায়।’

এ ব্যাপারে ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফএসিডি-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক গাজী তারেক ইবনে মোহাম্মদ বলেন, ‘আগের তুলনায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। মধ্যবিত্ত মানুষের সক্ষমতার জায়গা থেকে বেরিয়ে ক্যারিয়ার গড়া, পরিবারের জন্য কিছু করার তাড়না থেকে ছেলেমেয়েরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশগুলোর ভিসা দেওয়ার আগ্রহ বাড়ায় এ সুযোগটা শিক্ষার্থীরা কাজে লাগাতে পারছে। বিদেশ যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই সেখানে ক্যারিয়ার গড়ে স্থায়ী হচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানোয় এ শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রয়েছে। দেশের ব্র্যান্ডিংয়েও কাজে লাগছে এদের সম্মানজনক অবস্থান।’

এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর নবম পে-স্কেলসহ সরকারি কর্মচারীদের ১০ দাবি - dainik shiksha নবম পে-স্কেলসহ সরকারি কর্মচারীদের ১০ দাবি শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগের ভাইভা শুরু - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগের ভাইভা শুরু কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041189193725586