কোটা পদ্ধতির সংস্কার কতটুকু যৌক্তিক? - দৈনিকশিক্ষা

কোটা পদ্ধতির সংস্কার কতটুকু যৌক্তিক?

মো. জাহানুর ইসলাম |

কোটা পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন চলছে।একপক্ষ বলছে কোটা পদ্ধতি একেবারে বাতিল নয়, কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই। আরেক পক্ষ বলছে কোটা অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে, ভবিষ্যতে থাকবে। এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধীদের ষড়যন্ত্র মানি না, মানব না। এর মধ্য দিয়ে এখন সবার মনে কয়েকটি প্রশ্ন জাগ্রত হয়েছে, তা হলো বর্তমান সময়ে কোটা পদ্ধতির আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা? নাকি কোটা পদ্ধতির সংস্কার দরকার? শুধু তাই নয়, যারা কোটা পদ্ধতির সংস্কারের কথা বলছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধী কিনা সেটিও চিন্তার খোরাক জোগায়।

বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতি চালুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অগ্রসর গোষ্ঠীতে পরিণত করা। যাতে করে দেশে কোনো প্রকার বৈষম্যের সৃষ্টি না হয়। কিন্তু তার মানে নয় যে এই সুয়োগ-সুবিধা অবিরামভাবে চলতেই থাকবে। যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছিল বর্তমানে আর সেই পরিস্থিতি নেই। তাই পূর্বের ন্যায় এখন পর্যন্ত যে কোটা পদ্ধতি চালু আছে তা নিতান্তই অমূলক। বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে সবার আগে মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে হলে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই।

আমাদের দেশ, অদ্ভুত এক দেশ, যে দেশে মেধার চেয়ে কোটার বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে সর্বক্ষেত্রে মেধাবীদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের প্রাধান্য বেড়ে যাচ্ছে। কোটা পদ্ধতির ‘দৌরাত্ম্যে বিপন্ন হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মেধাবীর ভবিষ্যত্। সরকারের বিভিন্ন চাকরিতে যোগ্যতার মানদণ্ডে ওপরের সারিতে থেকেও কোটার মারপ্যাঁচে ছিটকে পড়ছে অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী। আর সেখানে স্থান করে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা। বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোটা যেন এক বৈষম্যের হাতিয়ার। সচিবালয় হলো দেশের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের মাথা। আর সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী হলো সেই মাথার মগজ। মাথার মগজে যদি বিন্দু পরিমাণ আঘাত লাগে কিংবা ক্ষতের সৃষ্টি হয় তখন মাথায় কোনো কিছু কাজ করে না, যার প্রভাব সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তেমনিভাবে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে যখন অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী, অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন্ন ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে বেশি মেধাবীদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি নিয়োগ পায়, তখন তার প্রভাব সারা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়। উন্নয়ন যেভাবে ত্বরান্বিত হওয়ার কথা সেভাবে হয় না। ফলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তাই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে সবার আগে মেধাবীদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বর্তমানে দেশের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষ এই কোটা পদ্ধতির সংস্কারের পক্ষে। তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, যারা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের কথা বলছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধী নয়। কেননা, এমনটি হলে দেশের গুটি কয়েক মানুষ ব্যতীত সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধীদের আওতায় পড়ে যাবে। যা কোনো অবস্থাতেই সত্য হতে পারে না। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, দেশের জ্ঞানী-গুণীরাও কোটা পদ্ধতির সংস্কার করে মেধাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলছে। যেমন- সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কোটা পদ্ধতিকে ‘উদ্ভট’ আখ্যায়িত করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, “কোনো দেশেই অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু রাখার নিয়ম নেই। কোটার কারণে দেশের মেধাবীরা আজ বিপন্ন। কোটা বন্ধ হলে অনেক মেধাবীই চাকরি পাবে।” সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারও মনে করেন, বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা অবশ্যই সংস্কার হওয়া উচিত। পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ (পিএসসি) সরকারের বিভিন্ন কমিটি ও কমিশন একাধিকবার বর্তমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি এ সংস্কার ইস্যুতে রাজপথসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে। দেশের বর্তমান সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বিদ্যমান কোটা কমানো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। বর্তমান সরকার দেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, তার সঙ্গে বর্তমান কোটা পদ্ধতি একদম সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065360069274902