খণ্ডিত শৈশবে বেড়ে উঠছে শিশুরা - দৈনিকশিক্ষা

খণ্ডিত শৈশবে বেড়ে উঠছে শিশুরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মা-বাবার সান্নিধ্য ছাড়াই বড় হচ্ছে দেশের অনেক শিশু। প্রাক-শৈশবে শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বই পাচ্ছে না অনেকে। খেলার সামগ্রীও কারো কারো কাছে অধরা। অভিভাবকের উপযুক্ত তদারকির বাইরে থাকছে কেউ কেউ। শৈশবের কোনো না কোনো সময় শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে অধিকাংশ শিশু। অনেকে আবার সঠিক নিয়মে খাবারও পাচ্ছে না। এভাবে খণ্ডিত শৈশব নিয়ে বেড়ে উঠছে দেশের শিশুরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে তাদের শারীরিক, সামাজিক ও শিখনগত উন্নয়ন। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, বৈশ্বিক মাল্টিপল ইনডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের (এমআইসিএস) অংশ হিসেবে একটি জরিপ চালিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের কারিগরি সহায়তায় এতে অর্থায়ন করেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে শিশুদের অপূর্ণ শৈশবের এ চিত্র উঠে এসেছে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষ্ঠু শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব শৈশব। শৈশবকালীন বিকাশ পরবর্তী জীবনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। প্রাক-শৈশবে মা-বাবার সঙ্গে বন্ধন এবং প্রথম শিখন অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে শারীরিক, বৌদ্ধিক ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, এসব ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অভাববোধও হতে পারে। যদিও অপূর্ণতা ছাড়া বেড়ে ওঠা শিশুর ক্ষেত্রেও সেটি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সামগ্রিকভাবে শৈশবকালে শিশুদের হাতে বই-খেলার সামগ্রী তুলে দেয়াসহ পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে জাতিকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে না।

গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত জরিপের ফল বলছে, মা-বাবার সান্নিধ্য ছাড়াই বড় হচ্ছে শিশুদের একটি অংশ। এর মধ্যে ৪ দশমিক ১ শতাংশ শিশু আছে, যাদের বায়োলজিক্যাল মা-বাবা কেউই নেই। ৪ দশমিক ১ শতাংশ শিশু যাদের মা অথবা বাবা অথবা দুজনই মারা গেছেন। এছাড়া ৭ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর মা অথবা বাবাকে উপার্জনের তাগিদে পরিবার ছেড়ে দেশের বাইরে থাকতে হয়।

শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে ভূমিকা রাখে প্রয়োজনীয় খেলা ও পড়ার উপকরণ। সেই সঙ্গে সঠিক তদারকিও। যদিও পাঁচ বছরের কম বয়সী মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ শিশুর কাছে তিন বা তার অধিক শিশুতোষ বই আছে। দুই বা ততোধিক খেলনাসামগ্রী আছে ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিশুর। সঠিক তদারকিরও বাইরে থাকে পাঁচ বছরের কম বয়সী অনেক শিশু। হয় একা থাকে অথবা ১০ বছরের কম বয়সী শিশুই দেখভাল করে এমন শিশুর হার কম নয়, ১১ দশমিক ২ শতাংশ। ফলে প্রাক-শৈশবের উন্নতি সঠিকভাবে হচ্ছে না ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিশুর।

তিন বছর থেকে ৫ বছর ১১ মাস বয়সে প্রাক-শৈশব শিক্ষা শুরু হওয়ার কথা। যদিও এ বয়সী ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু এ ধরনের শিক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে। নির্ধারিত বয়সে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভর্তি হচ্ছে না অনেকে। প্রাথমিকে ভর্তির এক বছর আগে প্রাক-প্রাথমিকে যাচ্ছে ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু। সঠিক বয়সে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারছে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু।

সিলেটের তপন বাউড়ির বয়স ছয় বছর পেরিয়েছে আরো দুই বছর আগে। এখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়নি তাকে। তপনের বাবা স্বপন বাউড়ির ভাষ্য, ছেলে কিছু মনে রাখতে পারে না, তাই স্কুলে দিইনি।

শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠালেও তাদের পড়ালেখার ব্যাপারে অনেক পরিবারই শিক্ষকদের কাছ থেকে খোঁজ নিচ্ছে না। সাত থেকে ১৪ বছর বয়সী ৭৪ শতাংশ শিশুর পরিবারই শিক্ষকের সঙ্গে শিশুর পড়ালেখার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করে না।

মাল্টিপল ক্লাস্টার ইনডিকেটর সার্ভে ২০১৯-এর তথ্য অনুযায়ী, সাত থেকে ১৪ বছর বয়সী মাত্র ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু ঠিকভাবে পড়তে পারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া উপযোগীদের মধ্যে এ হার ২০ দশমিক ২ এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়াদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মৌলিক সংখ্যার জ্ঞানও নেই সাত থেকে ১৪ বছর বয়সী ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ শিশুর। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া উপযোগী শিশুদের মধ্যে এ হার ৯ দশমিক ৮ ও এ দুই শ্রেণীতে পড়ুয়াদের মধ্যে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ।

শৈশবে শিক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এসএম হাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই এ শিক্ষা পায় শিশু। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। শৈশবকালীন শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে আমাদের দেশেও প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে।

শারীরিক ও মানসিক পীড়নের শিকার হচ্ছে শিশুদের বড় অংশ। জরিপের তথ্য বলছে, এক থেকে ১৪ বছর বয়সী ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ শিশুই কোনো না কোনোভাবে কেয়ারগিভারের কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক পীড়নের শিকার হচ্ছে।

শিশুর জন্মনিবন্ধনে আগের চেয়ে এগিয়েছে দেশ। তার পরও পাঁচ বছর বয়সী ৪৩ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু নিবন্ধনের বাইরে থাকছে। সর্বশেষ জরিপে জন্মনিবন্ধনে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে খুলনা বিভাগ। এ বিভাগের পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। জন্মনিবন্ধনে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে সিলেট বিভাগ। এ বিভাগে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ শিশুর জন্মনিবন্ধন হয়েছে। তার পরও এ বিভাগে পাঁচ বছর বয়সী প্রায় ২৮ শতাংশ শিশুর জন্মনিবন্ধন নেই।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুরি গ্রামের প্রবাসী আব্দুল হালিমের চার বছর বয়সী সন্তান আব্দুল খালিকের জন্মনিবন্ধন হয়নি। খালিকের বাবা প্রবাসে থাকায় জন্মনিবন্ধন করা হয়নি তার। আব্দুল খালিকের মা গৃহিণী শাহিনা আক্তার বলেন, জন্মনিবন্ধন করানোর জন্য ইউনিয়ন অফিসে যেতে হয়। ওর বাবা সৌদিতে থাকেন। তাই এ কাজ কাউকে দিয়ে করানো হয়নি। এছাড়া জন্মনিবন্ধন করানোর বিষয়েও আমাকে কেউ বলেনি।

লেখক : ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফ।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036039352416992