খুলনায় করোনা টিকা পায়নি ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

খুলনায় করোনা টিকা পায়নি ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী

খুলনা প্রতিনিধি |

ভবনের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত শিক্ষার্থীরা। ছোট্ট বারান্দা ও সিঁড়িতে দাঁড়াতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় একজনের সঙ্গে লেপ্টে আছে আরেকজন। টিকা কক্ষের ভেতরেও দেখা যায় ভিড়-বিশৃঙ্খলা। কেন্দ্রের বাইরে শিশুদের সঙ্গে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন অভিভাবকরা। নেই ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। এমন চরম অব্যবস্থাপনার চিত্র দেখা যায় খুলনায় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের করোনা টিকাদান কার্যক্রমে। এরপরও জেলার ৫৭ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী টিকা পায়নি। ঝুঁকি দেখা দিয়েছে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত খুলনায় ৫৭ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এখনও টিকা পায়নি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের ৪৪ হাজার ৫৯৮ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ১২ হাজার ৪২৯ জন শিক্ষার্থী আছে।

খুলনার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, জেলায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আছে দুই লাখ ৩০ হাজার ৩৫৯ জন। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টিকা পেয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৬ জন। মূলত স্কুল ও মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর খুলনা নগরী ও ১০ জানুয়ারি উপজেলা পর্যায়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নগরীর দুটি টিকাকেন্দ্রে এবং প্রত্যেক উপজেলায় একটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে টিকার মজুত পর্যাপ্ত আছে এবং সবাইকে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

গতকাল সোমবার সকালে নগর স্বাস্থ্য ভবন টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। অল্প জায়গায় ঘেষাঘেষি করে দাঁড়াতে হয় তাদের। তীব্র্র রোদে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। নগর স্বাস্থ্য ভবনের দ্বিতীয় ও দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতেও শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেখানেও একজনের শরীরে আরেকজন লেপ্টে ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর নিউজপ্রিন্ট মিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল বিশ্বাস জানায়, সকাল ১০টা থেকে রোদে দাঁড়িয়ে ছিল সে। এরপর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। দীর্ঘ সময় এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে সে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র পার্থ কুমার শীল জানায়, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল সে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সে ক্ষুধার্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে কমবেশি সবাইকে দুই থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। 

নগর স্বাস্থ্য ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকা কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও জটলা বেঁধে ছিল বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। টিকাদান কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলেও মানুষের ভিড়ে তা কোনো কাজে আসেনি। টিকা কক্ষে ছাত্র ও ছাত্রীদের একই সঙ্গে পাশাপাশি বসিয়ে টিকা দেওয়া হয়। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় ছাত্রীদের। টিকা দেওয়ার জন্য ছাত্রদের সামনেই হাত বের করতে বাধ্য হয় তারা। চোখে পড়েনি ছাত্রীদের টিকা দেওয়ার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা।

টিকাদান কক্ষে উপস্থিত খানজাহান আলী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, আগে যেসব শিক্ষার্থী টিকা নিতে পারেনি গতকাল তাদের টিকা দেওয়া হয়। এদিন সংশ্নিষ্ট থানার ২৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই হাজার ৭০ জনের টিকা নেওয়ার কথা ছিল।

এর আগে রোববার নগরীর আরেক টিকাকেন্দ্র তালতলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও শিক্ষার্থীদের জটলা। অল্প জায়গায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী লাইনে দাঁড়িয়েছিল। নগর ইকবালনগর বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জিয়াউস সাদাত বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়ে আড়াইটায় টিকা পেয়েছে তার সন্তান। রোদে ভিড়-ঠেলাঠেলিতে শিশুদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার হালদার জানান, তারা শুধু টিকা দিচ্ছেন। শিক্ষার্থী আনা এবং সময় নির্ধারণ করার দায়িত্ব শিক্ষা বিভাগের। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসার কথা শিক্ষকদের। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভিভাবক আসছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা অল্প বয়সী হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি বুঝতেই পারছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকরাও ক্লান্ত।

খুলনার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, 'নানা কারণে প্রথম দিকে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী টিকা নিতে এলেও পরে ভিড় জমায়। চলতি মাসের মধ্যেই সব শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ দেওয়া শেষ হবে বলে আশা করছি।'

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038740634918213