খুলনার ফুলতলায় ট্রেনে কাটা পড়ে কলেজছাত্র শুভজিত সানা মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বড়দল কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়ায় ওই ছাত্রীর পরিবার পরিকল্পিতভাবে শুভজিতকে হত্যা করে মৃতদেহ ট্রেনের নিচে ফেলে দিয়েছে এমন অভিযোগ করে শুভজিতের বাবা ভবতোষ সানা জানান, ওই ছাত্রীর বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার বিকেলে তাদের গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দেবব্রত সরকারের বাড়িতে এসে শুভজিত সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়ে গেছেন।
তিনি আশঙ্কা করছেন, ওই ছাত্রীর বাবা লোকজন দিয়ে শুভজিতকে অপহরণ করিয়ে হত্যার পর লাশ খুলনার ট্রেন লাইনে ফেলে দিয়েছে। তবে, কলেজছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তার বাবা ফকরাবাদ গ্রামের হেমন্ত মণ্ডল জানান, তার মেয়েকে উত্যক্ত করার বিষয়টি গজুয়াকাটি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দেব্রত সানার মাধ্যমে শুভজিতের বাবা ও মাকে জানানো হয়। শুভজিত কীভাবে মারা গেছে এটা তাদের জানা নেই বলে জানান তিনি।
রোববার রাতে তার লাশ আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের গজুয়াকাটি গ্রামে এসে পৌঁছালে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কলেজছাত্র শুভজিতের লাশ সোমবার দুপুরে স্থানীয় শ্মশানে সৎকার করা হয়। এর আগে শনিবার রাত ৮টায় খুলনার ফুলতলায় রেলওয়ে থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
নিহতের নাম শুভজিত সানা (১৯)। সে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গজুয়াকাটি গ্রামের ভবতোষ সানার ছেলে ও বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
শুভজিতের সহপাঠিরা জানান, শুভজিত কয়েকদিন আগে ফকরাবাদ গ্রাামের হেমন্ত মণ্ডলের মেয়ে বড়দল কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তবে, সে প্রেমের প্রস্তাব মেনে নেয়নি। এরই জের ধরে শনিবার বেলা ১১টার দিকে কলেজের দোতলার সিঁড়িতে সে ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে আবারো প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব আবারো প্রত্যাখান করে ওই ছাত্রী। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শুভজিত ব্লেড দিয়ে তার নিজের হাতের কয়েকটি জায়গায় কেটে ফেলে। বিষয়টি জানতে পেরে কলেজ অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন শুভজিতকে বাড়িতে পাঠানোর জন্য দুপুর ১২টার দিকে একটি ভ্যানে তুলে দেন। এরপর সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি।
ওই দিন রাত ৮ টার দিকে খুলনা রেলওয়ে থানা পুলিশ ট্রেনে কাটা পড়ে সে মারা গেছে বলে বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে জানায়। এরপর খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন রোববার দুপুর একটার দিকে শুভজিতের লাশ তার ফুফাত ভাই বিজন মণ্ডলের হাতে তুলে দেয়া হয়। লাশের গলায় আংশিক চামড়া লাগানো ছিল। দু’ পা বিচ্ছিন্ন ও পেটের নাড়ি ভুড়ি বের করা অবস্থায় ছিল।
খুলনা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এ ঘটনায় রেলওয়ে থানায় শনিবার একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর এটি হত্যা হলে নতুন মামলা নেয়া হবে।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, এ ঘটনায় থানায় কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।