খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটি জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নামে নামকরণের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি খুলনা কালেক্টরেট চত্বরে জেলার মনীষীদের ভাস্কর্য স্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে।
সোমবার (৩ আগস্ট) সকাল ১০টায় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ১৫৯তম জন্মদিবস উপলক্ষে খুলনা বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।
তারা বলেন, খুলনায় জন্মগ্রহণকারী এ মানুষটি এ অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তার, সমবায় আন্দোলন, শিল্প বিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। অধুনাবিলুপ্ত খুলনা টেক্সটাইল মিলটি তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। এর প্রকৃত নাম ছিল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র কটন মিল।
মহান এ কর্মবীর মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের লক্ষ্যে আমরা তার নামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা যায়। খুলনায় তার নামে প্রতিষ্ঠিত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অর্থাভাবে সৃষ্ট অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালস ও গুণীজন স্মৃতি পরিষদ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন এপিসি ফার্মাসিউটিক্যালস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএমএ খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন- সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী, খুলনা সিটি ল কলেজের অধ্যক্ষ এম এ আউয়াল, সাংস্কৃতিককর্মী হুমায়ুন কবির ববি, খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অ্যাভোকেট আ ফ ম মহসীন, কৃষি ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি শ্যামল সিংহ রায়,ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেলোয়ার হোসেন দিলু, এপিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবতোষ কুমার ঘোষ, আগুয়ান-৭১ এর আবিদ শান্ত, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল লতিফ, নারী নেত্রী শামীমা সুলতানা শীলু, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ মফিদুল ইসলাম, বাসদের জনার্দন দত্ত নান্টু, নাগরিক নেতা শাহিন জামাল পণ, মিজানুর রহিম স্মৃতি পরিষদের সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, সিটি গার্লস কলেজের প্রধান শিক্ষক শাহ মো. জিয়াউর রহমান স্বাধীন, নিরাপদ সড়ক চাই এর আহ্বায়ক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, রূপসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানস রায়, এপিসি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রদীপ দাস, বিষ্ণুপদ দেবনাথ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সনজিত কুমার মণ্ডল, এপিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপুল কুমার দাস। সঞ্চালনা করেন গুণীজন স্মৃতি পরিষদের সমন্বয়কারী ও একুশে টেলিভিশনের সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন।
বক্তারা বলেন, পশ্চাদপদ শিক্ষা ও অর্থনীতির দেশে জন্মগ্রহণকারী এ কৃতি মানুষটি মৌলিক জ্ঞানশাস্ত্রে যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনি শিক্ষকতা, সমাজসেবা, সমবায় আন্দোলন, উদ্যোক্তা হিসেবেও ভূমিকা রেখেছেন। ওষুধ শিল্প স্থাপনে তার কৃতিত্ব অতুলনীয়। বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালস তার অনন্য সৃষ্টি। একেবারে সাধারণ জীবনাপনকারী এ মানুষটি সারাজীবন সমাজের হিতার্থে কাজ করেছেন।
প্রখ্যাত রসায়নবিদ ও বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ভুবনমোহিনী দেবী ও স্থানীয় জমিদার হরিশচন্দ্র রায়ের ছেলে।
দেশের গর্ব এ বিজ্ঞানী ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) ভর্তি হন। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকে এফ এ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সি থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাস করেন।