গাইড থেকে এসএসসির প্রশ্ন প্রণয়নকারী শিক্ষক নাজনিন - দৈনিকশিক্ষা

গাইড থেকে এসএসসির প্রশ্ন প্রণয়নকারী শিক্ষক নাজনিন

বরিশাল প্রতিনিধি |

ঢাকা বোর্ডের এসএসসি’র বাংলা প্রথম পত্র প্রশ্ন হুবহু গাইড দেখে তৈরি করা নিয়ে  দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা নিয়েও বিশ্লেষকরাও করেছেন নানান মন্তব্য।

জানা গেছে, বরিশাল বোর্ড থেকে সেই প্রশ্নপত্র প্রেরণ করা হয় ঢাকা বোর্ডে। আর এই প্রশ্নপত্র তৈরির সাথে যুক্ত রয়েছেন বরিশালেরই ৫ শিক্ষক।

বরিশালের এই ৫ শিক্ষকের মধ্যে ১ জন প্রশ্ন প্রণেতা এবং অপর ৪ জন মডারেটর।

ঢাকা বোর্ডের ওই প্রশ্নটি প্রণয়ন করেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার  এমপিওভুক্ত শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাজনিন আক্তার। আর প্রশ্নের মডারেটর ৪ জন সরকারি শিক্ষক বলে জানা গেছে। এই ৪ জনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে প্রশ্ন প্রণয়নকারী নাজনিন আক্তারকে এরইমধ্যে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন কুমার গাইন জানান, যারা এই প্রশ্নপত্র তৈরির সাথে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রশ্ন প্রণয়নকারীকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি বেসরকারি শিক্ষক এবং এই প্রশ্নপত্রের সাথে জড়িত অপর ৪ শিক্ষক সরকারি। এই মুহুর্তে তাদের নাম প্রকাশ করবো না, বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন 

৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রটিতে কুমিল্লা ও সিলেট বোর্ডের ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের একটি উদ্দীপক ও সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন হুবহু এ বছরের ৯নং প্রশ্ন হিসেবে সেট করা হয়েছে।  উপন্যাস অংশের সাথে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের বাংলা প্রথম পত্রের উপন্যাস অংশের ৮নং প্রশ্নটি এবছরের উপন্যাস অংশের ১০ নং প্রশ্ন হিসেবে সেট করা হয়েছে। যেখানে শুধু ক নং প্রশ্নটি পরিবর্তন করা হয়েছে। যেটা কাম্য নয়। 

গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন 

ঢাকা বোর্ড ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮নং প্রশ্ন ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ নং প্রশ্ন হিসেবে সেট করা হয়েছে। যদিও এখানে নাম ও ক নং প্রশ্নটি যদিও সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে।  

বরিশাল বোর্ড ২০১৭ এর ২নং প্রশ্ন ঢাকা বোর্ড ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৩নং প্রশ্ন হিসেবে সেট করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু চরিত্রের নাম শিউলীর বদলে পারুল করা হয়েছে। 

এছাড়া এমসিকিউ অংশের প্রশ্ন নং ১৯, ২১, ২৩, ২৫, ২৯ ও ৩০-এর একাধিক উত্তর। পরীক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন উত্তরগুলো কনফিউজিং। একটাই সঠিক উত্তর থাকার কথা থাকলেও কোনো কোনোটিতে তিনটি পর্যন্ত সঠিক উত্তর রয়েছে। 

প্রতিটি বোর্ডে আলাদা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়। এর আগে সব সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে একপ্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হতো। 

গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দেয়ার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের জেএসসি পরীক্ষায়ও গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দিয়ে জেএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় যেখানে বাজারি প্রশ্ন কিংবা গাইড বই থেকে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ, সেখানে বোর্ডের প্রশ্ন গাইড বইয়ের সঙ্গে হুবহু মিলে গেলে শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। ওই প্রশ্নটি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তৈরি হয়েছিল বলে জানা যায়। তৎকালীন কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখায় কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিকা ক্যাডার কর্মকর্তাকে সম্প্রতি বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এই চেয়ারম্যান নিজে আরবি পড়তে, বলতে ও লিখতে পারেন না। 

এর আগে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এইচএসসির ইংরেজি প্রশ্নপত্র ও এসএসসির পদার্থ বিজ্ঞানের ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্র হুবহু গাইড বই দেখে তৈরি করলে দেশব্যাপী হইচই শুরু হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ও এস এস মাহমুদকে দিয়ে কমিটি তৈরি করা হলেও সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। কারণ ওই প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা। এছাড়া তদন্ত ধামাচাপা দিতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন তো ছিলই। সেই সময়ে ঢাকা বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা শ্রীকান্ত চন্দ্র চন্দ ও শাহেদুল খবীর চৌধুরী বর্তমানে যথাক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি কলেজ শাখা উপসচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক।   

বছরের পর বছর ধরে প্রশ্নফাঁসের তথ্য চেপে রাখা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ  নোট ও গাইড বইয়ের ব্যবহার ও গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দেয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘গাইড বই থেকে প্রশ্ন করলে চাকরি থাকবে না, এমপিও বন্ধ হয়ে যাব।’ কিন্তু গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দেয়ার সময় কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখায় থাকা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সেই কর্মকর্তা বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। আর যারা প্রশ্ন তৈরি ও মডারেশন করেছেন তাদের কাউকে খুঁজে বের করেনি মন্ত্রণালয়। 

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে গাইড বই থেকে রাজশাহী বোর্ডের প্রশ্ন প্রণয়নের অভিযোগে এমপিও বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া হয় দুইজন বেসরকারি কলেজ শিক্ষকের। তারা হলেন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার আরআইএম ডিগ্রি কলেজের ফিন্যান্স বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহ প্রবীর মিত্র এবং একই জেলার চৌহালী উপজেলার চৌহালী ডিগ্রি কলেজের ফিন্যান্সের প্রভাষক মমতাজ বেগম।

প্রভাষক মমতাজ বেগম এবং শাহ প্রবীর মিত্র উভয়ের বিরুদ্ধেই দায়িত্বে অবহেলা করে গাইড বই থেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র প্রণয়নের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই নভেম্বরের এক পত্রে এমন কাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? দৈনিক শিক্ষার এমন প্রশ্নের জবাবে কোনও তথ্যই দিতে পারেনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কোনও কর্মকর্তা। 

আরও পড়ুন: 

গাইড থেকে হুবহু প্রশ্নে এসএসসির বাংলা পরীক্ষা, আছে ভুলও

বাজারি গাইডের প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা, জড়িতদের চিহ্নিত করার নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর

গাইড বই থেকে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন করার পক্ষে ডা. তুষার!

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00325608253479