গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ছয়টি দেশে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেশের বাইরে থেকে কেউ যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর মতো কাজে জড়িয়ে না পড়েন, সেদিকে বিশেষ নজরদারি রয়েছে সিআইডির।
সিআইডি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ‘গুজব’ ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের দায়ে সৌদি আরব ছাড়াও কাতার, অস্ট্রেলিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ার কয়েকজন প্রবাসীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের সংখ্যা কমপক্ষে ১২।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার (৮ নভেম্বর) পর সৌদি আরবে অবস্থানরত দুই প্রবাসী বাংলাদেশির আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান সিআইডির সাইবার তদন্ত বিভাগের বিশেষ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম। দুজনের বিরুদ্ধে ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও করা হয়েছে।
মোল্যা নজরুল ইসলাম গতকাল বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সিআইডি কার্যালয়ে বলেন, যেসব দেশ থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে (কিছু প্রবাসী), সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় ইন্টারপোলের এনসিবি বাংলাদেশ শাখাকেও (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রবাসীরা গুজব ছড়িয়ে ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনসিবিকে চিঠি দিয়েছে সিআইডি। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ১২ জন প্রবাসীর বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। দেশে ফিরলেই অভিবাসন পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করবে।
সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা বিদেশে বসে এসব করছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।’ ঠিক কোন কাজটিকে সিআইডি গুজব ছড়ানোর মতো অপরাধ বলে মনে করছে বা অভিযুক্তদের অপরাধ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিথ্যা খবর প্রচার করা, উসকানিমূলক তথ্য প্রচার, সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে অশ্লীল-মানহানিকর মন্তব্য ও ছবির বিকৃতি করা।
তফসিল ঘোষণার পর যত প্রবাসী গুজব ছড়ানোর ঘটনায় শনাক্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অশ্লীল প্রচার, নির্বাচন কমিশন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও নির্বাচন নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য বা ছবি পোস্ট করেছেন বলে জানায় সিআইডি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়ায়।
গুজব প্রতিরোধে সিআইডি ছাড়াও পুলিশ সদর দপ্তরের ‘সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম প্রিভেনশন কমিটি’ ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ কাজ করছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, দেশ ও বিদেশ থেকে ফেসবুক, ইউটিউবে নির্বাচন নিয়ে কী প্রচার করা হচ্ছে, তা নজর রাখছেন সারা দেশে পুলিশের সব শাখার কর্মকর্তারা। ঢাকার সাইবার অপরাধ দমন বিভাগও নিবিড়ভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খেয়াল রাখছে। কঠোর নজরদারির অংশ হিসেবেই সম্প্রতি ৫৪টি সাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় পুুলিশ।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে আট সদস্যের একটি পর্যবেক্ষণ টিম (কমিটি) গঠন করেছে ইসি। এখন থেকে ২৪ ঘণ্টা এই কমিটি ফেসবুকসহ যেকোনো মাধ্যমে নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব রোধে কাজ করবে। এ ছাড়া তারা অপপ্রচারও খতিয়ে দেখবে।
ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেছেন, পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান করা হয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলামকে। অন্যান্যের মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ, র্যাব, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের একজন করে প্রতিনিধি এবং নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা (সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার) রয়েছেন। এই কমিটি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুজব, প্রোপাগান্ডা যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, এমন কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে ২৪ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করবে।