ঘুষ লেনদেন : মিজান-বাছিরকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ - দৈনিকশিক্ষা

ঘুষ লেনদেন : মিজান-বাছিরকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে ডিআইজি মিজান এবং দুদকের পরিচালক বাছিরকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুদক মিজানকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সম্মেলন কক্ষে এবং বাছিরকে পুলিশ সদর দপ্তরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মিজান বলেছেন, মামলা হলে ফেঁসে যাবেন।

তাই আত্মরক্ষার জন্য তিনি বাছিরকে ম্যানেজ করতে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেন। অন্যদিকে পুলিশের কাছে বাছির কী বলেছেন তা প্রকাশ করেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

সোমবার দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্ল্যার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অপরদিকে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অর্থ ও উন্নয়ন) মো. শাহাব উদ্দীন কোরেশীর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত টিম দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে।

এদিকে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ডিআইজি মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরি করছে দুদকের অনুসন্ধান টিম। আজকালের মধ্যেই কমিশনে দু’জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ডিআইজি মিজানকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সম্মেলন কক্ষে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান টিমের প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি মিজান স্বীকার করেছেন, তিনি দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে দুই দফায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। প্রথম দফায় ১৫ জানুয়ারি ২৫ লাখ এবং দ্বিতীয় দফায় ২৫ ফেব্রয়ারি দেন ১৫ লাখ টাকা। দু’বারই রমনা পার্কে গিয়ে এনামুল বাছিরের হাতে টাকা দেন। লেনদেনের বিষয়টি তার গাড়িচালক ও বডিগার্ডও জানতো।

বেলা ১১টা থেকে ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এ সময় দুদক টিমের হাতে ছিল জেরাসংক্রান্ত প্রশ্নমালা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় কারা কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। দুদকের কর্মকর্তারা ডিআইজি মিজানের কাছে জানতে চান, ‘কেন তিনি ঘুষ দিলেন? এনামুল বাছির তাকে কি ঘুষ দিতে বাধ্য করেছিলেন?’ এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি তিনি। বাধ্য না হলে কেন ঘুষ দিলেন- এ প্রশ্নেও নীরব ছিলেন ডিআইজি মিজান।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, এনামুল বাছিরকে ঘুষ দেয়ার আগে কমিশনকে বিষয়টি কেন জানাননি। কেন আপনি নিজেই অসততার আশ্রয় নিলেন। নিজেই বলেছেন, দুদক কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলে দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন দুদক কতটা ভালো কাজ করে। এসব প্রশ্নে ডিআইজি মিজান নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেননি।

শুধু বলেছেন, তার মনে হয়েছে মামলা হলে ফেঁসে যাবেন। এমনকি দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে, সেই মামলায় তিনি হয়রানির শিকার হতে পারেন তাই তিনি দুদকের পরিচালক বাছিরকে ‘ম্যানেজ’ করতে চেয়েছেন। তিনি সহজেই ম্যানেজ হবে বুঝতে পারেননি। বিষয়টি এতদূর গড়াবে তাও তিনি ধারণা করতে পারেননি বলে জানান।

এদিকে, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অর্থ ও উন্নয়ন) মো. শাহাব উদ্দীন কোরেশীর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত টিম সোমবার দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ সময় এনামুল বাছির কি বলেছেন, জানতে চাইলে তদন্ত টিমের প্রধান মো. শাহাব উদ্দীন কোরেশী বলেন, বিষয়টি তদন্ত পর্যায়ে আছে। এনামুল বাছিরকে প্রায় ১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তদন্তের প্রয়োজন হলে হবে।

জানা গেছে, দুদক টিম দু’জনের ঘুষ লেনদেনসংক্রান্ত কথোপকথন ও এ সংক্রান্ত ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্টের সূত্র ধরে ডিআইজি মিজানকে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন করে। তবে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি।

দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধানে দু’জনের ঘুষের প্রমাণ মিলেছে। ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে তার সত্যতা আরও নিশ্চিত হল। তিনি দুই দফায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে দুদক পরিচালক এনামুল বাছির ঘুষ নেয়ার কথা অস্বীকার করেন।

তিনি দুদকের ডাকে হাজির না হলেও পুলিশ সদর দপ্তরের নোটিশ পেয়ে সোমবার বক্তব্য দিয়ে এসেছেন। ১০ জুলাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল দুদকের। তিনি দুদকে হাজির হবেন বলেও অনুসন্ধান টিমকে নিশ্চিত করেন। কিন্তু ওই দিন তিনি নিজে হাজির না হয়ে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্যের একটি কপি পৌঁছে দেন। তাতে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পাশাপাশি তার কণ্ঠ নকল করার অভিযোগ করেন। অপরদিকে ডিআইজি মিজান এখনও বলছেন, তিনি ঘুষ দিয়েছেন।

বাছির সেই ঘুষ নিয়েছেন। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত অডিও ক্লিপের ফরেনসিক পরীক্ষা করেও দু’জনের কণ্ঠের সত্যতা মিলেছে। অথচ বাছির বলেন, বাংলাদেশে কণ্ঠস্বর পরীক্ষার কোনো পদ্ধতিই নেই। এমন কি বিশ্বের কোথাও এ ধরনের পদ্ধতি আছে কিনা তার জানা নেই। দুদক মনে করে, এনামুল বাছির সরাসরি দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য না দিয়ে দূর থেকে যেসব কথা বলছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। দু’জনের বিরুদ্ধেই ঘুষ নেয়া-দেয়ার প্রমাণ সব দিক থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065319538116455