বৈশ্বিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ আজ পূর্বের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে। কিন্তু আমাদের যতটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তত না। একটা দেশের যুব বা ছাত্র সমাজ হচ্ছে ঐ দেশের প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু আমাদের এই অংশটা বলতে গেলে পঙ্গু। এর প্রধান কারণ হলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আমাদের এই ছাত্র সমাজকে আমরা প্রধান দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। এক পক্ষ যারা রাজনীতি করে অপর পক্ষ যারা চাকরি খুঁজে। আর বর্তমানে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি যে আমরা চাকরি বলতে বিসিএস বা সরকারি চাকরি বুঝে থাকি। একসময় প্রাইভেট সেক্টর উচ্চশিক্ষিত সমাজের নিকট জনপ্রিয় থাকলেও বর্তমানে তার জনপ্রিয়তা অনেকটা হারিয়েছে। এমনকি আমরা ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর প্রশাসনে পুলিশে আসতে চাই। এবার বিসিএস বা সরকারি চাকরির দিকে আসা যাক। একবারে বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করে ৪ লক্ষ। আমি অন্যান্য চাকরির কথা বাদ দিলাম। বিসিএস-এর সম্পূর্ণ প্রসেস শেষ হতে বছরখানেক সময় লাগে। এই একটি বছর দেশের চার লক্ষের মতো উচ্চশিক্ষিত যুবক বেকার থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বছরখানেক পর ক্যাডার হবে মাত্র দুই হাজারের মতো। তাহলে বাকি চার লক্ষ! তার কিছু অংশ এর মধ্যে অন্য কোনো চাকরি পেয়ে যাবে। কিন্তু বাকিরা! তারা আবার স্বপ্ন নিয়ে পরবর্তী বিসিএস দিবে। এভাবে লক্ষ লক্ষ যুবক বছরের পর বছর বেকার থেকে যাচ্ছে।
এবার আসি যারা ছাত্ররাজনীতি করে। এখানেও দুই ভাগ আছে। এক ভাগ হলো সুসময়ের রাজনীতিক আর এক ভাগ হলো যারা ভালোবেসে রাজনীতি করে। যারা সুসময়ে রাজনীতি করে তারা সল্পমেয়াদি নিজের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করে। বাংলাদেশে যত বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যত কলেজ আছে সবখানে রাজনীতি প্রত্যক্ষভাবে বিদ্যমান। আর এর মাঝে যত হল বা হোস্টেল আছে এসব রাজনীতি ছাড়া কল্পনা করা যায় না। সত্যি কথা বলতে যারা ছাত্র রাজনীতি করে রাজনীতির পাশাপাশি পড়ালেখা করে। পড়ালেখার পাশাপাশি রাজনীতি না। এবার ভাবেন প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, হল, হোস্টেল কমিটিতে কত ছাত্র রাজনীতি করে। আবার তাও একটি রাজনৈতিক দলের না। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন আছে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি আছে। এই যুব বা ছাত্র সমাজের বিরাট একটা অংশ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার কিছু অংশ যে আবার পড়ালেখা বা উত্পাদনশীল নয় তা না। তবে তা খুবই ন্যূনতম।
আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের সংখ্যা অনেক বেশি। সবাই নেতৃত্বে থাকতে চায়। যে কারণে নিজের দলের মধ্যেই অনৈক্য-মতবিরোধ-মারামারি লেগে থাকে। আমাদের যুব বা ছাত্র সমাজের কিছু অংশ বছরের পর বছর ভালো চাকরির সন্ধানে বেকার থাকে আরেকটা অংশ রাজনীতি করে বেকার থাকে। এর কারণ হলো প্রাইভেট সেক্টরের উচ্চ পদগুলো অনেকাংশ বিদেশিদের দখলে এবং আমাদের সক্ষমতার অভাব। কারণ আমরা সবাই শব্দ ভাণ্ডার এবং সাধারণ জ্ঞানে সক্ষমতা অর্জনে ব্যস্ত। আমাদের কাছে প্রযুক্তিগত বা কারিগরি সক্ষমতা মুখ্য না। আসলে এটা আমাদের শিক্ষা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার দোষ। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা অংশ যদি হুসাইন এম ইলিয়াস, সিফাত আদনান, ফাহিম সালেহ-এর মতো উদ্যোক্তা হতে পারতাম তাহলে প্রতিজন ৩ বছরে ৫০০-এর অধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারতাম। এটা সত্যি যে সবাই যেমন নেতা হতে পারবে না তেমনি সকলেই উদ্যোক্তা হতে পারবে না। সবাই উদ্যোক্তা না হলেও উত্পাদনশীল হতে পারব। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ তা মানি কিন্তু এই যুব বা ছাত্র সমাজ যদি উত্পাদনশীল না হয় ঐ মহাসড়কে গাড়ি চলার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না। নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তুলুন, আর তা না হলে সারাজীবন দেশের টাকা চীন, আমেরিকা, জাপান ইত্যাদি দেশে চলে যেতে থাকবে। মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করেন। কারিগরি, প্রযুক্তিগত এবং বাস্তবধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করুন।
লেখক :শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যে: ইত্তেফাক