চাটুকারিতার মহোৎসবে বিলম্বিত প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন - দৈনিকশিক্ষা

চাটুকারিতার মহোৎসবে বিলম্বিত প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

সেকালে শিক্ষা ছিল পরিবেশ ও বিদ্যালয় কেন্দ্রিক। তখন সংবাদ পাঠানো হতো ব্যক্তি বা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে। রাজধানী থেকে  রাজধানীতেই ডাকে পাঠানো চিঠি পেতে ১ সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যেতো। সে সময়কার ও বর্তমানের শিক্ষা নিয়ে কবিতার দুটি লাইন উপস্থাপন করছি :
 
‘আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা, তোমাদের যুগে তোমরা এখন লেখাপড়া কর মেলা।’

এখন লেখাপড়া তথা জ্ঞান অর্জনের অসংখ্য মাধ্যম। ক্ষণিকের মধ্যে সারাবিশ্বে সংবাদসহ বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়ে পড়ে। আমাদের সময় কর্দমাক্ত সরু ক্ষেতের আইল দিয়ে হেঁটে শিক্ষা গ্রহণের জন্য যেতে হতো। তখন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সুসংগঠিত ছিলো। সাংগঠনিক কাজে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় গেলে ফতুল্লা স্কুলে চিনাবাদাম দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। কারণ সে স্থানের কাছাকাছি খাবারের অন্য কোনও ব্যবস্থা ছিল না।

শস্যক্ষেতের সরুপথ হেঁটে সংগঠনের কাজ করতে হতো। তখনকার বেশিরভাগ সংগঠনের নেতারা ছিলেন সৎ, ত্যাগী ও শিক্ষক-দরদী। তখনকার বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সতর্কবাণী সকলের দৃষ্টি কেড়ে নিতো। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের আন্দোলনের কণ্ঠস্বর আজও মনের মাঝে ভেসে বেড়ায়। তখন লক্ষাধিক শিক্ষকের আন্দোলনে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, মেজর জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশুর মাধ্যমে সর্বপ্রথম আত্মসমর্পনের বার্তা পাঠান। আজও নানান বৈষম্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের মতো মহার্গজনের স্বপ্ন দেখি। মরহুম প্রেসিডেন্ট এরশাদ তৎকালীণ রমনা রেলওয়ে ময়দানে (বর্তমান ওসমানী উদ্যানে) ভাষণে বৃষ্টির মধ্যে কাদা-পানিতে লক্ষাধিক শিক্ষকের উপস্থিতি দেখে বলেন, ‘অধ্যাপক আজাদ আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মহাসমাবেশ কাকে বলে।’ 

পাকশীর ঝড় বৃষ্টির মাঝে ও বিমানবন্দর ময়দানসহ সকল সমাবেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষাধিক। প্রত্যেক সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ের হুঙ্কার ভেসে আসতো। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ঐক্যবদ্ধ সংগঠনের অনেক অর্জন। পোস্ট অফিসের পিওনের কাছ থেকে হাটবারে ভেঙে ভেঙে বেতন নেওয়া থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম সকল মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। জাতীয়করণ, প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টসহ অসংখ্য সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেকটি দুরদর্শী সিদ্ধান্ত হলো, শিক্ষকদের সার্ভিস বই সংকট নিরসন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই থেকে প্রায় দেড় লাখ প্রাথমিক শিক্ষক সরকারি কর্মচারীর তখন সার্ভিস বুকের নিদারুণ সংকট। সংকট নিরসনে তিনি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতিকে সার্ভিস বুক প্রিন্ট করে শিক্ষকদের মধ্যে বিতরণের অনুমতি দেন। তাঁর অত্যন্ত গভীর ভালবাসা ছিল প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপর । তৎকালীন দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাকসহ সকল পত্রিকা প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে ছিল।

বর্তমানে অসংখ্য তৈলাবাজিতে ব্যস্ত সংগঠনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বপ্ন। তৈলবাজির মহোৎসবে বিলম্বিত হচ্ছে প্রাথমিকের ১০/১১তম গ্রেড প্রাপ্তি। প্রধান শিক্ষকদের ১০তম গ্রেড প্রাপ্তি অযৌক্তিক নয়। সকল সরকারি কর্মচারী ২য় শ্রেণির মর্যাদায় পাচ্ছে ১০ম গ্রেড। অপর দিকে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডও যৌক্তিক। বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষক নেতা সংশ্লিষ্টদের চাটুকারিতা করে প্রাথমিক শিক্ষকদের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠানামা করাচ্ছেন। এ তেল দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত তাদের নিজস্ব স্বার্থ। সকল সরকারি কর্মচারী উন্নীত বেতন স্কেল বিএসআরের কালাকানুন মোতাবেক নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণ হতো। ভূমি মন্ত্রণালয়ে কর্মচারীরা এ কালা কানুন ভেঙে উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণে সুযোগ দিয়ে সকল সরকারি কর্মচারীর ভাগ্য খুলে দিয়েছেন। এখানে আমাদের নেতারা ১৩তম গ্রেডে উচ্চ ধাপে বেতন প্রদান নিয়ে আত্ম-অহঙ্কার ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাটুকারিতা করেন যা বেদনাদায়ক। এ যেন পরের ধনে পোদ্দারী প্রবাদের মতো। 

 এ মাত্রাধিক তৈলবাজীতে ১৩তম গ্রেডের অফিস আদেশ যদি বিলম্ব না হতো, তবে প্রাথমিক শিক্ষকেরা কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করতেন। এ বিলম্বের কারণে সমুদ্রে নিমজ্জিত হলো প্রাথমিক শিক্ষকদের বর্ধিত ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা। প্রাথমিকের মহাপরিচালক সময় বেঁধে দিয়ে ১৩তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করার অফিস আদেশ জারি করলেন। ফলে, প্রাথমিক শিক্ষকরা পেলেন ঈদুল আযহার বোনাসের বর্ধিত অংশের অর্থ। প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রায় সকল পাওনা বছরের পর বছর বিলম্বে দেওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বর্তমান নিয়োগ বিধিতে প্রাথমিক শিক্ষক পদোন্নতির অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। আজ প্রাথমিক শিক্ষক নেতাদের মুখে শো-ডাউন মার্কা প্রতিবাদ দেখা যায়। যখন এ নিয়োগ বিধি  তৈরি করে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের অভিনয় করে যাচ্ছেন। তারা মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ সকল কর্মকর্তার অতি কাছের ও অত্যন্ত প্রিয়ভাজন বলে প্রচার করতে থাকেন। 

‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে অন্তরে ধারণ না করে মুখে-মুখে বলে বদলি, নিয়োগসহ সারাদেশের চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক বাণিজ্য করে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছেন। এখন পদোন্নতি কমিটি করে পদোন্নতি বাণিজ্য করার ইঙ্গিত ফেসবুকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে প্রাথমিক শিক্ষক, সৎ শিক্ষক নেতা, সর্বস্তরের কর্মকর্তা, ডিজি, সচিব, প্রতিমন্ত্রী সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের একজন কর্মী হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষার সকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। 
আশা করছি, শিক্ষকদের তথা বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে শিক্ষা বিষয়ক দেশের জনপ্রিয় ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক শিক্ষা পরিবারের মূদ্রিত জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা পাশে থাকবে। শিক্ষা বিষয়ক সব ধরনের সংবাদ ও বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষা তথা শিক্ষকদের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণের প্রত্যাশা রাখছি। প্রাথমিক শিক্ষায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ হোক সকলের।

লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041830539703369