দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক। কিন্তু এ সুবিধা পাচ্ছে দেশের ৬৩ হাজার ৬০১টি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। সরকারি হওয়ায় এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে। এদিকে বেসরকারি চার হাজার স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে না। কমবেশি বেতন-ভাতা গুণতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি চাহিদামাফিক বেতন ভাতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন এসব স্কুলে পাঠদানে থাকা ১৬ হাজার শিক্ষক। তারা একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দাবি আদায় আবারো অনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন এই শিক্ষকরা। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়ের এক লাখ তিন হাজার ৮৪৫ শিক্ষকের চাকরি তিন ধাপে জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৯২১, দ্বিতীয় ধাপে ১৭১৯টি বিদ্যালয় এবং তৃতীয় ধাপে ৫৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে এখনও জাতীয়করণ হয়নি এমন চার হাজার ১৫৯টি স্কুল রয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে প্রকৃত তথ্য না দেয়ায় এসব স্কুল জাতীয়করণ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এসব স্কুলে কর্মরত শিক্ষকরা। তারা বলছেন, জাতীয়করণের জন্য মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক সময়ে তথ্য না পাঠানোয় এসব স্কুল জাতীয়করণ কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে যায়।
বাদ পড়া স্কুলগুলোর শিক্ষকদের সংগঠন বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মামুনুর রশিদ খোকন ইত্তেফাককে বলেন, সরকার যে সব স্কুল ইতিমধ্যে জাতীয়করণ করেছে এর মধ্যে অনেক অযোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ এই চার হাজার ১৫৯টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য। এগুলো সরকারি করা হচ্ছে না। তিনি জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এসব স্কুলকে যোগ্য বলে স্বীকৃতি দিলেও সরকারি করছে না।
সরকারিকরণের দাবিতে তৃতীয় ধাপে বাদপড়া শিক্ষকরা গত ২১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। পরে ২৬ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করেন।
সংগঠনের নেতারা বলেন, তিনজন সচিবের আশ্বাসে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে ৭ ফেব্রুয়ারি অনশনের ১৮ দিন পর কর্মসূচি স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যান শিক্ষকরা। কিন্তু স্কুলগুলো সরকারিকরণের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ফের অনশন কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
তবে এসব স্কুল জাতীয়করণ না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। সম্প্রতি সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ইঙ্গিত দেন, প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন করে আর কোনো বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হবে না।
মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এমন কোনো স্থান নেই যেখানে দুই কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তাই নতুন করে আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করার পরিকল্পনা নেই। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াধীন ৩২টি প্রতিষ্ঠান সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকারিকরণ হবে। এগুলো প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২৬ হাজারের মধ্যে রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের পুরনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৭ হাজার ৬৭২ টি। এছাড়া নতুন সরকারি হওয়া স্কুল ২৫ হাজার ২৪০, বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় নতুন সরকারি স্কুল ৬৩৪টি এবং পরীক্ষণ বিদ্যালয় ৫৫। সব মিলে স্কুল সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬০১ টি।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক