শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যার ঘটনার পর সেখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। গত শুক্রবার বুয়েটে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর অনেকে বলছেন যে, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত। রোববার (১৩ অক্টোবর) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত কিনা সেটা পুরনো বিতর্ক। দলীয় লেজুড়বৃত্তি করা কোন ছাত্র সংগঠনের অন্যায়-অপকর্ম যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে তখন এ বিতর্ক জোরালো হয়। একটি গোষ্ঠী মনে করে, ছাত্ররাজনীতি একদম বন্ধ করে দেয়া উচিত। তারা মনে করে, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু হবে। আমরা বলতে চাই, মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা কোন সমাধান নয়। যারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেন তারা এ দেশে ছাত্ররাজনীতির অতীত-ইতিহাস ভুলে যান। যে ভাষায় আজ তারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলছেন, সেই ভাষা রক্ষার জন্য ছাত্ররাই মূল সংগ্রামটি করেছে। ১১ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা সংগ্রাম, নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা আমরা ভুলিনি।
অভিযোগ উঠেছে যে, ছাত্ররাজনীতি কলুষিত হয়ে পড়েছে। আমরা বলতে চাই, এ অভিযোগকে সাধারণীকরণ করলে ভুল হবে। অভিযোগকে সুনির্দিষ্ট হতে হবে। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই একটি মাত্র সংগঠন ছাত্ররাজনীতি করে না। যদিও সব সরকার আমলেই ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন ছাড়া বাকিগুলো কোণঠাসা হয়ে থাকে। সুনির্দিষ্ট করে যদি একথা বলা না হয় যে, ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী ছাত্রসংগঠন কলুষিত হয়ে পড়েছে তাহলে বাকি ছাত্রসংগঠনের প্রতি অবিচার করা হবে। কোন একটি সংগঠনের অন্যায়-অপকর্মের বোঝা অন্য সংগঠনের ওপর চাপানোর সুযোগ নেই। অপরাধের সাজা অপরাধীকেই ভোগ করতে হবে। নিরপরাধ কাউকেও দ- দেয়া অন্যায়, অন্যায্য। কেউ যদি সুনির্দিষ্ট করে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বলতেন সেটার মধ্যে ন্যায্যতা খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু এ ন্যায্য কথা বলার মতো সাহস কেউ রাখেন বলে মনে হয় না। এটা মনে করার কারণ আছে যে, ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করার কথা যারা বলতে পারছেন না তারাই সব ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি বন্ধ করার দাবি তুলছেন।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ছাত্ররাজনীতির পথ রুদ্ধ করা যাবে না। কোন ছাত্র রাজনীতি করবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত শুধু সেই ছাত্রই নেবে। বহু ছাত্র রাজনীতি করে না। তবে যে কোন ছাত্রই এমনকি সাধারণ মানুষও কলুষিত ছাত্ররাজনীতির শিকার হতে পারেন। এজন্য দলীয় পরিচয়ে ছাত্ররাজনীতির অপসুযোগ বন্ধ করতে হবে। মূলত সেনাশাসক জিয়া দলীয় পরিচয়ে ছাত্ররাজনীতির সূচনা করেন। নব্বই পরবর্তী সরকারগুলো কেন একজন সেনাশাসকের দেখানো পথে চলেছে সেটা ভেবে আমরা বিস্মিত হই। তাছাড়া আরপিও ৯০(বি)-এর তিন নম্বর ধারা অনুযায়ী দলীয় পরিচয়ে ছাত্ররাজনীতি করার সুযোগ নেই। সব রাজনৈতিক দলকে এ ধারা প্রতিপালন করতে হবে। ছাত্ররা রাজনীতি করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। এজন্য ছাত্র সংসদ থাকতে হবে, নিয়মিত নির্বাচন হতে হবে। কোন জাতীয় সংকট দেখা দিলে তখন ছাত্ররা সময়ের দাবি অনুযায়ী ভূমিকা রাখবে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা তাদের কাজ নয়। মোদ্দাকথা হচ্ছে, ছাত্ররাজনীতি হতে হবে নির্দলীয়। তাহলেই ছাত্ররাজনীতি সঠিক পথে ফিরবে।