ছাত্রলীগের প্রতি সাধারণের আস্থা-অনাস্থা - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্রলীগের প্রতি সাধারণের আস্থা-অনাস্থা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে অভিযুক্ত দুজন ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে অন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের দাবি, অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করা। যদি তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আর যদি তা না হয়ে আবার ওই শিক্ষার্থীদ্বয় ছাত্রত্ব ফিরে পায় তাহলে ভবিষ্যতে উল্লিখিত নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। অথচ ওই অভিযুক্তদের বিনা দ্বিধায় তাত্ক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করার প্রয়োজন ছিল। এ কারণেই এমন শঙ্কাটি অমূলক নয় যে সাম্প্রতিক রাবির ঘটনায় অভিযুক্তদের সহজেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেবে না।

রাবিতে প্রায়ই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ কর্তৃক নানাবিধ হয়রানির শিকার হয়। এমনকি রাবির প্রায় প্রতিটি হলে সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসনের চেয়ে ছাত্রলীগের প্রভাব বেশি। কাগজে-কলমে আবাসিকতা বরাদ্দ দেয় হল প্রশাসন কিন্তু কার্যকর করার দায়িত্ব ছাত্রলীগের। এ প্রসঙ্গে এরই মধ্যে গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি খবর প্রচার হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলে টর্চার সেল থাকার বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে।

আমি নিজে প্রায় ১০ বছরে রাবির শিক্ষকতা জীবনে বেশ কিছু সাধারণ ছাত্রের নির্যাতন কিংবা অসহায়ত্বের অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করেছি। এমনকি গত কয়েক বছরে আমার বিভাগের কয়েকজন ছাত্রকে মিথ্যা অজুহাতে ছাত্রলীগ কর্তৃক প্রহৃত হওয়ার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছি। শুধু তা-ই নয়, শিবির সন্দেহে আমার বিভাগের বেশ কয়েকজন ছাত্রকে ছাত্রলীগ পিটিয়ে জখম করে থানায় সোপর্দ করার পর আমি নিজে গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে এনেছি।

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অহরহ এমন অনেক ঘটনা ঘটছে, যেগুলোর সব কয়টির প্রতিবাদ সামনে আসে না কিংবা আসার সুযোগ ঘটে না। মূলত যেগুলোর যথাযথ প্রমাণ থাকে, সেগুলোই প্রতিবাদ হিসেবে সামনে আসে। আর যেসব নির্যাতনের অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ থাকে না, সেগুলো প্রতিবাদের রূপ পায় না।

বড় বড় রাজনৈতিক ইস্যুর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী কর্তৃক এমন ঘটনা সামাল দিতেই অনেক সময় সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। বর্তমান সরকারের শুরু থেকে ছাত্রলীগের বহু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে বিব্রত হয়েছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর নিজের পছন্দের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের সরিয়েও দিয়েছেন। তবু গত এক মাসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ডজনখানেক ইস্যুতে ছাত্রলীগকে সংবাদের শিরোনাম হতে দেখা গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকার নিজ দলের নেতাকর্মীদের অন্যায়-অপকর্মের মোটেও প্রশ্রয় দিচ্ছে না। তার পরও ছাত্রলীগের এমন বাড়াবাড়ির ঘটনা কেন ঘটছে—এমন প্রশ্ন এই মুহূর্তে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এর আগে ছাত্রলীগ কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অভিযুক্তদের সবার উপযুক্ত শাস্তি হয়নি বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুরস্কৃত হতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের অনেকেই রাজনীতি করে, চাঁদাবাজি করে, আদর্শের কথা বলে, স্বার্থে আঘাত ঘটলে আদর্শ পরিবর্তন করে অথবা আধিপত্য খাটাতে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে থেকে আদর্শে থাকার অভিনয় করে। আমি প্রায়ই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিতর্ক করি যে আদর্শের রাজনীতির নামে কি এক ধরনের অভিনয় চলছে না? যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করতে হয়, যেকোনো সময়ই রাজনীতিবিদরা দল বদল করেন। এমনকি দল বদল করে সহজেই মিশে যান নতুন দলের আদর্শে।

এ জন্যই এ ধরনের রাজনীতিকে নাট্যমঞ্চের অভিনয়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকি। কারণ অভিনেতাদের চরিত্র বদল করে অন্য নতুন কোনো চরিত্রে অভিনয় করাটা খুব বেশি কষ্টের হয় না। আমরা লক্ষ করেছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেকেই আছেন, যাঁরা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছিলেন। তাঁদের অনেকেই স্বার্থের কারণে পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর নাম ভুল করেও উচ্চারণ করেননি; বরং সুযোগ পেলে বঙ্গবন্ধুর সুনামকে কলুষিত করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্যবোধ করেননি।

আজ যাঁরা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত থেকে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছেন, শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে লাঞ্ছিত করছেন—তাঁরা আসলে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শ লালন করছেন নাকি আদর্শে থাকার অভিনয় করছেন, সেটি ভেবে দেখার সময় এসেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনের জন্য এখন যোগ্যতার পাশাপাশি চলে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পদ বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্যিক পদ বণ্টনের প্রবণতার কারণে আদর্শের রাজনীতির পরিবর্তে তৈরি হয়েছে অসৎ ও অশুভ রাজনীতি। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর।

নেতা নির্বাচনে যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের কোনো মূল্য নেই, সেহেতু অপতৎপরতা বন্ধ হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। আর এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ন্যায্য দাবি কিংবা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে সহসাই তাদের (সাধারণ শিক্ষার্থী) ওপর চলছে জুলুম-নির্যাতন। এই নানাবিধ কারণে বর্তমান সময়ে মেধাবীরা ছাত্ররাজনীতি পরিহার এবং ঘৃণা করছে।

আমি শিক্ষক হিসেবে দেখেছি, বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই  বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা বঙ্গবন্ধুকে পছন্দ করে। আর এই পছন্দ থেকেই একজন সাধারণ শিক্ষার্থী তার পরিবারকে যথাযথ আদর্শের মাধ্যমে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু সব শিক্ষার্থীই যে সক্রিয় ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে থাকবে, আবার সবাই যে মিছিল-মিটিংয়ে যাবে এমনটি কোনোভাবে প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন ছাত্রলীগের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়, তখন এর প্রভাব কেমন হতে পারে কিংবা কতদূর পৌঁছতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

লেখক : ড. সুলতান মাহমুদ রানা, সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080277919769287