ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেল’ কক্ষ নম্বর ২০১১ - দৈনিকশিক্ষা

ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেল’ কক্ষ নম্বর ২০১১

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে হত্যা করা হলেও কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যায় শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আবরারকে ডেকে নেন। এরপর হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে গভীর রাত পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করা হলেও কেউ এগিয়ে যায়নি। হল প্রশাসনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সে সময় ওই কক্ষের সামনে ভিড় করেছিলেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ওই কক্ষে এর আগেও একাধিক শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে নির্যাতন করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে বলে বলছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে শেরেবাংলা হলের বিভিন্ন রুম ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে হলে ছাত্রলীগের আধিপত্যের নানা তথ্য। তারা জানান, হল প্রশাসন ছাত্রদের হলে সংযুক্তি দিয়েই দায় সারেন। ছাত্রলীগের সমর্থক না হলে সিট পাওয়া যায় না। সিট পেতে ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে ধরনা দিতে হয় সাধারণ ছাত্রদের। কোন ছাত্র কী করতে পারবে, আর কী করতে পারবে না- তা নির্ধারণ করে দিতেন হল ছাত্রলীগ নেতারা। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেই সিট হারাতে হয়। সেই ভয়েই সব নীরবে সহ্য করেন সাধারণ ছাত্ররা। ছাত্রলীগের কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা আছে বলে বলে জানান প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দেখভাল করলে এমন পরিস্থিতি হতো না। সরজমিন আরও দেখা গেছে, প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে হাতের ডান পাশের চারটি কক্ষ পরেই আবরারের ১০১১ নম্বর কক্ষ। কক্ষের দরজায় তিনটি তালা ঝোলানো। পাশের ২০১০ নম্বর কক্ষের শিক্ষার্থীরা দুপুর ২টার দিকেও ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের একজনকে ডেকে তুলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বললে নাম প্রকাশ না করে তিনি জানান, আবরার ও তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী।

আপনাদের বন্ধু, পাশের কক্ষেই থাকেন, তিনি মারা গেছেন অথচ আপনারা দুপুর পর্যন্ত ঘুমাচ্ছেন, বিচার দাবিতে কোনো প্রতিবাদও করছেন কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাত জেগেছি সবাই। এ জন্য ঘুমাচ্ছিলাম। তাছাড়া প্রকৃত ঘটনা কী, কারা মেরেছে সেগুলো অবজারভ করছি।’

আপনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলে যারা আছে তারা সবাই ছাত্রলীগের সমর্থক। সমর্থক না হলে সিট পাওয়া যায় না। যারা রাজনীতি করে না তারাও কোনো না কোনো ‘বড়ভাইকে’ ধরে সিট পেয়েছে।’

হলের নিচতলায় কথা হয় আরেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি জানান, হলের নিচতলায় প্রতি কক্ষে চারজনকে বরাদ্দ দেয় প্রশাসন। এরপর আর কোনো খোঁজ রাখে না। আসন পেতে হলে ছাত্রলীগের বড়ভাইদের কাছে যেতে হয়। হল প্রভোস্ট বেড়াতে আসেন মাঝে মধ্যে। আমাদের কোনো খবর রাখেন না।’

হলের দ্বিতীয় তলায় ২০১১ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, দরজা-জানালা খোলা। রুমের ভেতর চারটি ফ্যানই চলছে। বই খাতা ও বিছানা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পাশের ২০১২ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের তিন নেতা থাকেন। তাদের দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন আগেই তাদের পড়ালেখা শেষ হয়েছে। একজন একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন, অন্যজন সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন। তারা জানান, এগুলো সবই পলিটিক্যাল কক্ষ। রোববার সন্ধ্যার দিকে তারা কেউই কক্ষে ছিলেন না। রাত ১১টার দিকে তারা যখন কক্ষে আসেন তখন পাশের কক্ষে জটলা দেখতে পান। কিন্তু কোনো খবর না নিয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। তাই আর কিছু জানেন না। পরে সকালে জানতে পারেন আবরারের ঘটনাটি।

রাতে আবরারকে নির্যাতনের সময় বাধা দিলেন না কেন- জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, ‘আমরা রুমে আসার অগেই আবরারকে মেরেছে। রাতে কোনো মারের শব্দ পাইনি। তাছাড়া আমাদের পড়ালেখা শেষ। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে ঘাটতে যাইনি। তারা জানান, হলের কাউকে শিবির সন্দেহ হলে মাঝে মধ্যেই ওই কক্ষে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন ছাত্রলীগ নেতারা। অতীতের ঘটনাগুলোতে দুচারটা চড়-থাপ্পড় দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এবারের ঘটনাটি খুবই নির্মম।

আরও পড়ুন:

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের দাবি আন্দোলনকারীদের

সাম্প্রদায়িক উসকানি, ভুয়া ছবি ও ভিডিও ছড়াচ্ছে দেদার

শিক্ষার্থীদের দাবিতে ভিসির ‘নীতিগত’ সমর্থন

বেরিয়ে আসছে নির্যাতনের রোমহর্ষক সব ঘটনা

মদ্যপ অনিক আবরারকে সবচেয়ে বেশি মারধর করে

আবরার হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ১৩ নভেম্বর

ক্যাম্পাসে এসেই তোপের মুখে বুয়েট ভিসি

আবরার হত্যাকারীদের ফাঁসি ও আজীবন বহিষ্কারের দাবি

আবরারের হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে: আইনমন্ত্রী

আবরার সম্পর্কিত আরও সংবাদ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032200813293457