জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার বাজেটে দৃশ্যমান নয় - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার বাজেটে দৃশ্যমান নয়

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

পাকিস্তান আমলে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর ছিল চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। পঞ্চাশের দশকে পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ১৯৫৯ সালের শরিফ কমিশন, ১৯৭৪ সালে কুদরত-এ-খুদা কমিশন, সর্বশেষ কবীর চৌধুরী কমিশনসহ সকল কমিশনই প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সর্বশেষ কবীর চৌধুরী কমিশন ধীরে ধীরে সূর্যের আলো দেখতে শুরু করে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার কারিকুলাম নির্ধারণ ও  পাঠ্যপুস্তক রচনার প্রস্তুতির কথা শোনা গেছে। হঠাৎ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ প্রাথমিক স্তরের কার্যক্রম অনেকটা হোঁচট খেতে শুরু করেছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষার্থী কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েট না হলে সে কর্মজগতে তেমন কিছুই করতে পারে না। বর্তমান শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হওয়ার কথা ছিল প্রাক-প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত। অথচ বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষানীতি দ্রুত বাস্তবায়নের পরিবর্তে পিছু হঠছেন। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষকসহ মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সর্বস্তরে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রশাসন গড়ে তোলা প্রয়োজন।

ইদানিং মন্ত্র্রণালয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অহেতুক প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলী, প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। যে কাজগুলো জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। যা অনেকটা মাছি মারতে কামান ব্যবহারের প্রবাদের মত। মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত, সর্বস্তরে প্রশাসন গতিশীল করায় সহযোগিতা, মন্ত্রণালয়ের অঙ্গীকার শিক্ষকদের বেতন স্কেলের বৈষম্যসহ বেতন স্কেলের অসংগতি দূর করার কথা।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যেখানে অষ্টম শ্রেণি চালু হয়েছে সেখানে শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টিসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত করাসহ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সৃজনশীল পদ্ধতির ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা।

অথচ মন্ত্রণালয় সহকারি শিক্ষকদের পদোন্নতি ৯ বছর ঝুলিয়ে রাখা, প্রাথমিক ছুটির তালিকায় গিট্টু লাগিয়ে শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা ৩ বছর পরপর প্রাপ্তির অধিকার হরণ, প্রধান শিক্ষকদের হাতে সংরক্ষিত ছুটির ক্ষমতা বাতিল করাসহ শিক্ষকদের পাওনা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখার মত অধিকার হরণের কাজগুলো করে যাচ্ছে।

২০১৭-১৮ সালের বাজেটে দীর্ঘ ৩ বছর যাবৎ সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রধান শিক্ষকদের নিচের ধাপে সহকারি শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রদানের স্পষ্ট ঘোষণা, প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেলের অসংগতি, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নতুন শিক্ষকের পদ সৃষ্টি, অতিরিক্ত খরচাদির জন্য টাকা বরাদ্দ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণের মত জরুরি কার্যক্রম দৃশ্যমান নহে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক অবকাঠামো দিয়ে ও এক স্কুলে পদ শূন্য করে অন্য স্কুলে পদ সমন্বয় করে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম। খোদ ঢাকা শহরে মতিঝিল শিক্ষা থানার মতিঝিল, কমলাপুর, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, খিলগাঁও গভ: কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সর্বমোট ৪২টি পিরিয়ড এর ক্লাস চালানোর জন্য মতিঝিল থানার অনেক প্রাথমিক বিদ্যলয়ের পদ কেটেও সমাধান করা সম্ভব হয়নি শিক্ষার্থীর পাঠদানে শিক্ষকের সমস্যা।

এভাবে পদ স্থানান্তরিত করায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পদ শূন্য করা বিদ্যালয়টি। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষার্থীর শিক্ষার অধিকার খর্ব হচ্ছে। এভাবে টানা হেঁচড়া করে কাঙিক্ষত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হতাশা ভরা কার্যক্রম সরকারের মধ্য আয়ের তথা উন্নত দেশ গড়ার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। স্বাধীনতার পর প্রায় সকল কমিশন আলোর মুখ দেখেনি। ধীরে ধীরে হলেও কিছুটা আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে বর্তমান জাতীয় শিক্ষা কমিশন। কারো কর্মকাণ্ডে ও বাজেট বরাদ্দের কারণে মুখ থুবড়ে পড়বে জাতীয় শিক্ষা কমিশনের অগ্রযাত্রা। এটা কারো কাম্য হতে পারে না। এ থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে সকলকে। এজন্য প্রয়োজন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপলব্ধিবোধ জাগ্রত হওয়া।

মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশের পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন তৃণমূল মানুষের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা। তার জন্য বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দের জন্য কৃপণতা পরিহার করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষায় অভিজ্ঞ, দক্ষ জনবল সৃষ্টির জন্য বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করা অতিব জরুরি। সহকারি শিক্ষক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পদোন্নতির মাধ্যমে একমাত্র প্রাথমিক শিক্ষায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষায় শতকরা ৬০ ভাগ মহিলা শিক্ষক থাকায়, এ পদোন্নতি নারীর ক্ষমতায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বর্তমান বাজেটে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা ও বরাদ্দ থাকুক এ প্রত্যাশা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে। শিক্ষাক্ষেত্রের সকল অনিয়ম, অব্যবস্থা ও সময়ক্ষেপণ দূর হোক এই কামনায়।

মো. সিদ্দিকুর রহমান: আহবায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.012641906738281