দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার অদম্য মেধাবী নিরতা রায়। আর্থিক অসচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও পিতা-মাতা এবং এলাকার মুখ উজ্জল করেছে এই মেধাবী শিক্ষার্থী। অভাব অনটনে থেকেও কখনো লেখাপড়ায় পিছুপা হয়নি সে। নিরতা রানী রায় ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২৬৪৫ পজিশনে থেকে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
জানা যায়, নিরতা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের নলবাড়ি গ্রামের ভূমিহীন ধীরেন্দ্র নাথ রায়ের মেয়ে। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে নিরতা বড়। ছোট ভাই মাইকেল ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। বাবা-মা উভয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস। তাদের মনে লালিত স্বপ্নটা পূরণ করে চলেছে তাদের মেয়ে নিরতা রায়।
নিরতা উপজেলার নলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। এরপর নলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে ট্যালেন্টপুলে স্কলারশিপ অর্জন করে। একই বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে এস,এস,সি’তে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পায়। ভালো রেজাল্ট করার সুবাদে সে ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে মাসিক মেধাবৃত্তি লাভ করে। যা দিয়ে বেগম রোকেয়া সরকারী কলেজ থেকে পড়াশুনা করে এইচ,এস,সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সহিত উত্তীর্ণ হয়।
আলাপকালে নিরতার বাবা ধীরেন্দ্র নাথ জানান, আমার দুই শতক ভিটেবাড়ী এবং মাত্র ছয় শতক আবাদি জমি আছে। টানাপোড়ার সংসারে আমার মেয়ে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আমি খুব আনন্দিত। তবে এখন নিরতার ভর্তি এবং মেডিকেল সরঞ্জামাদি কিনতে তিনি দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান।
সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার বিষয়ে নিরতা জানায়, এবার এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমি অনেক গর্বিত। কিন্তু আমার পিতা দরিদ্র হওয়ার কারণে আমি খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন ভালভাবে মেডিকেলে লেখাপড়া করে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি।’
এদিকে উপজেলা থেকে পপি ও শাকিলা নামে দু’জন দরিদ্র মেধাবী ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। এর মধ্যে ভাবকি ইউপি’র গুলিয়ারা সর্দার পাড়ার গরীব বর্গাচাষী রনজিৎ রায়ের মেয়ে পপি রানি। সে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৭৫ পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ লাভ করে এলাকাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।
খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজেবুর রহমান খবর পেয়ে বিত্তবানদের সহযোগিতায় নিরতাকে ২০ হাজার ৭’শ টাকা এবং অপর দুজনকে ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। তিনি বলেন, সমাজের বিত্তবানরা দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসলে তারা দেশ সেবায় উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে পারবে।