ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ৬০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। এই অবস্থায় আতঙ্কের মধ্যে আছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আশফাক আহমেদ মুন্না দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ৪ নভেম্বর আমরা শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্যে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৫৩জন শিক্ষার্থী, ৫জন শিক্ষক, ও ২জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করি। পরে ৫ নভেম্বর আমরা কক্সবাজারে পৌঁছাই। ওইদিন আবহাওয়া ভালো ছিল। পরে আমরা ইনানী বিচ ও টেকনাফ হয়ে ৬ নভেম্বর সেন্টমার্টিনে চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা ব্লু মেরিন হোটেলে উঠি। আমাদের ৮ নভেম্বর ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আবহওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হলে কর্তৃপক্ষ সেখানে তিন নম্বর বিপদ সংকেত দেয়। এতে ৮ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে কৃর্তপক্ষ সেন্টমার্টিনের সঙ্গে সকল জাহাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে আমাদের আর ফেরা সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় আমাদের উদ্ধারের জন্য স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা ফোন করলে তারা আমাদের অভয় দিলেও তাদের কোন তৎপরতা দেখছি না। আবহাওয়া শুক্রবারের চেয়ে শনিবার আরো খারাপ হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের গতি ও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস বেড়েই চলছে। এমতাবস্থায় আমরা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছি।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বুশরাত জাহান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এখানে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর খুব উত্তাল। স্যারেরা আমাদের ভরসা দিলেও আমাদের খুব ভয় হচ্ছে। আমাদের অভিভাবকরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে।
সতীর্থ নবমিতা সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এমতাবস্থায় আমাদের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। চিন্তা হচ্ছে। চরম সংকটের মধ্যে আছি। অভিভাবকরা মোবাইল ফোনে কলের পর কল করে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমাদের উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করছি। এভাবে দু/একদিন থাকলে আমরা অর্থসংকটে পড়ব। এ পরিস্থিতিতে এখানে খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
হোটেল ব্লু মেরিনের ব্যবস্থাপক মো. আরিফ জাহান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মালিকের নির্দেশে আমরা তাদের হোটেল ভাড়া ৫০শতাংশ ছাড় দিয়েছি। আবহাওয়া ভাল না হওয়া পর্যন্ত তারা এ ছাড় পাবেন।
সেন্টমার্টিনে আটকে পড়াদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনাফ উপজেলার ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সেন্টমার্টিনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছি। আবাসন ও খাবার মূল্য যাতে কম থাকে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, সেন্টমার্টিনে ১২শ’র মত পর্যটক আটকা পড়েছেন। বর্তামানে সেখানে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত চলছে। এখনও সেখানে কোনো সমস্যা নেই, খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। স্থানীয় ইউএনও ও চেয়ারম্যানরা সেখানকার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। সেখানে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলেই তাদের সেখান থেকে নিয়ে আসা হবে।