আদালতের আদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মঙ্গলবারের (২৮ আগস্ট) জারি করা অফিস আদেশটি স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (২৯ আগস্ট) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন বুধবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, “মঙ্গলবার জারি করা অফিস আদেশটি আপাতত স্থগিত করা হলো। আদালতের রায় নিয়ে আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তীতে অফিস আদেশ জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশি অধিদপ্তরের একটি অংশ দারুলের সনদের বৈধতা দিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে। মাউশির সাবেক উপপরিচালক মো: মোস্তফা কামাল এক্ষেত্রে বুদ্ধিদাতার ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার দেখানো পথে মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে অতি উৎসাহী হয়ে বৈধতার দেয়ার কাজটি করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, এর অংশ হিসেবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে কোন তারিখ থেকে বৈধতা দেয়া যায় তা উল্লেখ করে বাড়তি চাপও সৃষ্টি করে। তবে ইউজিসি এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক মতামত দেয়নি বলে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশের ব্যাপারে এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে হতাশা প্রকাশ করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তবে রাতে স্থগিতের আদেশ শোনার পর বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই, সেটির সনদের বৈধতা দেয়া মানেই এর বাণিজ্য রমরমা করে তোলা। আর দুঃখজনক হচ্ছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই এই আদেশ জারি করে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের শক্তভাবে প্রতিবাদ করা উচিত। তিনি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য শিক্ষাসচিবকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে মঙ্গলবার সনদ বিক্রির অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া অফিস আদেশে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ মন্ত্রণালয়েরই একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-৩ শাখার উপ-সচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উচ্চ আদালতের আদেশে দারুল ইহসানের সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে স্কুল ও কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। একই আদেশে দারুল ইহসানের সনদের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও এমপিওভুক্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে আদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এমন আদেশের বিষয়ে আমি অবগত নই। একটু আগেই শুনলাম এমন আদেশ হয়েছে। তবে, যতদূর মনে পড়ে উচ্চ আদালতের রায়ের স্পিরিট এমন ছিলো না। রায়ের কথা সম্পূর্ণ মনে নেই, তবে যেটুকু মনে পড়ে তাতে বলা হয়েছে, সনদের গ্রহণ যোগ্যতার বিষয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান যাচাই করে দেখবে কোন সময়ে সনদ নিয়েছে। কারণ, শুরু থেকেই দারুল ইহসান খারাপ ছিলো না বা সনদ বিক্রির অভিযোগ ছিলো না।
মন্ত্রণালয়ের দেয়া আদেশে স্কুল-কলেজের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলা হয়েছে। এমন আদেশ কীভাবে হয়? এমন ক্ষমতা কীভাবে বেসরকারি পরিচালনা কমিটিকে দেয়া হলো? দৈনিক শিক্ষার এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ঊর্ধবতন কর্মকর্তা বলেন, ‘কাল অফিসে গিয়ে দেখব কিভাবে এমন আদেশ জারি হলো।”