আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাবেক প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদকে। জসিম উদ্দিন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক। এক হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার আইসিটি প্রকল্পে বিভিন্ন অর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার সাবেক পিডির বিরুদ্ধে এ মামলা রুজু করা হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা।
জানা গেছে, আইসিটির মাধ্যমে শিক্ষার প্রচলন প্রকল্পে বিভিন্ন লুটপাটের অভিযোগ ওঠায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে আইসিটি প্রকল্পের আওতায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। ফলে সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩(খ) ও ৩(ঘ)(ই) মোতাবেক বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হলে তিনি জবাব দেন এবং ব্যক্তিগত শুনানীর আবেদন করেন। সে অনুযায়ী গত ৭ নভেম্বর মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের ব্যক্তিগত শুনানী গ্রহণ করা হয়। তবে, শুনানীতে অভিযুক্ত এ কর্মকর্তার কাছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাওয়া হলে অভিযোগের বিষয়ে সন্তোষজনক কারণ বা ব্যাখ্যা উপস্থাপন করতে পারেননি বলে জানা গেছে।
আইসিটি পকল্পের সাবেক পিডি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদকে। তদন্ত করে কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দখিল করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সঠিকভাবে তদন্ত হলে জসিমকে চাকরিচ্যুত করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের অধ্যাপক। তিনি বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন।
আইসিটি প্রকল্পের (২য় পর্যায়) মাধ্যমে সারাদেশের তিন হাজার ৩৪০টি হাইস্কুলে একটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ল্যাপটপ, সাউন্ডবক্স ও মডেম- ইত্যাদি শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে। গড়ে একটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ স্থাপনে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা।
প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই থেকে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের জুন নাগাদ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনৈতিক তৎপরতা, ডিপিপি উপেক্ষা করে ক্রয়-কার্যক্রম পরিচালনা, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া, ঠিকাদারদের কারসাজি ও তাদের কথামতো কাজ না করায় পিডিকে উচিত শিক্ষা দেয়াসহ নানা কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন থমকে গেছে।
প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই সিলেট অঞ্চলের কয়েকজন ঠিকাদার ও কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার খপ্পড়ে পড়ে বেসামাল হয়ে যান জসিম উদ্দিন। ধরাকে সরা জ্ঞান করে প্রকল্পে লুটপাট শুরু করেন। দৈনিক শিক্ষায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও সেপ্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। প্রয়াত মহাপরিচালক অধ্যাপক মো: মাহাবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ জসিমের বিরুদ্ধে।
দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে নিজেকে যথারীতি নির্দোষ দাবি করেন জসিম উদ্দিন।