দেড় বছর ধরে বেতন-বোনাস পাচ্ছেন না কিন্ডারগার্টেনের ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী - দৈনিকশিক্ষা

দেড় বছর ধরে বেতন-বোনাস পাচ্ছেন না কিন্ডারগার্টেনের ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

করোনাকালের সংকটের মধ্যেও বেসরকারি চাকরিজীবীরা কমবেশি বেতন-বোনাস পাচ্ছেন। নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে আর্থিক প্রণোদনাও পেয়েছেন। কিন্তু কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারীদের খবর কেউ রাখেনি। প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেনের ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী দেড় বছর ধরে বেতন-বোনাস পাচ্ছেন না। অনেকে পেশা বদল করেও টিকে থাকার সংগ্রামে হিমশিম খাচ্ছেন। চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। শনিবার (১৭ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  দেশে প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। টিউশন ফির টাকায় এসব স্কুলের বাড়িভাড়া, নানা ধরনের বিল এবং শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। এসব স্কুলে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের সন্তানরা পড়ালেখা করে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা আর টিউশন ফি দিচ্ছেন না। ফলে গত বছরের মার্চ মাস থেকে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের বেতন-বোনাস বন্ধ হয়ে গেছে।

কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা স্কুল থেকেও খুব কম বেতন পেতেন। তাঁরা প্রাইভেট-টিউশনি করে বেতনের কয়েক গুণ টাকা আয় করতেন। করোনাকালে প্রাইভেট-টিউশনি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েন তাঁরা। এ পরিস্থিতিতে অনেকে বাধ্য হয়েছেন পেশা বদল করতে। এই শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ সবজি বিক্রি করছেন, কেউ দোকানে কর্মচারীর কাজ নিয়েছেন। বেশির ভাগ এরই মধ্যে তাঁদের পরিবার-পরিজনকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও টিকে থাকার সংগ্রামে হিমশিম খাচ্ছেন।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা

সরকার দুই দফায় নন-এমপিওর ৮০ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষক ও ২৫ হাজার ৩৮ জন কর্মচারীকে সহায়তা দিয়েছে। দুই দফার প্রতিবার শিক্ষকরা এককালীন পাঁচ হাজার টাকা আর কর্মচারীরা আড়াই হাজার টাকা পেয়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় এই টাকা অপ্রতুল হলেও কিছুটা সহায়ক হয়েছে। সম্প্রতি সরকার নিম্নজীবীদের জন্য প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেখানেও কিন্ডারগার্টেনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।  

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক হলেও তাঁরা যে এলাকায় থাকেন, সে এলাকায় শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা পান। ফলে তাঁরা ওই এলাকায় নিচু ধরনের কোনো কাজও করতে পারছেন না। আবার কারো কাছে হাতও পাততে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে কঠিন সংকটে পড়েছেন তাঁরা।

রাজধানীর কালাচাঁদপুরে কনফিডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মো. শাওন আহমেদ। তিনি স্কুলটি টিকিয়ে রাখতে সম্প্রতি মেস ভাড়া দিয়েছেন। যা আয় হয়, তা দিয়ে বাড়িভাড়া মেটাচ্ছেন। শাওন আহমেদ বলেন, ‘আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। এত দিন এই স্কুলটি নিয়েই ছিলাম। আমার স্কুলে শিক্ষার্থী ছিল ৩০০ জন। গত বছরের ফেব্রুয়ারির পর কোনো অভিভাবক আর টিউশন ফি দিচ্ছেন না। স্কুলটি টিকিয়ে রাখতে আমি মেস ভাড়া দিয়েছি। আর স্কুলের সামনে এখন আম বিক্রি করছি। এসব দিয়ে আমার চলে গেলেও শিক্ষকরা ভীষণ কষ্টে আছেন। তাঁদের তো টাকা-পয়সা দিতে পারছি না। অনেকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে টিকে থাকার কঠিন সংগ্রাম করছেন। তবে শিক্ষকদের শিক্ষকতা ছাড়া অন্য পেশায় মনোযোগী হওয়া কঠিন। আমি নিজে প্রিন্টিং ব্যবসায় মনোযোগী হতে চেষ্টা করে পারিনি। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি।’

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

মগবাজারে মডার্ন চাইল্ডস এডুকেয়ারে শিক্ষকতা করেন থমাস হাওলাদার। তিনি এখন স্কুলের সামনে একটি ভ্যানে পেঁয়াজ-রসুন বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। এলাকার সবাই শিক্ষক হিসেবে মর্যাদা দেন। কিন্তু বেঁচে থাকার অন্য কোনো উপায় না পেয়ে এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছি। তবে শিক্ষকতা ছাড়া অন্য কিছুতে মন বসানো কঠিন।’

রাজধানীর মাটিকাটায় স্কাইলার্ক মডেল স্কুলের অধ্যক্ষ মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘গত বছর স্কুল বন্ধের আগে আমার শিক্ষার্থী ছিল ৪৭৫ জন। শিক্ষক-কর্মচারী ছিলেন ৪১ জন। টিউশন ফি দিয়ে সুন্দরভাবে স্কুলটি পরিচালনা করে আসছিলাম। অথচ গত বছরের মার্চ থেকে কাউকে আর বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাড়িওয়ালাকে কিছু টাকা দিয়ে এখনো স্কুলটি ধরে রেখেছি। এর মধ্যে কয়েক লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছে। এভাবে আর পারছি না!’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার স্কুলের কিছু শিক্ষক তাঁদের পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাসাও ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁরা এখন বিভিন্ন দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন। রাতে এসে থাকেন স্কুলের এক রুমে। মহিলা শিক্ষকরা খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছেন। অনেক সময় এসে বলেন, স্যার আজ সারা দিন কিছু খাইনি। এক-দুই কেজি চালের জন্য কান্নাকাটি করেন। যত দূর পেরেছি সহায়তা করেছি। কিন্তু এখন আমি নিজেই অসহায় হয়ে পড়েছি।’

বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কিছু বলার ভাষা নেই। আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্কুল বন্ধের খবর আসছে। যেসব কিন্ডারগার্টেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত, তাদের জায়গা কম লাগায় বাড়িভাড়াও কম। কিন্তু যেসব স্কুল এসএসসি বা এইচএসসি পর্যন্ত, তাদের বাড়িভাড়া অনেক বেশি। অনেক শিক্ষক বা পরিচালক আছেন, যাঁরা ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে স্কুল চালাচ্ছেন। তাঁদের তো অন্য পেশায় যাওয়ার উপায় নেই! এত দিন তাঁরা সহায়-সম্বল বিক্রি করে বাড়িভাড়া চালিয়েছেন। এখন আর পারছেন না।’

তিনি আরো বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেন না থাকলে সরকারকে আরো ৮০ লাখ শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব নিতে হতো। আরো স্কুল করার প্রয়োজন হতো। মাসে মাসে শিক্ষকদের কোটি কোটি টাকা বেতন দিতে হতো। করোনাকালে সরকার আমাদের ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর কথা একবারও ভাবল না! আমার অনুরোধ, যদি আমাদের ন্যূনতম অবদানও থাকে, তাহলে দ্রুত আমাদের শিক্ষকদের প্রণোদনা দিন, বেঁচে থাকতে তাঁদের সহায়তা করুন। উদ্যোক্তাদের বিনা সুদে বা স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করুন।’

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036680698394775