নার্সিং শিক্ষাখাতে অব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বড় বাধা দুর্নীতি - দৈনিকশিক্ষা

নার্সিং শিক্ষাখাতে অব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বড় বাধা দুর্নীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নার্সিং শিক্ষা খাতে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, যেন ডুবুডুবুভাব। এ খাতের উন্নয়নে বড় বাধা দুর্নীতি। প্রশাসনের নিচ থেকে শীর্ষ প্রতিটি পদে ঘুষ এখন ‘ওপেন সিক্রেটে’ পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পদ বিন্যাস না হওয়ায় নার্সিং শিক্ষা খাতের উন্নয়নে কার্যকরী অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

জানা গেছে, অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয় প্রতি পদে পদে ঘুষ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছে জিন্মি হয়ে পড়েছে। আর এই সিন্ডিকেটের কারণে পদ বিন্যাস হচ্ছে না। অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হলেও প্রেষণে (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ অধিদপ্তর চালানো হয়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদ শূন্য। এছাড়া নার্সিং কলেজগুলোতেও চরম অব্যবস্থাপনা রয়েছে। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, লেকচারাল কোন পদই সৃষ্টি হয়নি। ফলে নার্সিং শিক্ষা খাতের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। অথচ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নার্সিং শিক্ষা খাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চিকিত্সা সেবার বড় অবদান রাখে নার্সিং শিক্ষা খাত। শিক্ষা দিয়েই সব কিছু শুরু হয়। একজন নার্স তৈরি করতে গেলে শিক্ষা খাত গুরুত্বপূর্ণ হলেও নজিরবিহীন অব্যবস্থা বিরাজ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞরা।

২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নার্সিং শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে ৮টি নার্সিং ইনস্টিটিউটকে নার্সিং কলেজে রূপান্তর করেন। এন্ট্রি পয়েন্টে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণী পদমর্যাদা দেন। কিন্তু নার্সিং শিক্ষা খাতে কোন অগ্রগতি আসেনি। কলেজগুলোতে পদ বিন্যাস হয়নি। কলেজগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের দিয়ে প্রেষণে চালানো হচ্ছে। তারা হলেন সিনিয়র স্টাফ নার্স। শুধু তাই নয়, প্রেষণে (চলতি দায়িত্বে) ডাইরেক্টর পর্যন্ত রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও পদ বিন্যাস কেন হয়নি, তার সদুত্তর কেউ দিতে পারছেন না। নাসিং অধিদপ্তর মহাপরিচালক পর্যন্ত বসেন। কিন্তু মনে হয় যেন কেরানী আর প্রশাসন দিয়ে চলছে এই অধিদপ্তর। কয়েক শ’ সিনিয়র স্টাফ নার্স আছেন যারা দেশ বিদেশের উচ্চতর ডিগ্রিধারী। পদ বিন্যাস না করার কারণে তারা সিনিয়র স্টাফ নার্সই থেকে যাচ্ছেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নার্সিং কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, তাদের কারো চাকরি ১ মাস, ৬ মাস বা ১ বছর আছেন। এত অভিজ্ঞতার পরও তাদের কোন মূল্যায়ন করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে বসানো হয়নি। বসানো হবে কিভাবে, পদই তো সৃষ্টি করা হয়নি। নার্সিং শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপকদের শিক্ষা দেওয়ার কথা। এমন অন্যান্য নার্সিং কলেজেও খোঁজ নিয়ে জানা জানা, সেখানেও চরম অব্যবস্থা চলছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে চেষ্টা হচ্ছে না।

জানা গেছে, নার্সিং শিক্ষা খাতে পদ বিন্যাসের বিষয়টি ফাইলবন্দি অবস্থায় আছে। বেশ কয়েক বার ফাইল চালাচালিও হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ফেরত পাঠায়। বর্তমানে এ সংক্রান্ত ফাইলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।

নার্সিং অব্যবস্থানার কারণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা চান না নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়ন হোক, সেখানে পদ সৃষ্টি হোক। এই শিক্ষার মান উন্নয়নে অনেক কর্মসূচি আছে, এসব কর্মসূচিতে অযোগ্যদের পাঠানো হয়। কাদের পাঠানো হবে সেটা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এক যুগের অধিক কাল একই স্থানে আছেন, তারা দুর্নীতির পাড়ার করছেন। এমন কোন ক্ষমতা নেই যে তাদের কেউ স্পর্শ করতে পারে না। তারা দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে আসছে। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার স্বার্থে তারা প্রশাসনের কেরানী দিয়ে নার্সিং অধিদপ্তরের অধিকাংশ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয় করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে নার্সিংয়ে শিক্ষার কোন লোককে রাখা হয়নি। রাখা হয়েছে কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে। যারা শিক্ষার মান উন্নয়নে অদক্ষ তাদের অনেককে এই কমিটিতে রাখা হয়েছে। প্রশিক্ষণের নামে সিংহভাগ টাকা আত্মসাত্ হয়ে যায়। এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে অধিদপ্তর করার পরেও শিক্ষার মান উন্নয়নে কোন অগ্রগতি আসছে না। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে সহকারী পরিচালকের পদ তালিকা করা হয়েছে। এতেও দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এছাড়া নার্সিং অধিদপ্তরের একজনের কর্মকর্তার পদ হলো ময়মনসিংহ। তিনি এখানে প্রেষণে আছেন দীর্ঘ ২২ বছর ধরে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়ন করবোই। এক্ষেত্রে এই দুর্নীতি-অয়িয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী জানান, ইনস্টিটিউটের জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহী নার্সিং কলেজ। কারিকুলাম আছে, ভবন তথা অবকাঠামো, আছে শিক্ষার্থীও। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক ও প্রদর্শকসহ অন্যান্য জনবলের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। খুঁড়িয়ে চলা অর্থাত্ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা স্বীকার করেছেন।

বরিশাল অফিস জানায়, বরিশাল নার্সিং কলেজের অনুমোদনের ৭ বছর পার হলেও কার্যক্রম চলছে নার্সিং ইন্সটিটিউটের লোকবল দ্বারা।

নার্সিং কলেজের শিক্ষকরা জানান, বিএসসি নার্সিং ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াফারী মিলিয়ে এ কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। এ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ক্লিনিক্যাল শিক্ষক নেই। শিক্ষার্থীরা জানান ক্লিনিক্যাল শিক্ষক না থাকায় তারা এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারছেন না। ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর অনুকলে কমপক্ষে ২০ জন ক্লিনিক্যাল শিক্ষক প্রয়োজন। বরিশাল নার্সিং কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাকসুদা বেগম জানান, নার্সিং কলেজের অগ্রানোগ্রাম দীর্ঘদিন সংস্থাপন মন্ত্রনালয় রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ অগ্রানোগ্রাম পাস হলে এ নার্সিং কলেজের কোনো সংকট থাকবে না।

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, গত ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে চট্টগ্রাম নার্সিং ইনষ্টিটিউটকে কলেজে উন্নীত করেছে সরকার। কিন্তু এখনো পর্যন্ত শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবলের অর্গানোগ্রাম অনুমোদন মেলেনি। ফলে কলেজের শিক্ষকরা নার্সিং ইনস্পেক্টর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে না দক্ষ জনবল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে কলেজে ২৭ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছে। কলেজে শিক্ষার্থী অনুপাতে বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। কলেজের অধ্যক্ষ মাকসুদা বেগম বলেন, বর্তমান শিক্ষক সংকটে দক্ষ জনবল সৃষ্টি ব্যাহত হচ্ছে।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054340362548828