ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখার সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসের বিরুদ্ধে। বহিষ্কৃত দুই নেতার হল ছাড়ার নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাদের মধ্যে দেখা গেছে গড়িমসি। এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই হলে থাকছেন সাংবাদিক হেনস্থার দায়ে বহিষ্কৃত ও হল ছাড়ার নির্দেশপ্রাপ্ত সেই দুই নেতা। নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাহসান ও তাপসের গড়িমসির কারণে বহিষ্কার ও হল ছাড়ার বিষয়টিকে তারা ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ঈদের পরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভা শেষে বের হওয়ার পথে প্রটোকল দেয়া নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে মেহেদী হাসানের নির্দেশে ঢাকা টাইমসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক নুর হোসাইন সাজ্জাদকে লাঞ্ছিত করে রায়হান রনি। এ ঘটনায় মদ নিয়ে সংঘর্ষের জেরে এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বহিষ্কৃত সভাপতি মেহেদী হাসানকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারন সম্পাদক গোলাম রব্বানী। একই ঘটনায় মেহেদীর কাজে সহযোগিতা করার দায়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রায়হান রনিকে সাময়িক বহিষ্কার ও হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মাধ্যমে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেয়া হয়।
এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলকে অভিযুক্ত মেহেদী হাসানের রুমে গিয়ে ছাত্রলীগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে বলেন। একই সঙ্গে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রায়হান রনিকে বহিষ্কার ও হল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা দেন তিনি। হল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে মেহেদীকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে বলা হয় এবং ছাত্রলীগের আসন্ন কমিটিতে এ ধরনের লোকদের ঠাঁই হবে না বলে একমত হন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
তবে এখনও হল ছাড়েননি মেহেদী ও রনি। হলসূত্রে জানা যায়, তারা এখনও হলে আছেন। এর মধ্যে মেহেদীর ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় তিনি হলে অবৈধ। আর রায়হানের বহিষ্কারের ব্যাপারেও এখনও কোন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়নি ছাত্রলীগ। হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কথা এখনও তাদের জানাননি।
এ বিষয়ে এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, নির্দেশনা ছিল। তবে আমার সাধারণ সম্পাদক (মেহেদী হাসান তাপস) শোভন ভাইয়ের রাজনীতি করে। শোভন ভাই বললে সে শুনবে, রাব্বানী ভাই বললে শুনবে না। আমার একার পক্ষে তো এ নির্দেশ পালন করা সম্ভব না। বিষয়টি আমি রাব্বানী ভাইকে জানিয়েছি। হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপসের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, মেহেদী হাসানসহ অবৈধ সকলকে হল ত্যাগ করার ব্যাপারে ছাত্রলীগ পদক্ষেপ নিবে। তবে শোক দিবসের কর্মসূচির কারণে ব্যস্ত থাকায় আমরা এখনও তার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারিনি।
এর আগে ১৪ আগস্টের ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। কারণ আমাদের এক সাংবাদিক ভাইকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। এই ঘটনায় যারা অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করি ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।
গোলাম রাব্বানী বলেন, ঘটনাটি অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। সাংবাদিকরা আমাদের বন্ধু, শত্রু নয়। এই ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি আরও বলেন, মেহেদী হল ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা। তাই তাকে হল থেকে বের হয়ে যেতে হবে, নইলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবো। সে বের হতে না চাইলে প্রয়োজনে শাহবাগ থানা থেকে পুলিশ এনে তাকে ধরিয়ে দেয়া হবে। আর রনিও হলে থাকতে পারবে না। তাকেও আজকের মধ্যেই হল থেকে বের হতে হবে। যদি সে এ বিষয়ে অনুতপ্ত হয়, তবেই আমরা তার বিষয়ে বিবেচনা করে দেখব।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এ প্রতিবেদককে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করতে বলেন। আর সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমি বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। এ বিষয়ে হল প্রভোস্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। তিনি বলেন, দুজনের (অভিযুক্ত) সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। আমি তাদের বলেছি, ‘লিভ দ্যা ক্যাম্পাস’। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ শিক্ষার্থী না হলে তো তার হলে থাকার কোন সুযোগই নেই। আমরা বিষয়টি ভালোভাবেই দেখছি। এখন ইদের ছুটি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরপরই আমরা তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।