নোবিপ্রবিতে দুজন শিক্ষকেও চলছে বিভাগ - দৈনিকশিক্ষা

নোবিপ্রবিতে দুজন শিক্ষকেও চলছে বিভাগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগ চালু হয় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে। বর্তমানে বিভাগটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০। যদিও তাদের পাঠদানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন। একই শিক্ষাবর্ষে চালু হওয়া সমাজকর্ম বিভাগেও প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন।

শুধু আইন ও সমাজকর্ম বিভাগ নয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকের বেশি বিভাগেই শিক্ষক সংকট প্রকট। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২৮টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউট চালু আছে। এর মধ্যে ১৪টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটই খোলা হয়েছে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক অহিদুজ্জামানের মেয়াদে। এসব বিভাগের প্রায় সবক’টিতেই শিক্ষক সংকট চলছে।

জানা গেছে, পরিকল্পনা ছাড়াই দেদার বিভাগ খুলে অনিয়ম করে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের অভিযোগ উঠলে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষকের সংকট আরো প্রকট হচ্ছে।

শিক্ষক সংকট প্রসঙ্গে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, সাবেক উপাচার্যের মেয়াদের শেষ সময়ে শিক্ষক-কর্মকর্তার নিয়োগ নিয়ে বেশকিছু আপত্তি থাকায় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে নির্দেশনা অমান্য করে নিয়োগ দেয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে সব নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। গত ১০ মাসে কোনো নিয়োগ হয়নি। উল্টো অনেক শিক্ষক শিক্ষাছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেছেন। ফলে শিক্ষক সংকট আরো তীব্র হয়েছে। এছাড়া স্থগিতাদেশের কারণে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া প্রায় ৬০ জন শিক্ষককেও স্থায়ী করা যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সংকট সবচেয়ে বেশি উপাচার্য অহিদুজ্জামানের সময়ে খোলা বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে। দুজন শিক্ষক নিয়ে চলা আইন ও তিনজন শিক্ষক নিয়ে চলা সমাজকর্ম বিভাগ তারই সময় খোলা হয়েছিল। তার মেয়াদে খোলা অন্যান্য বিভাগের মধ্যে প্রাণিবিজ্ঞান ও শিক্ষা প্রশাসন বিভাগে চারজন করে শিক্ষক রয়েছেন। ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সে শিক্ষক আছেন পাঁচজন। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, শিক্ষা, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, সমাজবিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে মাত্র ছয়জন করে শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে সমাজবিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে একজন করে শিক্ষক ছুটিতে আছেন। ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, স্ট্যাটিস্টিকস ও বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার বিভাগে সাতজন করে শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস ও বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার বিভাগে একজন করে এবং স্ট্যাটিস্টিকস বিভাগে দুজন শিক্ষক ছুটিতে রয়েছেন।

শিগগিরই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করলে বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা আরো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশাহ মিয়া। তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষক না থাকায় নোয়াখালীতে কর্মরত জুডিশিয়াল অফিসারসহ খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আগে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া না হলে বিভাগের কার্যক্রম হুমকিতে পড়বে। এছাড়া আমাদের এখানে শ্রেণিকক্ষ সংকটও প্রকট।

প্রয়োজনের তুলনায় কম শিক্ষক থাকায় কর্মরত শিক্ষকদের ওপর টপিক লোডও অনেক বেশি বলে জানান সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক সিফাত-ই-মান্না। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভাগে মাত্র তিনজন শিক্ষক। দুটি ব্যাচে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে এ শিক্ষক খুবই কম। আসলে চাপ বেশি থাকলে গুণগত পাঠদান বাধাগ্রস্ত হবে—এটাই স্বাভাবিক।

নোবিপ্রবি শিক্ষকদের অভিযোগ, সাবেক উপাচার্য অহিদুজ্জামানের অনিয়মের খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের। শুধু নতুন শিক্ষক নিয়োগ নয়; অস্থায়ী শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ীকরণও বন্ধ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী পদে প্রায় ৬২ জন শিক্ষক নিযুক্ত রয়েছেন। শিক্ষক নিয়োগ বন্ধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে তারা স্থায়ী হতে পারছেন না। শিক্ষকতার মতো মুক্ত মস্তিষ্ক চর্চার পেশায় নিযুক্ত থেকেও তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছেন। অথচ এর দায়ভার মোটেও তাদের নয়। প্রশাসনের কোনো অপরাধ থেকে থাকলে তা প্রশাসনের নিজস্ব দায়। আমরা আশা করি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। মানসিক চাপ নিয়ে সঠিকভাবে পাঠদান ও গবেষণা চালু রাখা খুবই কষ্টকর।

গত বছরের শুরুর দিকে তৎকালীন উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ফিরিস্তি তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযোগপত্রে প্রয়োজনের অধিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, নিকটাত্মীয়দের নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়।

ওই অভিযোগপত্রে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে বলা হয়, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ইউজিসির প্রজ্ঞাপনকে আমলে না নিয়ে অনুমোদনহীন পদে ১৪ জন শিক্ষক ও ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। এছাড়া বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগে বেসরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত একজন সহযোগী অধ্যাপককে অধ্যাপক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন, যা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। উপাচার্যের মেয়াদকালে অ্যাডহক বা শিক্ষা ছুটির বিপরীতে নিয়োগের বাইরে অনুমোদনহীন পদে ১৯ জন শিক্ষককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এছাড়া ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দুজন সহকারী অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ দুই পদে আবেদনের সময়সীমা ছিল ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যদিও আবেদনের ডেডলাইন শেষ হওয়ার আগেই তার আশীর্বাদপুষ্ট দুজন শিক্ষককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করেন।

নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৮ এপ্রিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ আলী রেজা স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারী পদে যাবতীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।’

ওই স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার জন্য সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি সত্য। নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে অবহিত করা হয়েছে।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068318843841553