`পাঁচ লাখ এমপিওভুক্তের ঐক্য যদি রয়, শিক্ষা জাতীয়করণ হবে নিশ্চয়’ - দৈনিকশিক্ষা

`পাঁচ লাখ এমপিওভুক্তের ঐক্য যদি রয়, শিক্ষা জাতীয়করণ হবে নিশ্চয়’

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ |

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর কল্যাণ-অবসর সুবিধার জন্য অতিরিক্ত ৪ শতাংশ টাকা কর্তনের সরকারি সিদ্ধান্তে যখন সারাদেশে এমপিওভুক্ত লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কারো ডাকের অপেক্ষায় না থেকে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন, তখন ‘আকাশের লক্ষ তারার মতো নেতৃত্বের অসংখ্যধারা’য় বিভক্ত বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনগুলোও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়। ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ এই অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেবার সিদ্ধান্ত। আগেই কাটা হচ্ছিল ৬ শতাংশ। জাতীয় নির্বাচনী হাওয়ার এ সময়ে সরকারের বুঝতে বাকী থাকে নি গ্রাম-গঞ্জের লাখ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর পেটেলাথি দিয়ে লাভ নেই। শুভবুদ্ধির জয় হয়। এখন ৪ শতাংশ কর্তনের সিদ্ধান্ত স্থগিতের পথে সরকার। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে এমপিওভুক্ত লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ ও সোচ্চার অবস্থানের জন্যই। এতে বোঝা গেলো, ন্যায়সংগত দাবি পূরণের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীগণ কারো ডাকের অপেক্ষায় থাকেন না।

আমদের সবারই জানা আছে, মানুষের মৌলিক অধিকার শিক্ষাক্ষেত্রে সাংবিধানিক দায় হলো সবার সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ। অথচ পক্ষপাতদূষ্ট ও খন্ডিত জাতীয়করণের দোলাচালে চলছে অস্থিরতা। জাতীয়করণের দাবিতে কলেজ শিক্ষকের মৃত্যু, আদালতে রিট বা এমপিওভুক্তির জন্য অনশন কাম্য নয়। মানুষ গড়ার কারিগরকে এমপিওভুক্তির নামে দেওয়া হয় কলঙ্কজনক ‘অনুদান’। কাজেই, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষকদের পেশাগত বঞ্চনার অবসানে দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি।

প্রবল জনশ্রুতি বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছে, ২০১৯’র মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হবে। কিন্তু এমন আকাক্সক্ষার প্রনিধানযোগ্য ভিত্তি কোথায়? অন্যদিকে শিক্ষকের জীবনমানের উন্নতি ছাড়া শিক্ষার উন্নয়ন অসম্ভব। এজন্যই সর্বসন্মত জাতীয় গণদাবি ‘এক ঘোষণায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’। কোনো কোনো আমলা, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অনেকের বিশ্লেষণেই পাওয়া যায় ‘শিক্ষা জাতীয়করণে’র জন্য অর্থের চেয়ে নীতি ও সুস্পষ্ট ঘোষণাই বেশি জরুরি।

বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশে মানুষগড়ার কারিগরদের নিয়ে কারো যেন টেনশন নেই! বিশেষতঃ এমপিওভুক্ত সবার যেন দ্রুত পরিবর্তনশীল চলমান বাস্তবতার সঙ্গে ছন্দপতন ঘটছে প্রতিনিয়ত। এমপিওভুক্তগণ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ও উৎসব ভাতা পান না। তারা পদোন্নতি, সেচ্ছাঅবসর, বদলি সুবিধাসহ অসংখ্য বঞ্চনার শিকার। এমপিওভুক্তগণ পান নি বৈশাখীভাতা ও বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সুবিধা! নতুন বেতনস্কেলে সরকারিগণ ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা পেয়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু এমপিওভুক্তগণের ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অনিশ্চয়তায় অন্ধকারেই রয়েছে। এমপিওভুক্ত কেউই পদমর্যাদা অনুযায়ী বাড়িভাড়া পান না। বরং বাড়িভাড়া পান ১ হাজার টাকা, চিকিৎসাভাতা ৫শ টাকা যা নিতান্তই অপ্রতুল। একটি ‘জাতীয়লজ্জা’ বেসরকারি শিক্ষকবৃন্দই সম্ভবতঃ বিশ্বের একমাত্র পেশাজীবী যারা সিকিভাগ (২৫ শতাংশ) উৎসবভাতা পান।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমবেত হওয়া সব পেশাজীবীরই মৌলিক অধিকার কিন্তু টিকে থাকা ও নিজেকে মেলে ধরবার সংগ্রামে ক্লান্ত মানুষ গড়ার কারিগরদের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত  গ্লানিকর। অভিন্ন সিলেবাসে পাঠদানকারী শিক্ষকদের প্রায় ১০০ শতাংশ বেসরকারি! এমন পটভূমিতে শিক্ষকসমাজের অন্যতম চাওয়া: বিচ্ছিন্ন ও খন্ডিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পরিবর্তে স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে ‘এক ঘোষণায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’। তথাকথিত ‘শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো’র কল্পনা বাদ দিয়ে যা আছে, যেমন আছে তাকে অব্যহত রেখে ক্রমশ তার মানোন্নয়ন, ভিত্তি সুদৃঢ়করণ বেশি জরুরি। কেননা, ‘ঢেলে সাজানো’র কথা বলে শুধু ঢালা হয় সাজানো হয় না!

বস্তুতঃ ‘এতো ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গ ভরা’ উক্তির অনুপম দৃষ্টান্ত হলো: বেসরকারি শিক্ষকদের অনৈক্য। সম্ভবতঃ পেশাগত দাবিতে সবচেয়ে অনৈক্যের খেশারত দিচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষকগণ। দুঃখজনক সত্য, শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ না হবার জন্য দায়ী কেন্দ্রে শিক্ষক সংগঠনগুলোর দলীয় লেজুড়বৃত্তি। ফলে কোনো দাবির পেছনে যৌক্তিকতার চেয়ে বিবেচনায় থাকে দাবিটি কারা করেছে ? সঙ্গে চলে আসে দু’ধরনের ব্যাখ্যা ও অবস্থান। তখন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো হয়ে যায় রাজনৈতিক। তবে আশার কথা বর্তমানে শিক্ষক সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘এক ঘোষণায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’ দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় অভিন্ন। কেননা, ‘দল যার যার শিক্ষকস্বার্থে সব শিক্ষক একাকার’। শিক্ষকতার মহানব্রতের গর্বিত অংশীদার হিসেবে আমি ব্যক্তিগত আস্থার অবস্থান থেকে মনে করি, পেশাগত প্রাণের দাবি আদায়ে নেতিবাচক কর্মসূচি বা কোনো রূঢ় বাস্তবতার দিকে আমাদের নেতৃবৃন্দ যাবেন না বরং সবার ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ: ‘পাঁচ লাখ এমপিওভুক্তের ঐক্য যদি রয়, শিক্ষা জাতীয়করণ হবে নিশ্চয়’। তবেই এমপিওভুক্তদের প্রত্যাশিত বন্দরে পৌঁছা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ্। অন্যথায় অনৈক্যের অর্জন হবে ‘মহা আড়ম্বরপূর্ণ শূন্য’।

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ: কাপাসিয়া, গাজীপুর।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়]

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040979385375977