উচ্চ আদালতের রায় থাকায় সংসদ সদস্যেরা (এমপি) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারেন না। তাতে কী? এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ঠিকই নিজের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও কাছের লোকদের বসিয়েছেন ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। অভিযোগ রয়েছে, নান্দাইল উপজেলার ৭৫টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাঁর মনোনীত ব্যক্তি। শুধু তা-ই নয়, এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদ এমপি পরিবারের সদস্যদের দখলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুশুল্লী কলেজ এবং নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি আছেন এমপি তুহিনের মা জাহানারা খানম। এমপির স্ত্রী জেভে নাইয়ার খান খুররম খান চৌধুরী কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি, আপন মামা এ এইচ এম আব্দুল হামিদ সুমুর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি এবং ভাগনি জামাই ও ব্যক্তিগত সহকারী রিয়াজুল ইসলাম মন্ডল রায়পাশা উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
এ ছাড়া গার্লস স্কুল, আনোয়ার খান চৌধুরী মহিলা কলেজ, খুররম খান চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়, মুশুল্লী উচ্চবিদ্যালয়, জেবি উচ্চবিদ্যালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে আছেন এমপির ব্যবসায়িক অংশীদারের বাবাসহ ঘনিষ্টজনেরা।
এমপির ইচ্ছায় পরিচালনা কমিটি হয় বলে স্বীকারও করেছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানেরা।
নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক বলেন, ‘বিদ্যালয়ে মামলা চলমান থাকায় এমপি সাহেবকে ধরে উনার মাকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি বানিয়েছি। উনি আবার মুশুল্লী কলেজ পরিচালনা কমিটিরও সভাপতি।’
সুমুর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জ্যোতীষ চন্দ্র সাহা রায় বলেন, ‘এমপি সাহেবের ডিও নিয়ে উনার মামা এ এইচ এম আব্দুল হামিদকে সভাপতি করা হয়েছে। উনি যেহেতু স্থানীয় এমপি, তাঁকে প্রাধান্য দিয়েই আমাদের সবকিছু করতে হয়।’
তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এক মেয়াদে আমি নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলাম। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার প্রতিনিধিদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হই। এখন এমপি সাহেব তাঁর মাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। দু-একটি প্রতিষ্ঠানে নয়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এমপির লোকজন। আমার প্রশ্ন, এমপির লোকজন ছাড়া কি আর যোগ্য লোক নেই?’
আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর হাইকোর্টের রায়ে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হওয়ার সুযোগ বন্ধ হলে তিনি সারা উপজেলার বেসরকারি ৭৫টি প্রতিষ্ঠানে তাঁর স্বজনদের দায়িত্বে বসিয়েছেন বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম।
অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার পরিবারের ১০ জন কেন, ২০ জন যোগ্যতাসম্পন্ন সভাপতি হলে আপনার সমস্যা কী? মামলায় জর্জর প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর স্বার্থেই এটা করা হয়েছে।’
বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. গাজী হাসান কামাল বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা নির্বাচনের মাধ্যমে অথবা অ্যাডহক কমিটি বোর্ডে জমা দিলে তা অনুমোদন করে দেওয়া হয়। সেখানে কে এমপির স্বজন, তা দেখারও সুযোগ নেই। যেহেতু এ বিষয়ে কথা উঠেছে, আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’