পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য দায়ী সাত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা - দৈনিকশিক্ষা

পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য দায়ী সাত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একজন সদস্যসহ সাত কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে সরকারের করা তদন্ত কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সুপারিশ করেছে কমিটি। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা সবাই বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক। পাঠ্যবই সম্পর্কে নূ্ন্যতম ধারণা না থাকলেও তারা নানা ফন্দিফিকির আর তদবির করে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে প্রেষণে পদায়ন বাগিয়েছেন কয়েকবছর আগে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্রে এসব খবর জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন মঙ্গলবার বলেন, দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে, শিক্ষাজীবনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা বোর্ডের সচিব মো: ইমরুল হাসানের বদলির ফাইল উঠলেও মন্ত্রণালয়ের সরকারি কলেজ  শাখার একজন যুগ্ম-সচিব ওই ফাইলটি স্থগিত রেখেছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যুগ্ম-সচিবের নিজ জেলা সিলেট।

চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন ধরনের ভুলভ্রান্তি নিয়ে গত জানুয়ারিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। এই কমিটি শুধু ভুলের বিষয়টি তদন্ত করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। কিন্তু প্রতিবেদনে কী আছে, কারা জড়িত, কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন বইয়ের ভুলের জন্য পৃথকভাবে এনসিটিবির সাত কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো কর্মকর্তাকে একাধিক বইয়ের ভুলের জন্যও দায়ী করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কবি কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় ভুল পঙ্ক্তির বিন্যাস ও শব্দের পরিবর্তনজনিত ভুলের জন্য এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক) অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান সরকার ও সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান সরকার  বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবদেনে কী আছে আমি জানি না, তবে পাঠ্যপুস্তকে ভুলভ্রান্তির বিষয়ে আমার সরাসরি সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই।’

তৃতীয় শ্রেণির হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে ভুলভাবে নীতিবাক্য মুদ্রণের জন্য এনসিটিবির সম্পাদক গৌরাঙ্গ লাল সরকার ও প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের নাম সায়েরা খাতুনের পরিবর্তে ভুলভাবে সায়েরা বেগম ছাপানোর জন্য এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ মো. মোসলেহ উদ্দিন সরকার ও গৌরাঙ্গ লাল সরকার দায়ী। আর ষষ্ঠ শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে আরবি বানান ভুলের জন্য বিশেষজ্ঞ রেবেকা সুলতানা দায়ী। এ ছাড়া অষ্টম শ্রেণির বাংলা বই ‘সাহিত্য কণিকা’য় ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ পাঠটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ অনুলিখন-পরিমার্জন সঠিকভাবে না করার জন্য বিশেষজ্ঞ হাননান সরকার দায়ী। দায়ী এই সাত কর্মকর্তার মধ্যে প্রীতিশ কুমার সরকার ও লানা হুমায়রা খানকে ইতিমধ্যে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে এনসিটিবির সচিব ইমরুল হাসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তাঁকে অবিলম্বে বদলি করার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির পর্যবেক্ষণ

তদন্ত কমিটি এনসিটিবি সম্পর্কে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। কমিটি বলেছে, সংস্থাটির অধিকাংশ কর্মকর্তা গড়ে পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে এবং সর্বোচ্চ ২০ বছর পর্যন্ত কর্মরত থাকলেও তাঁদের পেশাগত দক্ষতার অভাব রয়েছে। উপরন্তু দীর্ঘদিন থাকায় অভিজ্ঞতার পরিবর্তে এক ধরনের ‘ঔদ্ধত্য’ ভাব সৃষ্টি হয়েছে, যা সুষ্ঠু কাজের অন্তরায়। এ ছাড়া অধিকাংশ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নন, যা নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের অন্তরায়। সম্পাদনার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষায়িত কাজের যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাব রয়েছে। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক অনুবিভাগের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা দরপত্রপ্রক্রিয়া ও উৎপাদন পর্যায়ে প্রেস তদারকি, কাগজের মান নিয়ন্ত্রণ ও বিতরণ কাজে বেশি সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এমনকি সম্পাদনা শাখার কর্মকর্তারাও এ ধরনের কাজে জড়িয়ে যাচ্ছেন। এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণকাজে সহায়ক লোকের অভাব রয়েছে বলেও কমিটির পর্যবেক্ষণ।

একগুচ্ছ সুপারিশ

তদন্ত কমিটির সুপারিশের মধ্যে রয়েছে এনসিটিবিতে টানা পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় পর্যন্ত প্রেষণে থাকা কর্মকর্তাদের দ্রুত বদলি করা, মন্ত্রণালয় গঠিত একটি উপযুক্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এনসিটিবির সদস্য, প্রধান সম্পাদক, সম্পাদক, ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ, বিষয় বিশেষজ্ঞ এবং গবেষণা কর্মকর্তা নিয়োগ পদায়ন করা। বিশেষ কিছু বিষয়ের জন্য বিষয়ওয়ারি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা, সংস্থাটিতে সদস্য পদে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে বলেছে কমিটি।

তিন মাসেও ভুলের সংশোধনী নেই

এদিকে শিক্ষাবর্ষের তিন মাস হয়ে গেলেও এখনো পাঠ্যবইয়ের ভুলের সংশোধনী দিতে পারেনি এনসিটিবি।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা গত সোমবার  বলেন, তাঁরা ভুলের সংশোধনী ঠিক করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জেনেছেন এ সপ্তাহের মধ্যেই সংশোধনী চূড়ান্ত হবে।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003371000289917