পানি খেতে হলেও যেতে হয় ক্যাম্পাসের বাইরে - দৈনিকশিক্ষা

পানি খেতে হলেও যেতে হয় ক্যাম্পাসের বাইরে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো ক্যান্টিন নেই। পানি খেতে হলেও যেতে হয় ক্যাম্পাসের বাইরে। নেই পর্যাপ্ত ওয়াশরুমের ব্যবস্থা। পরিবহনব্যবস্থাও নামমাত্র। শিক্ষার্থী অনুপাতে গ্রন্থাগারে বসে লেখাপড়া করার সুযোগ খুবই কম।

পর্যাপ্ত বইও নেই। বিভাগগুলোর সেমিনার হলের অবস্থাও একই রকম। শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার ছাত্রী এসব সংকটের বড় ভুক্তভোগী। শুক্রবার (১৭ মে) দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও তানজিদ বসুনিয়া।   

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত রবি ও সোমবার সরেজমিনে তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে কোথাও ক্যান্টিন পাওয়া যায়নি। এমনকি সুপেয় পানির ব্যবস্থাও দেখা গেল না। যারা নিয়মিত বোতলজাত পানি কিনে খেতে পারে না তাদের টং দোকানই ভরসা। অনিরাপদ পানি খেয়ে অনেকে প্রায়ই পেটের পীড়ায় ভোগে।

শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ক্যান্টিনের জন্য তাঁরা বিভিন্ন সময় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধু আশ্বাসেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাঁদের।

স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত মাহমুদ বলেন, ‘এত বড় কলেজে এক গ্লাস পানি খাওয়ারও ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় ক্লাস শেষে পানির পিপাসা পেলে গেটের (ক্যাম্পাস) বাইরে যেতে হয়। আমাদের দাবি, অন্তত ভ্রাম্যমাণ ক্যান্টিন হলেও যেন ব্যবস্থা করা হয়।’

তিতুমীর কলেজের ভবনগুলো সাধারণত তিনতলা। আর প্রতিটি ভবনের নিচতলাতেই শুধু ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী সবাইকেই একই ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হয়। ফলে অনেকেই দিনের একটি বড় অংশ কলেজে থেকেও ওয়াশরুমে যায় না। আর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী একই ওয়াশরুম ব্যবহার করায় সেটা পরিষ্কার করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। প্রায় সময় দুর্গন্ধে ওয়াশরুম ব্যবহার করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

ছাত্রীদের জন্য কমনরুমের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে ক্লাসের বাইরে থাকলে তাদের অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে হয়। অনেক সময়ই তারা কলেজ ভবনের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে।

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মনির হোসেন বলেন, ‘ওয়াশরুমে ঢোকাটাই কষ্টকর। সেখানে ব্যবহার করার পানি পর্যন্ত থাকে না। ক্যান্টিন নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই।’

পরিবহন সংকট : প্রায় ৫৬ হাজার শিক্ষার্থী এবং কয়েক শ শিক্ষক ও কর্মকর্তার জন্য বাস রয়েছে মাত্র চারটি। এই বাসগুলোর প্রতিটিতে আসন রয়েছে ৬০টি করে। অর্থাত্ ২৪০ আসনের একেকটি গড়ে ২৩৩ জন শিক্ষার্থীর ভাগে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বাদুড়ঝোলা হয়ে কলেজ বাসে আসা-যাওয়া করতে দেখা যায়। বাসের সামনের দিকে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও পেছনের দিকে শিক্ষার্থীরা বসে। শিক্ষকদের জন্য আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীরা রাজধানীর সব এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও বাস চারটি চলাচল করে উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর, মিরপুর, আজিমপুর ও মতিঝিল রুটে।

অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘আমি খিলক্ষেত থেকে কলেজের বাসে আসি। তবে প্রায় দিনই স্টপেজে দাঁড়িয়ে থাকি, শেষ পর্যন্ত উঠতে পারি না। আর উঠলেও বাদুড়ঝোলা হয়ে আসতে হয়। ফেরার সময় দেখা যায় বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগেই ভর্তি হয়ে যায়।’

গ্রন্থাগার ও সেমিনার হল : তিতুমীর কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বসে লেখাপড়া করতে পারে ১০০ জন। সেই হিসাবে প্রতি ৫৬০ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে একটি আসন। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। প্রতিটি বিভাগের ১০টির বেশি বই নেই। এর পরও শিক্ষার্থীদের চাপে হিমশিম খেতে হয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়া কিছু বিভাগে নামমাত্র সেমিনার হল থাকলেও সেখানে প্রয়োজনীয় বই পাওয়া যায় না।

আলমগীর হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গ্রন্থাগারে গেলে বসার জায়গা পাই না। আর বসার জায়গা পেলেও বই পাওয়া যায় না। ফলে নিজেদের মতো করে বই জোগাড় করেই পড়ালেখা করছি।’

খেলাধুলা হয় না মাঠে: কলেজের একটি মাত্র খেলার মাঠে খেলাধুলা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খেলার সামগ্রী দেওয়া হয় না কলেজ থেকে। ছাত্রদের কমন রুমে শরীরচর্চার যে সামগ্রী রয়েছে তার বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে মাঠে হাঁটাচলা করা বা বসে আড্ডা দেওয়া ছাড়া কিছুই হয় না।

সক্রিয় ‘বাঁধন’ : এতসব সংকটের মধ্যেও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা মানবিক দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে। তাদের রক্তদান কর্মসূচি কেন্দ্র ‘বাঁধন’ খুবই সক্রিয়। এই কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিয়মিত রক্তদান করে। মহাখালীর আশপাশের হাসপাতালের গরীব রোগীদের যাদেরই রক্তের প্রয়োজন হয় তারা চলে আসে তিতুমীর কলেজে। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত ব্যাগ রক্ত দান করে থাকে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা।

অধ্যক্ষের বক্তব্য : কলেজ ক্যাম্পাসে ক্যান্টিন চালু না করার বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন বলেন, আগে ক্যান্টিন ছিল। ক্যান্টিন পরিচালনা করা হতো বাইরের লোক দিয়ে। কলেজ কিছু ভর্তুকি দিত। কিন্তু এখন ক্যান্টিন পরিচালনার জন্য বাইরের কেউ আগ্রহ দেখায় না। সে কারণে চালু করাও যাচ্ছে না।

পরিবহনব্যবস্থার বিষয়ে অধ্যাপক আশরাফ বলেন, বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও জানে। বারবার জানানো হয়, কিন্তু এর সমাধান এখনো পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গ্রন্থাগারে স্থান সংকুলানের বিষয়ে তিনি বলেছেন, কলেজটি গড়ে উঠেছিল পাঁচ-ছয় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য। আগের অবকাঠামোতে তাই এখনকার ৫৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য গ্রন্থাগার সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052280426025391