১.মুদ্রণশৈলীর ইংরেজি পরিভাষা টাইপোগ্রাফি, যেটার সহজ অর্থ বর্ণের অলঙ্করণ। টেক্সটকে পাঠযোগ্য ও চিত্তাকর্ষক করার জন্য বর্ণ বা অক্ষরসমূহকে সুবিন্যস্ত করার বিজ্ঞান, কৌশল ও শিল্পকে মুদ্রণশৈলী বিজ্ঞান বলে। প্রকাশিত উপাদান বা টেক্সটের চেহারা ও পাঠ্যযোগ্যতার উৎকর্ষ সাধনের জন্য মুদ্রার, মুদ্রারের আকার ও শব্দ-বর্ণ-বাক্যের মাঝে ব্যবধান কেমন হবে তা মুদ্রণশৈলীর আলোচ্য বিষয়। যদিও টেক্সটের প্রতিটি উপাদানের আপেক্ষিক গুরুত্ব রয়েছে। সার্বিক শৈলীর সফলতা নির্ভর করে আরও অনেক কিছুর উপরে। বাছাইকৃত মুদ্রারের দৃশ্যমানতা, মুদ্রারের একে অপরের সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং পছন্দকৃত চিত্র ও রঙের সমন্বয় সাধন ও স্ক্রিন বা পৃষ্ঠায় এসকল উপাদানের স্থান বিন্যাসের মাধ্যমে মুদ্রণশৈলী টেক্সটের অর্থ সুস্পষ্ট করে থাকে। স্ক্রিনে প্রায়ই রঙিন পটভূমিতে রঙিন মুদ্রার দিয়ে লেখা থাকে এবং এটা চলমানও হয় অনেক সময়। সাদা পৃষ্ঠায় যেমন কালো কালির লেখা বোঝা যায়, তেমন সতর্কতার সাথে গতিশীল রঙিন মুদ্রণশৈলী নির্ধারণ করতে হবে।
মুদ্রণশৈলীর কাজ প্রকাশনায় ট্রেক্সটের সুপাঠ্যতা, বিন্যাস, নির্দেশনা ও সামঞ্জস্যতা বিধান করাই মূলত মুদ্রণশৈলীর কাজ। সুপাঠ্যতা বলতে একই টেক্সট পড়ামাত্রই বুঝতে পারাকে বোঝায়। সুপাঠ্যতার মাধ্যমে টেক্সটি পাঠ্যযোগ্য হয়। বইতে অনেক সময় কিছু জিনিস চোখে ভ্রান্তি সৃষ্টি করে কিংবা পাঠকের পড়ার গতি বার বার থেমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বইটি সুপাঠ্য না। সুপাঠ্যতার সাথেই সহজপাঠ্যতা বিষয়টি জড়িত, তবে দুটি বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। সহজপাঠ্যতার কারণে প্রতিটি অক্ষর ও বর্ণকে আলাদাভাবে চিনতে ও মর্মোদ্ধার করতে পারা যায়। প্রতিটি মুদ্রণের ফন্টে এক ধরনের স্পষ্টতা থাকে, যেটাকেই সহজপাঠ্যতা বলে। মুদ্রণশৈলীর সুষ্ঠু প্রয়োগের ফলে টেক্সটে সুপাঠ্যতা বজায় থাকে। সুপাঠ্যতা নিশ্চিত করতে সহজপাঠ্যতা, প্রবাহমানতা ও ছন্দ নিশ্চিতকরণ,মুদ্রণের ফন্ট আকার এবং স্পেসিং অর্থাৎ বাক্য-শব্দ-বর্ণের মাঝে ব্যবধান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। কোনো লেখার সুপাঠ্যতা যাচাইয়ের একমাত্র উপায় হলো লেখাটি পড়া। মনোযোগ ধরে রাখার জন্য আলাদা কসরতের প্রয়োজন হচ্ছে কিনা বা কোন অংশ দ্বিরুক্ত বা বাদ পড়ে যাচ্ছে কি না সর্ম্পকে সচেতন হওয়ার জন্য লাইনে দৃষ্টির গতি ও ছন্দের ব্যাপারে সচেতন হতে হয়।পড়া যেহেতু পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ, তাই চোখের জন্য পাঠ আরামদায়ক হচ্ছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে হয়। দুটি শব্দের মাঝে বা দুটি লাইনের মাঝে যদি অসম ব্যবধান থাকে, তাহলে পড়তে কষ্ট হয়। এমনকি পড়ার প্রবাহমানতা হারিয়ে যায়। আবার একই লাইনে যদি বিভিন্ন রকম মুদ্রার,ফন্ট ও আকার ব্যবহার করা হয়, সেটাও সুপাঠ্যতা বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য একই অনুচ্ছেদে যেন একই ফন্ট ও আকারের মুদ্রার ব্যবহার করা হয়, সেটার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২. মুদ্রণশৈলীর দ্বিতীয় কাজটি হলো বিন্যাস। বিন্যাস বলতে টেক্সটের কাঠামোকে বোঝায়। প্রতিটি টেক্সটের নিজস্ব কাঠামো থাকে। অনেক উপন্যাস অংশ বা অধ্যায় বিভক্ত থাকে। রেফারেন্স বইতে থাকে অধ্যায়, অনুচ্ছেদ বা অংশ। এছাড়াও গল্পে বিভিন্ন অংশ থাকে। আবার কবিতার কাঠামো একেবারে ভিন্ন। বইয়ের বিন্যাস দেখে পাঠক বুঝে যায়- এই বই থেকে কী ধরণের বিষয়বস্তু আশা করা যাবে। বিন্যাসের মধ্যে প্রিন্টকৃত বিভিন্ন উপাদানের শৈলী ও স্থান বিন্যাস এমন এক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত যা পাঠকের প্রত্যাশিত জিনিস খুঁজে পেতে করতে সাহায্য করে।
৩. নির্দেশনা মুদ্রণশৈলীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নির্দেশনার সাহায্যে পাঠক সহজেই বুঝতে পারে- কোন তথ্য কোথায় রয়েছে। শুরুতে সূচিপত্র, শেষে গ্রন্থপঞ্জি বিন্যাস করে গতানুগতিক পন্থায় বই বিন্যাস করলে পাঠকের বুঝতে সুবিধা হয়। এছাড়াও রানিং হেড, যেটা প্রতি পৃষ্ঠায় মার্জিনের উপরাংশে বা নিম্নাংশে বিন্যস্ত থাকে, সেটাও পাঠককে নির্দেশনা দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও অনেক বইতে দেখা যায় বাম দিকের পৃষ্ঠার মার্জিনে বইয়ের নাম এবং ডান দিকের পৃষ্ঠায় মার্জিনে অধ্যায় বা অংশের নাম উল্লেখ থাকে। রেফারেন্স বইতে নির্দেশনা সবচেয়ে জরুরি, তবে গল্প, উপন্যাস, কবিতা বা প্রবন্ধের বইতেও এর দ্বারা পাঠক উপকৃত হয়।
৪ মুদ্রণশৈলীর চতুর্থ কাজটি হলো টেক্সটের সামঞ্জস্যতা নিশ্চত করা। বইয়ের পুরোটা জুড়ে শিরোনামসহ বিভিন্ন স্তরের উপশিরোনাম, ইলাস্ট্রেশন, চিত্র বা টেবলের ক্যাপশন ও মেইন টেক্সট থাকে এবং সবগুলো যদি একই ফন্ট ও আকারের মুদ্রার ব্যবহার করা হয়, টেক্সট খুব ঘিঞ্জি তো দেখাবেই, বরং অর্থও বোঝা কষ্টকর হবে। বিভিন্ন স্তরের উপশিরোনামগুলো যেহেতু বিশেষ ক্রম অনুসরন করে গুরুত্বের ভিওিতে লেখা হয়, এ ক্রমতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে বই পড়ে পাঠক বুঝতে পারবে না। আবার শিরোনাম বা মেইন টেক্সট একেক স্থানে একেক ফন্ট ও আকারে লিখলেও বিভ্রান্তিকর দেখাবে। তবে পুরো বইতে সবগুলো শিরোনামে যদি মুদ্রারের একই ফন্ট ও আকার ব্যবহার করা হয় কিংবা মেইন টেক্সট বা ক্যপশনে একই ফন্ট ও আকার ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটা বুঝতে পাঠকের সুবিধা হয়। বিভ্রান্তি দূর করা মুদ্রণশৈলীর কাজ।
মুদ্রণশৈলী নির্ধারণে পাঠকের বয়স ও পাঠ-দক্ষতা এবং প্রকাশনার ফরম্যাটের উপরে নির্ভর করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রকাশিত উপন্যাসের চেয়ে শিশুদের বই আকারে বড় হবে। মুদ্রণের সাথে আবেগের ব্যাপারটাও যুক্ত। যেহেতু টেক্সটের মুদ্রণ তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের ব্যবহার করা হয়, যথোপযুক্ত মুদ্রার নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মুদ্রণের ভিন্নতা ও তথ্যক্রমের ভিওিতে ব্যবহৃত অন্যান্য মুদ্রার নির্ধারণ ও আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন প্রকাশনা হিসেবে প্রকাশ করতে চাইলে স্ক্রিনে কেমন দেখাচ্ছে, তা যাচাই করা এবং প্রিন্ট হয়ে বই আকারে প্রকাশ করতে চাইলে প্রিন্ট করে যাচাই করা উচিত। শিরোনাম, ক্যাপশন, টেক্সট, পাদটীকাসহ সম্ভাব্য সকল প্রকার উপাদান আছে এমন কিছু পৃষ্ঠা স্যাম্পল হিসেবে পরীক্ষা করাটা মুদ্রণ ও মুদ্রণের আকার কতটা সন্তোষজনক, পরিপূরক ও এ নকশা বা ডিজাইন আদৌ কাজ দেবে কিনা- ইত্যাদি নির্ধারণের শ্রেষ্ঠ উপায়। বাছাইকৃত মুদ্রন স্ক্রিনে ভেঙে ভেঙেও আসতে পারে, অথবা নির্বাচিত কাগজে স্পষ্টভাবে ফুটে নাও উঠতে পারে। সর্বোচ্চ সুন্দর মুদ্রণশৈল্পিক সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত একটার পর একটা মুদ্রণ নিরীক্ষা করা উচিত।
মুদ্রণশৈলীতে মুদ্রণ নির্ধারণের গুরুত্ব মুদ্রণশৈলী ও কার্যকরভাবে কাগজ বা স্ক্রিনে মুদ্রণের প্রাসঙ্গিককতার ভাষা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিভাষা ও মুদ্রণের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে কাগজ প্রকাশনা উন্নয়ন করে আসছে। কাগজ প্রকাশনায় প্রযোজ্য সব মুদ্রণই যে স্ক্রিন প্রকাশনায় কার্যকর হবে, এমনটি না। তবে বিভিন্ন উপায়ে স্ক্রিনে ব্যবহারের জন্য উপযোগী করা যায়।
মুদ্রণ নির্বাচনের সময় ফন্ট বিবেচনায় রাখতে হবে। এ ছাড়াও আমরা জানি, মুদ্রণের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার জন্য মুদ্রণশৈলীর নিজস্ব ভাষা আছে। এসকল পরিভাষার উপরে জ্ঞান থাকলে প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট সদস্যদের যোগাযোগ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সুবিধা হয়। মুদ্রণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বর্ণের এক্স-হাইট, লাইনের মাঝে ব্যবধান, কার্নিং এমনকি ট্র্যাকিং ও খেয়াল রাখতে হবে।
৫. মুদ্রণশৈলীতে শিরোনাম শিরোনামে মুদ্রণ নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিরোনাম সাধারণত ২৫০ শব্দের মধ্যে হয়ে থাকে। এবং ব্যস্ত পাঠক এবং যারা নির্দিষ্ট অংশ পড়তে চায়, তাদের জন্য শিরোনাম উপরাংশে বিভক্ত করে দুই লাইনে ভাগ করে দেওয়া যায়। যেসব পাঠক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চোখ বুলিয়ে যান, তাদের জন্য বিভক্তিকরণ খুবই কার্যকরী।
অভিন্ন অর্থাৎ শুধু একরকমের মুদ্রণ ব্যবহার করা যায়। মুদ্রন পরিবার ফন্ট নির্বাচনকে সহজ করে দেয়। এটা শিরোনাম ও টেক্সটে ভিন্নতা এনে থাকে। স্যান্স সেরিফ মুদ্রণে অধিক পরিমানে ফন্ট রয়েছে। অধিকাংশ সেরিফ মুদ্রণে চার ধরণের ফন্ট থাকে।
১. মাঝারি
২. মাঝারি ইটালিক
৩. বোল্ড
৪. বোল্ড ইটালিক
শিরোনামে দুই ধরণের মুদ্রণ ব্যবহার করা হয়:
১.টেক্সটের জন্য সাধারণ বা সাদাসিধে মুদ্রণ।
২.শিরোনামের জন্য জাঁকালো মুদ্রণ।
এমন দুটি মুদ্রণ বাছাই করা উচিত ভিন্নতা সৃষ্টির পাশাপাশি টেক্সট ও শিরোনামের জন্য খাপ খাবে। ভিন্নতা সৃষ্টির / পরিলিক্ষিত হওয়ার উপায়সমূহ নিম্নরূপ:
*স্যান্স সেরিফের বিপরীতে সেরিফ
*আলঙ্কারিকের বিপরীতে সাদাসিধে ফন্ট
*বোল্ডের বিপরীতে সাধারণ বা হালকা ফন্ট
*ছোটর বিপরীতে বড় মুদ্রণ
*রোমানের বিপরীতে ইটালিক
*সঙ্কুচিত স্পেসের বিপরীতে প্রশস্ত স্পেস
শিরোনামে একাধিক মুদ্রণ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। যদিও দুটির বেশি মুদ্রণ ব্যবহারের চিন্তা করা হয়, মুদ্রণ শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। বলা হয়ে থাকে, একটি ডিজাইন প্রতিটি শ্রেণির একটি করে মুদ্রণ নির্বাচন করা উচিত। যেমন, একটি সেরিফ, একটি স্যান্স সেরিফ, একটি স্ক্রিপ্ট ও একটি ডিসপ্লে মুদ্রণ। প্রতিটি মুদ্রণের ভিন্ন রুপগুলোও অবশ্য ব্যবহার করা যায় যদিও ইটালিকের বিভিন্ন কোনার সাথে স্ক্রিপ্ট মুদ্রণ মিশে বিশ্রি পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় এমন পরামর্শ দেওয়া হয় না।
বইতে অধ্যায় অংশ, প্রিলিমসের এবং এন্ড ম্যাটারের শিরোনাম সংগতিপূর্ণ শৈলীতে বিন্যাস্ত থাকে। সেগুলো পৃষ্ঠায় একই দুরত্বে বসানো উচিত। যেমন, ইলাস্ট্রেশন, সংখ্যায়ন এবং নির্দেশনার উপাদান। বড় কিংবা ছোট হাতের বর্ণের ব্যবহারে দুরত্বেও ভিন্নতা নির্ভর করে। নূন্যতম বড় হাতের বর্ণের সাথে ছোট হাতের বর্ণ ব্যবহৃত টেক্সটের ক্ষেত্রে দীর্ঘ শিরোনাম, বিন্যাস করা হয়।
টেক্সটের অভ্যন্তরে শিরোনাম অধ্যায়ে বিভক্ত করে। এসব শিরোনাম ‘শিরোনাম-শৈলী‘র সাথে সম্পৃক্ত যদিও এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট ও কম তাৎপর্যপূর্ণ হয়। এগুলোতে টেক্সটের থেকে ভিন্ন রং ব্যবহার করা হয়। এগুলোতে রেখা, বক্স থাকতে পারে, এমনকি মুদ্রণ ভিন্নতাও থাকতে পারে।
টেক্সটের শিরোনামের আকার টেক্সটের মুদ্রণের কাছাকাছি হয়।
শিরোনামটা অনেক দীর্ঘ হলে লাইন বিভাজন দেওয়া যায়। শিরোনাম এক লাইন অতিক্রম করলে দুই লাইনে বিভক্ত করার মাধ্যমে পড়া সহজ করা এবং লাইনের দৈর্ঘ্যে সমন্বয় আনা যায়।
পড়া সহজ করতে বিষয় বা মূল শব্দ বা শব্দসমূহ শিরোনাম লাইনের শুরুতে বসাতে হবে কিংবা মুদ্রণশৈলী প্রয়োগ করে টেক্সট থেকে পার্থক্য করতে হবে।
গুরুত্ব ও তাৎপর্যের উপর ভিত্তি করে শিরোনামে বক্স ব্যবহার করা যায়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শিরোনামটি বক্সের মধ্যে বিপরীত বা ভিন্ন মুদ্রণে রাখা যেতে পারে। যেমন: কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা রঙে শিরোনাম লেখা যায়। তাহলে কালো বা মৌলিক রঙয়ের সাথে সুষমভাবে বৈপরীত্য সৃষ্টি করবে। রঙিন বক্স যেহেতু খুবই শক্তিশালী, তাই শিরোনাম টেক্সট অন্তত বোল্ড সেন্স সেরিফ ফন্টে হওয়া উচিত । অবশ্য অতিরিক্ত বোল্ড করা ঠিক হবে না।
দ্বিতীয় সারির বক্স শিরোনামের ক্ষেত্রে ঝাপসা বক্সের মধ্যে কারো টেক্সট বিন্যাস করা যায়। অর্থাৎ আভা বা বক্সের রং যতই গাঢ় হবে,শিরোনামটি ততো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।অবশ্য পাঠযোগ্যতার দিকে নজর রেখে টেক্সট ও বক্সের বৈপরীত্য সৃষ্টি করতে হবে।
ব্যাকগ্রাউন্ড ও ফোরগ্রাউন্ডের মাঝে সমন্বয় আনাও মুদ্রণশৈলীর অন্যতম কাজ। পর্যাপ্ত ভিন্নতা রাখাই মুদ্রারের রং বাছাইয়ের প্রথম শর্ত। এটার মাধ্যমে পাঠযোগ্যতা ও স্পষ্টতা নিশ্চিত হয়। স্ক্রিন অথবা প্রিন্টে হালকা পার্থক্য তরুন পাঠকদের জন্য বিরক্তিকর, বয়স্ক ও বর্ণান্ধ পাঠকদের জন্য পড়া প্রায় অসাধ্য। যদি একরঙের কিংবা ধূসর মনিটরে টেক্সট পড়া হয়, তাহলে ব্যাকগ্রাউন্ড ও ফোরগ্রাউন্ডের মাঝে পার্থক্যটা থাকা আরও বেশি জরুরি।
প্রিন্ট ও স্ক্রিনে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো টেক্সট সবচেয়ে বেশি পাঠযোগ্য এবং পাঠকের বোধগম্যতার জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক। স্ক্রিনে প্রকাশ করার জন্য পাঠযোগ্যতা ও বোধগম্যতার প্রভাব ফেলবে না এমন অন্যান্য রঙ ব্যবহার করা যায়। তবে এ ধরণের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে হালকা ব্যাকগ্রাউন্ডে গাঢ় টেক্সটই বেশি পাঠযোগ্য হয়।
প্রকাশনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রণ নির্দিষ্টকরণ হলো টেক্সটের অনুচ্ছেদসমূহ। ক্যাপশন, টেবিল, উদ্ধৃত অংশ, চলমান শিরোনাম, রেফারেন্স এবং পাদটীকার ফন্ট মেইন টেক্সটের ফন্টের থেকে এক বা দুই পয়েন্ট ছোট হয়। তবে, পুরো টেক্স ভালোভাবে পড়তে পারাই হবে মূল লক্ষ্য। সর্বনিম্ন স্তরের শিরোনামের ফন্ট সাধারণত টেক্সটের ফন্টের সমানই হয়। তবে শিরোনামের ওয়েট ও স্পেসিং ভিন্ন হবে। যেহেতু শিরোনাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ, স্বাভাবিকভাবে একটু বড় হওয়া উচিত এবং দু পাশে বেশি স্পেস থাকা প্রয়োজন।
পরিশেষে, প্রকাশনা শিল্পের কাজ কিন্তু রচনা করা না, বরং রচিত পান্ডুলিপি সম্পাদনা, প্রুফ রিডিং, বিন্যাস ও চিত্রায়নের মধ্য দিয়ে নান্দনিক ও বাস্তবিক ব্যবহার উপযোগী করে পাঠকের সামনে উপস্থাপনা করা। প্রকাশনা সংস্থাকে মুদ্রণশৈলী অনুসরণ করে বই প্রস্তুত করতে হয়।তবে একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- প্রতিটি সংস্থা এক ধরণের শৈলী ব্যবহার করে না। আর এ শৈলী যেহেতু অনির্দিষ্ট ও অস্পষ্ট, বিষয়বস্তু ও প্রকাশনী ভেদে এটা পরিবর্তনযোগ্য। এছাড়া সব বয়সের পাঠকের জন্য একই শৈলী উপযুক্ত না। এজন্য নির্দিষ্ট পাঠকসম্প্রদায়ের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে, বইয়ের বিষয়বস্তু ও লেখার ধরণের উপর ভিত্তি করে মুদ্রণশৈলী ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর্যুপরি সফলতা ও অগ্রগতি এবং প্রকাশনায় ব্যবহারের কারণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একটি টেক্সকে পাঠযোগ্য ও নান্দনিকভাবে হাজারো কাঠামো ও বিন্যাসে বিন্যস্ত করা যায়। তবে শৈলী যেটাই হোক না কেন, মূল্য হলো পাঠক। বইটি পড়ার সময় পাঠক যাতে সাবলীলভাবে পড়ে অর্থ উদ্ধার করতে পারে, সেটাই প্রকাশনা ও মুদ্রণশৈলীর মুখ্য উদ্দেশ্য।
লেখক: প্রকাশক ও চেয়ারম্যান, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স