গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাসকে শিক্ষা কর্মকর্তার লাথি দেওয়ার ও বরখাস্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ। একইসাথে অভিযুক্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র রায় ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহার শাস্তি দাবি করেছেন পরিষদের নেতারা। একইসাথে এ ঘটনার প্রতিবাদে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগামী ১৮ অক্টোবর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (১১ অক্টোবর) দৈনিক শিক্ষাডটকমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসার পর প্রাথমিক শিক্ষকদের বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ মারধরের ঘটনা সন্ত্রাসী ঘটনাকেও হার মানিয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ ঘটনাকে উল্টা দিকে নিয়ে সন্ত্রাসী ঘটনার মদদ দিয়ে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। পরিষদ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করেন।
পরিষদ আরও বলছে, শিক্ষক যদি সরকারি বিধি লঙ্ঘন করেই থাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে। এখানে মারধর করা শিক্ষকের মর্যাদাহানী করা। এ ঘটনা সভ্য সমাজে কাম্য নয়। বিষয়টিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শিক্ষকের মর্যাদা নষ্টের প্রতিবাদে দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষককে আগামী ২৮ অক্টোবর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতার হলেন, মো. সিদ্দিকুর রহমান, এম এ ছিদ্দিক মিয়া, গোলাম মোস্তফা ও সাখাওয়াত হোসেন।
জানা গেছে, ২৮ নং উরফি বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের টাকার ভাগ না পেয়ে প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাসকে কয়েকদফা মারধর করেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির লোকজন। গত ৩ অক্টোবর এবং ৫ অক্টোবর দুই দফায় ওই শিক্ষককে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক কোনো বিচার পাননি। উল্টো প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক বলেন, গত ৫ অক্টোবর সকাল ৯টায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে গেলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মহিদুল আলম মাহাত্তাব খানের সঙ্গীয় লোকজন তাঁকে স্কুল থেকে জোর করে বের করে দিতে যায়। তবে তিনি স্কুল ছেড়ে বের হতে চাইনি। সেখানে বেধড়ক মারপিট করে সভাপতির লোকজন। মোবাইলে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ যান তিনি। পরে সেখানেও তাকে বেধড়ক মারপিট করে এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে গিয়ে ধারণকৃত ভিডিও চিত্র মুছে ফেলে।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘৩ অক্টোবর বিকেলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মহিদুল আলম মাহাত্তাব খানের উপস্থিতিতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র রায় স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লাথি মারে। আবার ৫ অক্টোবর সকালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির লোকজন প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মারপিট করেন। প্রধান শিক্ষক একটু সহজ সরল প্রকৃতির। তবে লোকজনের মারপিটে কেমন যেন তিনি অস্বাভাবিক হয়ে পড়েন। মাথা-পিঠে এত মার হলো যা বলার মতো না।