প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন প্রসঙ্গে - Dainikshiksha

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন প্রসঙ্গে

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

শিশু তার নিজস্ব পরিবেশে বেড়ে উঠে। পরিবেশ থেকে তারা ভবিষ্যৎ জীবনের নানা রঙিন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ভালোলাগাসহ শৈশবের নানা ঘটনা তাদের মনকে নাড়া দেয়। সে থেকে তারা পরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবতে থাকে। এ ভাবনা তাদের কল্পনার সাগরে সাতার কাটায়। স্বাধীন স্বতস্ফুর্তভাবে শিশু মনোবাসনা পূরণে এগিয়ে চলে। কারো কারো জীবনে অভিলাশ শুধু স্বপ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। আবার কারো জীবনের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ লাভ করে। বেশিরভাগ স্বপ্নের পেশা থাকে নামিদামি যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিচারক, মন্ত্রী ইত্যাদি। খুবই নগণ্য সংখ্যকের স্বপ্নের পেশা থাকে শিক্ষকতা। প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করেনা। 

গত ১৩ ডিসেম্বর “লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা” অনুষ্ঠানে তরুণদের প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “শিশুকালে আমার স্বপ্ন ছিল, শিশুদের তথা প্রাথমিক শিক্ষক হওয়া।” শিশু তথা প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রধানমন্ত্রীর শিশুকালের স্বপ্নে বিদ্যমান। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে, যেখানে বাংলাদেশ দাড়িয়েছিল ধ্বংসস্তুপের মাঝে। চারিদিকে শুধু সীমাহীন অভাব। ভয়াবহ অভাবের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ ও দেড় লাখ প্রাথমিক শিক্ষককে সরকারি চাকরির মর্যাদা দেন। তাঁরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু ও প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন। সেই সাথে তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ করেন। 

একমাত্র বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান। বাংলাদেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি ও শিক্ষকরা সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা পাচ্ছেন। উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এখনও বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি রয়েছে। শিশুদের ও প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর এ পদক্ষেপ গভীর আন্তরিকতার নিদর্শন। বর্তমানে সরকারের পদ্মাব্রীজ, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিনামূল্যে প্রাক-প্রাথমিক ইবতেদায়ি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণসহ অসংখ্য অর্জন দেশ বিদেশে খ্যাতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের সকল সরকারি কর্মচারী ও পেশাজীবীরা বর্তমান সরকারের ওপর সন্তুষ্ট। এত বিশাল অর্জনের মধ্যেও কেবলমাত্র প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভের ছায়া। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির মর্যাদায় দেয়া হয়েছে। তাঁরা বেতন পাচ্ছেন ১১ তম গ্রেডে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ২য় শ্রেনির মর্যদা প্রাপ্তরা ১০ম গ্রেডে বেতন পান। সহকারী শিক্ষকদের ১টি স্কেল বেতন বৃদ্ধি করলেও প্রধান শিক্ষক আর সহকারী শিক্ষকদের মাঝে বৈষম্য বেড়ে দাঁড়ালো ৩টি স্কেলের। পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের থেকেও বেতন কম পাচ্ছেন। সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে কম ছুটি ভোগ করেও প্রাথমিক শিক্ষকরা ননভ্যাকেশনাল কর্মচারী সুবিধা থেকে বঞ্চিত। 

অপরদিকে বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি হাইস্কুলের প্রাথমিক শাখা ও কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের সাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়সূচির ব্যবধান অনেক। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুবান্ধব একই সময়সূচির প্রত্যাশা কেন অযৌক্তিক? প্রাথমিকের সমস্যাগুলো দীর্ঘ বছরের পর বছর আশ্বাসে, ধমকে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। শিক্ষকদের প্রত্যাশা ছিল নির্বাচনের পূর্বেই তারা অন্যান্য পেশাজীবীর মত ক্ষোভের পরিবর্তে সরকারের পক্ষে আনন্দ মিছিল করবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী শিক্ষকদের বৈষম্যের কথা গভীরভাবে উপলদ্ধি করেননি। যদি করতেন, তবে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো নির্বাচনের পূর্বেই সমস্যার সমাধান হতো। মাননীয় মন্ত্রী শিক্ষকদের স্বার্থবিরোধী নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। বৈষম্য দূরীকরণ না করে এ পৃষ্ঠপোষকতা শিক্ষকদের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান করে মাননীয় মন্ত্রী হতে পারতেন তাঁর নির্বাচনীয় এলাকার মতো প্রাথমিক শিক্ষকদেরও একজন জনপ্রিয় নেতা। শিক্ষকদের নেতা যারা স্বীয় স্কুলের শিশুদের পাঠদান ব্যাহত করে ও শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে মন্ত্রণালয়ে কম্পন ধরাতে ব্যর্থ, স্বীয় স্বার্থ বদলি, প্রমোশন নানা তদবিরে ব্যস্ত মাননীয় মন্ত্রীকে তাদের সান্নিধ্য ত্যাগ করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষকদের হৃদয়ের মনি শেখ হাসিনার মতো এদেশের শিশু ও প্রাথমিক শিক্ষকদের ভালবাসা গ্রহণের জন্য সকলকে আহ্বান জানাই। শিশুরা নিষ্পাপ, অবুঝ। নিষ্পাপ শিশুদের শিক্ষা দান স্বর্গীয় পেশা। এ স্বর্গীয় পেশায় নিয়োজিত প্রাথমিক শিক্ষকেরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিশুকালের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে প্রাথমিক শিক্ষক হবেন। এ স্বপ্নের মানুষটির জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইলো। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আবারো নির্বাচিত করার বিকল্প নেই। 

গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণাকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমুখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনও রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তাই আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যেক প্রাথমিক শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ আপাময় জনসাধারণকে নিয়ে ‘নৌকা মার্কায়‘ ভোট দিয়ে তাদের সাথীকে নির্বাচিত করবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই প্রাথমিক শিক্ষক পরিবারের আপনজন হয়ে শিক্ষকদের পাশে থাকবেন। এই প্রত্যাশায়।

লেখক: আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069940090179443