চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কালীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে অবৈধভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন এনামুল হক মিয়াজী। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকও হয়েছেন তিনি। বর্তমানে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষিকার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়েছিলেন এনামুল। ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ভালোই চলছিল এনামুল হকের দিন। হঠাৎ রাগের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রভাষককে থাপ্পড় মেরে বসেন অবৈধ নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক এনামুল হক। এ থাপ্পড়ের পরই তার সব গোমর ফাঁস হয়ে যায়। অবৈধ নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে তদন্ত সব তথ্য উঠে আসে শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে।
অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক এনামুল হক মিয়াজীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে তলব করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তার শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, হঠাৎ রাগের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির একজন প্রভাষককে থাপ্পড় দেয়ার পর ওই প্রভাষক সংক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মিয়াজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত হয়। তদন্তে এনামুল হককে অবৈধ নিয়োগের বিষয়টি বেড়িয়ে আসে। অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক এনামুলকে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয় শিক্ষা অধিদপ্তর।
জানা গেছে, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই প্রভাষক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধে। সে প্রেক্ষিতে তদন্ত সম্পাদন করেছে কুমিল্লা অঞ্চলের কর্মকর্তারা। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ আগস্ট শিক্ষা অধিদপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান তারা।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে প্রধান শিক্ষক এনমুল হকের বিরুদ্ধে আসা অবৈধ নিয়োগ ও প্রভাষককে থাপ্পড় দেয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. এনামুল হক যোগ্যতা ও কাম্য অভিজ্ঞতা না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগের সময় এনামুল হকের কাম্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছিলনা। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষকের প্রাপ্ত বেতন ভাতা ফেরত যোগ্য বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যেহেতু তার সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ অবৈধ, তাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে তার দায়িত্ব পালন বিধিসম্মত নয়। তাই প্রতিষ্ঠানটিতে দ্রুত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুন : প্রভাষককে থাপ্পড় মারায় প্রধান শিক্ষকের গোমর ফাঁস
প্রতিবেদেনে আরও বলা হয়, এনামুল হক একজন প্রভাষককে থাপ্পড় মেরেছেন বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার সাথে এনামুল অনৈতিক সম্পর্ক গড়েছিলেন বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন এনামুল। সে টাকাও ফেরতযোগ্য। আর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং বিদ্যমান। তার মূলপদ প্রধান শিক্ষক ও সে পদে নিয়োগ অবৈধ হলেও এনামুল হক মিয়াজী নিজেকে অধ্যক্ষ পরিচয় দেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মিয়াজীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নথী পত্র পাঠিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।