প্রসঙ্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস - দৈনিকশিক্ষা

প্রসঙ্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ৯৯ বছর অতিক্রম করে শতবর্ষের দিকে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হলো। আমরা যারা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি কিংবা ভিন্ন সব ডিগ্রি অর্জন করে এদেশের রাষ্ট্র ও সমাজের বিচিত্র কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত—সবারই রয়েছে এর সঙ্গে আন্তরিক সংযোগ। বিশেষত যেসব গ্র্যাজুয়েট দেশের বাইরে অবস্থান করছেন কিংবা ভাষা আন্দোলনের উত্তাল মুহূর্ত থেকে তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে পদচারণা করেছিলেন, তারা ৮০ বছর বয়সে এসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মৃতির মণিকোঠায় ধারণ করে আছেন। বুধবার (১ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, এদেশের ঢাকা যেমন একমাত্র শহর, তেমনি এদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো পর্যন্ত অনন্য। জরিপ অনুসারে এশিয়া কিংবা বিশ্ববাসীর তালিকায় এই প্রতিষ্ঠানের নাম নিচে কিংবা ওপরে থাকার চেয়ে বাঙালির কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা। তবে নিজের প্রতিষ্ঠানের সুনাম সবাই প্রত্যাশা করেন, সবাই চান এর মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাক। উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে গত এক দশক কেবল আলোচনা, সমালোচনা ও সেমিনার হয়েছে। মাঝে মাঝে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়েছেন বিশিষ্টজনেরা। অবশ্য কার্যকর পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত গৃহীত হয়নি।

এ কথা ঠিক, ‘সুষ্ঠু পরিবেশ, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গুণগত শিক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়।’ কিন্তু চলতি বছরের ১৪ মে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখন সুযোগ-সুবিধা কম থাকলেও যোগ্য অধ্যাপকদের অভাব ছিল না। তার স্মৃতিকথা ‘কাল নিরবধি’ এবং ‘বিপুলা পৃথিবী’তে তিনি যে বিবরণ দিয়েছেন, তাতে দেখা যায় পাকিস্তান আমলের বিরূপ রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও তিনি নিজের চেষ্টায় এবং তার অধ্যাপকদের আন্তরিকতায় জীবনে সফল হয়েছিলেন। আসলে আমরা যতই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান, পাঠ্যক্রম, গবেষণা, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তদারকির কথা বলি না কেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অর্জন কম কথা নয়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯৯ বছর যাবত্ আমাদের চিন্তা-চেতনাকে প্রগতির পথে চালিত করেছে। কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িক ভাবনা, অবিচার-অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা শিখিয়েছে। গড়ে তুলেছে বৈষম্যহীন সমাজ। তবে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তা এখন অনুপস্থিত। শতবর্ষে এসে এই প্রতিষ্ঠান আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য, অর্থাত্ দল-মতনির্বিশেষ মানুষকে প্রগতিশীল চিন্তা ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিতে আনতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

ইদানীং কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে হতাশার কথা উচ্চারণ করেন। তারা বলেন, মানের অবনতির সবচেয়ে বড় কারণ হলো শিক্ষায় রাজনৈতিক প্রভাব। তারপর যে বিষয়গুলো ধর্তব্যের তা হলো—গবেষণা, অবকাঠামো, বাজেট, যোগ্য শিক্ষক এবং ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত প্রভৃতি।

এ সম্পর্কে আমাদের অভিমত হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বিধির অনুবর্তী, সেজন্য নির্বাচন এবং শিক্ষকদের দলীয় প্ল্যাটফরম থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে বিষয়টি এখন সামনে আনা দরকার তা হলো, দলীয় আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে অধ্যাপকদের রাজনীতিতে বেশি সময় ব্যয় কিংবা রাত-দিন নিজের দলের ভেতরে একাধিক গ্রুপের অতিতত্পরতা প্রভৃতির অনুশীলন। এক মতাদর্শের সমর্থকদের মধ্যে একাধিক বিভাজন থাকাটা কতটা যৌক্তিক কিংবা এক গ্রুপের বিরুদ্ধে অন্য গ্রুপের নোংরা প্রচারণা থাকা আদৌ দরকার কি না—এসব বিষয় নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। গত সাড়ে ১১ বছরে বর্তমান সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টায় উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটলেও পুরোনো ভূত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দূর হয়নি। অথচ আমরা সবাই বলে থাকি, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও উন্নত গবেষণা হচ্ছে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। অবশ্য সবাই এক কথায় স্বীকার করবেন, বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী শিক্ষানীতি ও এর সফল বাস্তবায়নের সুবাদে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণায় বরাদ্দ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক ফ্যাকাল্টি মেম্বার বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে গবেষণা করছেন। তাদের গবেষণার ফলাফল নন্দিত হচ্ছে। অনেকেরই গবেষণা ও প্রকাশনা আন্তর্জাতিক মানের। তারা মেধার ভিত্তিতেই সেখানে গিয়েছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই বিষয়গুলো সবাই মনে রাখলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব কখনো ম্লান হবে না।

লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.039486885070801