চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে করোনা রোগীদের জন্য আগামীকাল রোববার শুরু হতে যাচ্ছে ‘চট্টগ্রাম আইসোলেশন সেন্টার’। পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক আয়োজন সম্পন্ন করে ১০০ শয্যার এ সেন্টারে রোগী ভর্তি শুরু হবে। থাকবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্সসহ প্রয়োজনীয় লোকবল। একঝাঁক তরুণের উদ্যোগে ও চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সহযোগিতায় যাত্রা শুরু করা এ আইসোলেশন সেন্টারে করোনাক্রান্ত মৃদু ও মাঝারি উপসর্গের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। শনিবার (১৩) চট্টগ্রাম আইসোলেশন সেন্টারের প্রধান উদ্যোক্তা ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আজ পর্যুদস্ত। মুক্তিযুদ্ধের পর এক ভয়াবহ ক্রান্তিকাল পার করছে বাংলাদেশ। প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দুঃখের বিষয় হলো করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেসামাল বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। সরকারি হাসপাতালের সিট সীমাবদ্ধতা আর বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নয়-ছয় মনোভাবের কারণে এই নগরীর করোনাক্রান্তদের দুর্ভোগ আজ চরমে। আইসিইউ তো দূরের বিষয় অক্সিজেনের অভাবেই মারা যাচ্ছে অনেক রোগী। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণকারী এসব রোগীর স্বজনদের আহাজারীতে চট্টগ্রামের বাতাস আজ ভারী হয়ে উঠেছে।’
‘এসব স্বজনহারাদের আর্তনাদ আর মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের এই করোনা আইসোলেশান সেন্টারের প্রয়াস। একঝাঁক নির্ভীক আর মানবিক মানুষের অক্লান্ত শ্রমে গড়ে উঠেছে এই ১০০ শয্যার আইসোলেশান সেন্টার। যেখানে করোনা আক্রান্তদের পরম মমতায় বিনা পয়সায় সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হবে। আইসোলেশন সেন্টারে অক্সিজেন, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, পালস অক্সিমিটার, নেবুলাইজার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকবে’- বলেন সাবেক ছাত্র নেতা সাজ্জাত হোসেন।
তিনি জানান, এখানে ১২ জন চিকিৎসক ও ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক করোনা আক্রান্তদের সেবা দেবেন। যেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট থাকবে, স্বাভাবিক চিকিৎসাগুলো হবে, থাকবে ভালোবাসাময় সেবা। সেখানে করোনা রোগীরা খাবে, চিকিৎসা পাবে, সেবা পাবে, মানসিক সাপোর্ট পাবে। এছাড়াও রোগীদের পরিবহনের জন্য থাকবে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা।
এই মহতী উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন প্রধান উদ্যোক্তা ও মুখপাত্র- মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন, উদ্যোক্তা-নাজিমুদ্দিন মাহমুদ শিমুল, নুরুল আজিম রনি, অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা, অ্যাডভোকেট টিআর খাঁন, জাওয়াদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম, ইকরাম উল্লাহ, তৌহিদুল ইসলাম, জাফর আল তানিয়ার, নুরুজ্জামান, গোলাম সাদমান জনি, সাবিনা আক্তার, সুমন চৌধুরী, এম. তৌহিদুল ইসলাম ও সাদ শাহরিয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে কৃতজ্ঞতা জানানো হয় আই এম এস গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর আবুর প্রতি। যিনি নিজের কমিউনিটি সেন্টারকে এই আইসোলেশান সেন্টারের জন্য নির্দ্বিধায় বিনা শর্তে দান করেছেন।
সাজ্জাত হোসেন আরও বলেন, ‘মানবিক মানুষের নিরলস শ্রমে গড়ে ওঠা এই করোনা আইসোলেশান সেন্টার হয়ে উঠুক মানবিক সেবার এক অনন্য বাতিঘর। চট্টগ্রাম শহরের ৬০ লাখ বাসিন্দাদের মধ্য হতে যদি ৫০০ মানুষ এগিয়ে এসে রোগীদের জন্য খাদ্যসামগ্রী, ঔষধ, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারবেন। দয়া করে নিজের জায়গা থেকে যতটুকু পারেন এগিয়ে আসুন এই চট্টগ্রামকে করোনার মহামারী থেকে রক্ষা করতে। আমরা সবাই এই ক্রান্তিকালের এমন সময়ে এসে পড়েছি যেখানে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে আমাদেরকে এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করতে।’
এ সময়ে চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের করোনা বিষয়ক সেলের সমন্বয়ক ডা. আ.ন.ম মিনহাজুর রহমান।
এ স্বাচিপ নেতা বলেন, আইসিইউ শয্যার চেয়ে বেশি প্রয়োজন এইডিইউ সেবা। সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রার অক্সিজেন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হোক আমাদের লক্ষ্য। ভেন্টিলেটর নয়, হাইফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা ও নন বিব্রেদার অক্সিজেন মাস্কের প্রাপ্তি নিশ্চিত করলেই তীব্র উপসর্গে ভুগতে থাকা রোগীদের জীবন বাঁচানো সহজতর হবে।