বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জামদানি। যে ঐশ্বর্য ছড়িয়ে আছে জামদানির বুননে, তার স্বীকৃতি এসেছে ইউনেস্কো থেকেও। সেই জামদানির নকশা এবার ঠাঁই পেয়েছে বইয়ের পাতায়। মেলে ধরা হয়েছে জামদানি কাপড়ের বুনন কৌশল। আলোকচিত্রের সঙ্গে লিখিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে মিহি সুতায় বোনা কাপড়টির বিচিত্র নকশা, বয়নসহ নানা বিষয়। গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত হওয়া গ্রন্থটির শিরোনাম 'ট্র্যাডিশনাল জামদানি ডিজাইনস' বা 'ঐতিহ্যবাহী জামদানি নকশা'। বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের তত্ত্বাবধানে জামদানি নিয়ে মৌলিক গবেষণার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রচিত গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে জাতীয় জাদুঘর। গবেষণাকর্মে আর্থিক সহযোগিতা করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
গতকাল রোববার (১ জুলাই) জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। আলোচনা করেন বইটির প্রধান গবেষক ডিজাইনার চন্দ্র শেখর সাহা, জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, গবেষণার প্রকল্প সমন্বয়ক শাহিদ হোসেন শামীম ও বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক আবদুল মান্নান ইলিয়াস। স্বাগত বক্তৃতা করেন জাদুঘরের কিপার শিহাব শাহরিয়ার।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, জামদানি বয়নশিল্প আমাদের গর্ব ও ঐতিহ্যের অংশ। এটিকে জিইয়ে রাখা ও সমৃদ্ধ করা নৈতিক দায়িত্ব। জামদানি বয়নশিল্পীরা তাদের দুই হাতের ছোঁয়ায় যে অসাধারণ শিল্পকর্ম তৈরি করেন তা এক কথায় অসাধারণ অতুলনীয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জামদানির গুরুত্ব এবং এ শিল্পের কারিগরদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, জামদানি শিল্প বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং এর ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। অথচ জামদানি শিল্পীরা ভালো অবস্থায় নেই। মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি, বিদ্যুৎ ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। একইভাবে সরকারিভাবে জামদানি বয়নশিল্পীদের ভর্তুকি দেওয়া যায় কি-না তা ভেবে দেখা হবে। তিনি বলেন, এ খাতে প্রয়োজনীয় গবেষণা কাজে সহযোগিতা দেবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কাপড় মসলিন এ দেশে উৎপাদিত হয়েছে। এটা এ দেশের জন্য গর্বের বিষয়। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশের বয়নশিল্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেই ঐতিহ্যকে বাঁচাতে হবে। তাঁতিরা যে ধরনের কাপড় তৈরি করছেন, তা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারলে এ দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি জোরদার হবে।
চন্দ্র শেখর সাহা বলেন, পরবর্তীতে জামদানি নিয়ে যারা গবেষণা করবেন তাদের জন্য এটি আকর গ্রন্থ হিসেবে কাজ করবে। কারণ বইটিতে জামদানির অনেক পুরনো নকশা পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাঁতিদের যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বইটিতে জামদানির মৌলিক ৬৭টি নকশা স্থান পেয়েছে। রয়েছে দেশ ও বিদেশ থেকে সংগৃহীত ২৬টি নকশার ছবি, জামদানির বিভিন্ন নকশার নাম ও ডিজাইন। এ ছাড়া গবেষণায় পাওয়া ৩৯০টি নকশার মধ্যে বাছাই করে ১৯৬টি নকশা বইটিতে স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি ২০৭ জন তাঁতির নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরসহ নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৩ হাজার টাকা।