ববি উপাচার্যের কিছু কথা - Dainikshiksha

ববি উপাচার্যের কিছু কথা

ড. এস এম ইমামুল হক |

সম্প্রতি মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ২৫ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একাত্তরের বীরেরা বর্ণনা করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা। সন্ধ্যায় শহিদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। সব অনুষ্ঠান ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। ২৬ মার্চ সব ছাত্র ও ছাত্রী হলে ছিল বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা। বিকেলের আয়োজন ছিল শিক্ষক-কর্মকর্তা-সুধীজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য। বছরে কেবল এই একটি দিন এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন হয়। ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশ এই চা-চক্রে অংশগ্রহণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। তাৎক্ষণিকভাবে আমন্ত্রিত অতিথি, শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ প্রায় আট হাজার ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণে চা-চক্র আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব ছিল না। অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত এ আয়োজন পণ্ড হলো। আমন্ত্রিত অতিথিরা এসে ফিরে গেলেন।

২৭ মার্চ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিল। রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত আটকে রাখল অর্ধশত শিক্ষক-কর্মকর্তাকে। অনেক অনুরোধের পরও তাদের বের হতে দেওয়া হলো না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে লজ্জাজনক ঘটনা।

আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠানও হয় তাদের নিয়েই। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসসহ সব অনুষ্ঠানে সবার জন্যই থাকে একই খাবার, সবার জন্য উন্মুক্ত। পহেলা বৈশাখ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পিঠা উৎসবসহ সব আয়োজন হয় তাদের নিয়েই। প্রায় সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্মার ছাত্রছাত্রীরাই। খেলাধুলা, বিতর্ক উৎসব শুধু তাদের জন্যই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সময় যেসব বইমেলা হয়েছে, প্রতিটির আয়োজনে ছিল ছাত্রছাত্রীরা। বিভিন্ন বিভাগের দেয়ালিকা ভরে ওঠে ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল লেখা ও আঁকায়। রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ক্লাব পরিচালিত হয় তাদের দ্বারাই। ২৬ মার্চ শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা অংশ না নিলে এমন কী ক্ষতি হতো? 

আন্দোলনের নামে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশদ্বারে তালা ঝোলানো হয়। পরীক্ষা, ক্লাস কোনো কিছুতেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অংশ নিতে দেওয়া হয় না। শিক্ষক ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করা হয়। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার রুমে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় সাধারণ ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই।

স্বাধীনতা দিবসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণের সময় বলেছি, যারা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান করতে দিতে চায় না, তারা স্বাধীনতার পক্ষে বলে মনে হয় না। তাদের আচরণ রাজাকারসদৃশ। আমি ভালো করেই জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এমন শিক্ষার্থীই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমার কথা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীদের খেপিয়ে তোলা হচ্ছে। এর পেছনে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত আছে বলেই প্রতীয়মান। 

কিছু ছাত্রছাত্রী দাবি করে, ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে আমার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছি। শব্দটি আমি কোনোভাবেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে বলিনি। এরপরও যদি আমার ওই বক্তব্যে কোনো শিক্ষার্থী মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। তবে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। 

দুঃখ প্রকাশ করার পরও কেন আন্দোলন চলছে? এর পেছনে কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে? চা-চক্রে শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ না জানানোকে ইস্যু করে পরিকল্পিতভাবে এই আন্দোলন সাজানো হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমার আহ্বান, তোমরা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছ না, এতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তোমাদের ইতিবাচক পদক্ষেপই বদলে দিতে পারে সার্বিক পরিস্থিতি। 

আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। তারা শিক্ষা-দীক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবন, খেলাধুলা, বিতর্ক, কীর্তিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে আনবে- এ আমার বিশ্বাস। শিগগির এই অচলাবস্থার অবসান হবে এবং শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস- এই একান্ত প্রত্যাশা।

 

উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

 

সৌজন্যে: দৈনিক সমকাল

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042240619659424