বিশ্বকাপের উদ্বোধনের পর মাঠে গড়িয়েছে চারটি ম্যাচ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিশ্বকাপ উৎসব যেন শুরু হয়েও হচ্ছিল না। সেই উৎসবে রঙ লাগবে আজ থেকে। ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায়।
উৎসবের সেই রঙ আরো রঙিন হয়ে উঠবে কিনা, তা নির্ভর করছে টাইগার ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের ওপর। দলের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান লিটন দাস আশাবাদী, নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে জয় পাওয়া সম্ভব। তবে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা জয়ের লক্ষ্যের কথা বললেও এ ম্যাচে নিজেদের ফেভারিট ভাবতে রাজি নন।
প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হারলেও, দক্ষিণ আফ্রিকাকেই ফেবারিট মানছেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। তবে নিজের দল নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ দলপতি। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৩ বার প্রোটিয়াদের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। ২ হারের বিপরীতে টাইগারদের জয় ১টি। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাও চোটের কারণে হাশিম আমলাকে ছাড়াই মাঠে নামবে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামবেন তামিম। তবে সংশয় আছে অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিনের খেলা নিয়ে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করবে টিম ম্যানেজম্যান্ট।
ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেন, অনেকে চিন্তা করছে আমরা বিশ্বকাপ জিতে গেছি, সেমিফাইনালে উঠে গেছি। আমার কাছে মনে হয় এগুলো অপ্রয়োজনীয়। আমরা পুরো বিশ্বকাপে কোনো জায়গা থেকেই ফেভারিট না। কালকের ম্যাচেও না। দক্ষিণ আফ্রিকা ফেভারিট হিসেবেই খেলবে। তবে এটাও সত্যি কথা যে, আমরা আমাদের সেরাটা খেলব। প্রস্তুতি নিয়েছি, আমরা অবশ্যই চাইব জিততে, অবশ্যই ভালো করতে চাইব। আমরা ভাবছি না যে, ম্যাচটা হেরে যাব। দলের ওপর প্রত্যাশা নিয়ে মাশরাফি, প্রত্যাশা অনেক সময় সেরাটা বের করে আনে। তবে আমার কথা হচ্ছে, প্রত্যাশা যেন চাপ তৈরি না করে।
সামর্থ্য ও পরিসংখ্যানের হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চ বলে কথা। এখানে নিজেদের দিনে যারাই সেরাটা খেলতে পারবে, তারাই বাজিমাত করবে। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন হলেও তাদের হারানো নিয়ে আত্মবিশ্বাসী লিটন, এটা প্রথম ম্যাচ বলে নয়। এমনকি এটা যদি শেষ ম্যাচও হতো, আমরা জেতার কথা মাথায় রেখেই খেলতে নামতাম। কারণ ঠিক এ কারণেই আমরা এখানে এসেছি। আমরা জয়ের মানসিকতা নিয়েই খেলতে নামব।
তবে প্রথম ম্যাচের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণ নিয়েও ভাবতে হবে বাংলাদেশকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গতিতে বৈচিত্র্য এনে বেশ ভুগিয়েছেন প্রোটিয়া পেসাররা। স্পিনার ইমরান তাহিরও নিজের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছেন। তাই কাজটা সহজ হবে না বলেই মনে করেন লিটন, কোনো কিছুই সহজ হবে না। এ কন্ডিশনে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণ বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে আমাদের জন্য।
কেবল প্রোটিয়াদের বোলিং নিয়েই নয়, বাংলাদেশকে ভাবনায় রাখতে হচ্ছে উইকেটের বিষয়টিও। যে রকম রান উৎসবের আশা করা হচ্ছিল, এখন পর্যন্ত তেমনটা দেখা যায়নি। বোলাররাও উইকেট থেকে সাহায্য পাচ্ছে বেশ। ভালো উইকেট আশা করছেন বাংলাদেশ দলের কোচ কোর্টনি ওয়ালশও। তিনি বলেন, ওভালের উইকেট সচরাচর ভালোই হয়। স্কোরও ভালো হয়। ভালো একটি ম্যাচ আশা করছি। উইকেটও বেশ ভালো থাকার কথা। পেসার ও স্পিনার দুই পক্ষই সুবিধা পাবে বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে উইকেটের আচরণের কথা মাথায় না রাখার কথা বললেন লিটন, উইকেট কেমন আচরণ করবে সেটি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেয়া উচিত হবে না। এটা হতে পারে যে আপনি ভাবলেন উইকেটে অনেক সুইং হবে কিন্তু মাঠে সেই সুইংটা পাওয়া গেল না।
পাশাপাশি তিনশোর্ধ্ব স্কোরও বাংলাদেশের জন্য তাড়া করা অসম্ভব বলে মনে করেন না লিটন, গত কয়েক ম্যাচে আমরা তিনশর আশেপাশেই স্কোর করেছি। আমি মনে করি না, তিনশ বা তার বেশি রান এখন অনেক বেশি কিছু। যদি আমাদের সামনে ৩০০ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়, তবে আমাদের সে রকম মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে। আমরা যদি আগে ব্যাট করি, তবে লক্ষ্য থাকবে বড় সংগ্রহ গড়ার।
ম্যাচটি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য অ্যাসিড টেস্ট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা হেরেছিল ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। বাংলাদেশের কাছে হারলে বিশ্বকাপ মিশনটা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাবে। তাই ঘুরে দাঁড়াতে চায় তারা। প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি বলেন, ইংল্যান্ড আমাদের চেয়ে তিন বিভাগেই ভালো দল ছিল। এখন লিগের অন্য ম্যাচগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত। আমার কাছে এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে কোন জায়গায় ভুল হচ্ছে এবং তারপর এগিয়ে যেতে হবে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন উইকেট পাওয়া পেসার লুঙ্গি এনগিডির প্রশংসাও করেন ডু প্লেসি, লুঙ্গির অ্যাকশন খুবই সুন্দর। যেভাবে সে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, সেটা দারুণ। ম্যাচে জস বাটলারকে আউট করেছে, যে বিশ্বের অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়।