বাংলাদেশে শিক্ষকের মর্যাদা ও বিলেতের গরম - দৈনিকশিক্ষা

বাংলাদেশে শিক্ষকের মর্যাদা ও বিলেতের গরম

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী, আবাসিক সম্পাদক |

এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এত পিছিয়ে নেবার কী দরকার ছিল? জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে কিংবা আগস্টের প্রথম দিকে নিয়ে নিলে ভাল হতো। সকাল-বিকাল করে উভয় পরীক্ষাই নেয়া যেত। এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই টেনশনে আছেন। ছেলেমেয়েগুলো পরীক্ষার অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত। তাদের অনেকে এখন আর বই নিয়ে বসে না। সারাদিন মোবাইল নিয়ে ঘুরাঘুরি করে। ইউটিউব আর ফেইসবুকে ভিডিও দেখে। টিকটক করে সময় কাটায়। শিক্ষক কিংবা বাবা-মা কারো কথা শুনতে চায় না। এরা দিন দিন পড়াশুনা থেকে বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকের বেতের ভয় নেই। পরীক্ষায় ফেল করার ডরও নেই। এ কারণে ছেলেমেয়েরা দিন দিন পড়াশুনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তদুপরি, পরীক্ষা কাছাকাছি হলে এরা কিছুটা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকত।

কলেজে ভর্তি হবার ধান্ধায় সময় পার করত। এখন কোন কাম কাজ নেই। শুধু শুধু মোবাইল নিয়ে আড্ডা- ইয়ার্কি দেয়। মাথায় বিশ্রি ডিজাইনের চুল। এসব ডিজাইন কোথা থেকে এলো, কে জানে? এমনিতে করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় এরা লেখাপড়ার পথটি হারিয়ে বসেছে। সে পথে এদের ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগ নেই। না সরকারের, না অন্য কারো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয়না। শিক্ষা ক্যাডার থেকে যারা প্রেষণে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর কিংবা শিক্ষাবোর্ডে আসেন, তারা নিজেদের শিক্ষক পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেন, প্রভাষক হিসেবে তাদের চাকরিতে প্রবেশ হলেও তারা কর্মকর্তা পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এরা শিক্ষা, শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীর কল্যাণে কোনও চিন্তা করার সময় পান না। অফিসে লোভনীয় পদ-পদবি আর নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করেন। কয়েকজন মহাপরিচালককে (ডিজি) দেখেছি, যারা অবসর নেবার পর শিক্ষা ও শিক্ষকদের জন্য নতুন নতুন চিন্তার কথা জানিয়ে ভালবাসা উজাড় করে দেন। 'এটা করার ইচ্ছে ছিল, ওটা করতে পারি নাই' ইত্যাদি নানা কথা বলেন। ক্ষমতা থাকতে শিক্ষকদের জন্য কিছুই করেননি।  এমনকি ক্ষতি করেছেন। ভালো কিছু করতে চাননি। গত কয়েকদিন আগে সদ্য সাবেক ডিজি ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের একটি লেখা কোথায় যেন পড়েছি। সে লেখায় শিক্ষকদের প্রতি তিনি যে আবেগ ও ভালবাসা দেখিয়েছেন, ক্ষমতায় থাকতে এর শত ভাগের এক ভাগ থাকলেও শিক্ষক সমাজ বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকরা অনেক উপকৃত হতে পারতেন। যাই হউক, একটা সংক্ষিপ্ত রুটিন করে স্বল্প সময়ের নোটিশে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করা যেত। কেন জানি, আমাদের শিক্ষামন্ত্রণালয় বরাবর যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে অহেতুক বিলম্ব করে। বাস্তবায়ন করতে তারচে' বেশি সময় নেয়।

২০১০-এর জাতীয় শিক্ষা নীতির এখন আর কোন খবর নেই। কত ঢাক-ঢোল পিঠানো হলো। সকলে খুব বেশি আশাবাদি হয়ে উঠেছিলেন। যুগোপযোগি শিক্ষা হবে, এই স্বপ্ন ছিল আমাদের। কিছুই হলো না। এখন সেটি হিমাগারে পড়ে আছে মনে হয়। শিক্ষা আইন নিয়ে কতদিন থেকে বলাবলি হচ্ছে। কাজের কাজ কী হয়েছে ? খালি খালি শিক্ষক মারার ধান্ধা ! একবার বলা হলো, প্রাইভেট পড়ানো যাবে। আবার বলা হলো, পড়ানো যাবে না। একবার বলা হলো, নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পড়ানো যাবে না। আবার বলা হলো, পড়ানো যাবে। নোট-গাইড কতবার তারা নিষিদ্ধ করেছেন। বন্ধ করতে পেরেছেন ? পারেননি। নিজেরা পার্সেন্টেজের লোভ সামলাতে না পারলে নোট-গাইড কোনওদিন বন্ধ করতে পারবেন না। এখন শুনছি, শিক্ষকদের ফেইসবুক ব্যবহারের ওপর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। ভালো কথা।

শিক্ষকরা ফেইসবুক ব্যবহারে দায়িত্বশীল হবেন, সেটি সবাই প্রত্যাশা করে। তবে, শিক্ষকদের হাত-পা বেঁধে ফেলার জন্য কিছু করা হলে তা নিন্দনীয় কাজ হবে। অনেকে ফেইসবুকে যা তা স্ট্যাটাস দেন। সরকারের বিপক্ষে মিথ্যাচার করেন। খোদ প্রধানমন্ত্রি, প্রধানমন্ত্রির ছেলেমেয়ে এমনকি তাঁর পরিবার পরিজন নিয়ে বানোয়াট কথা বলে। অশ্লিল, অসামাজিক ও নোংরা ভিডিও আপলোড দেয়। যুবক-যুবতী ও কিশোর-কিশোরীরা এসব পোস্ট দেখে বিপথগামী হয়। ছাত্রছাত্রীরা এসব দেখে নষ্ট'র দিকে যায়। যারা এসব পোস্ট দেয়, এদের কিচ্ছু হয় না। তাদের কেউ কিছু বলে না। এদের ওপর কারো নজরদারি নেই। কেবল 'যত দোষ নন্দঘোষ'। শিক্ষকেরা ফেইসবুকে কী এমন পোস্ট দেন ?  নিজেদের মৌলিক অধিকার নিয়ে হয়তো বা এক-আধটু কথা লেখেন। পোস্ট দেন। জাতীয়করণের কথা, ন্যায্য বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার কথা, শতভাগ বোনাসের কথা বলেন। তাতেই গা জ্বলে। দয়া করে শিক্ষকদের মর্যাদাহীন করে তোলার মানসিকতাটি বাদ দিন। তাঁদের যথাযথ মর্যাদা ফিরিয়ে দিন। তাঁদের মৌলিক অধিকারগুলো দিয়ে দিন। দেখবেন দেশ ও জাতি অনেক ওপরে উঠে যাবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে বেশি দিন সময় লাগবেনা। উন্নত দেশে উন্নীত হতে অন্য কিছু করতে হবে না। সম্প্রতি কারিকুলামে ধর্ম শিক্ষা বিষয় নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। যদি ধর্মশিক্ষা বিষয় বাদ দেবার কোন পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে মহান জাতীয় সংসদের মত জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন সংসদ সদস্য কেন জাতিকে বিভ্রান্ত করার মত বক্তব্য দেন ? সংসদ সদস্য কি আইনের উর্ধ্বে? এর কি কোন বিচার নেই ? গতদিন দৈনিক শিক্ষাডটকমে, একটি প্রতিবেদনে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে  বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষার অবস্থা সবচেয়ে ভালো। এর কৃতিত্বটুকু কাকে দেবেন?  আমাদের শিক্ষকরাই এই কৃতিত্বের ষোল আনা দাবিদার। খেয়ে না খেয়ে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের কারণে আমরা এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বের মধ্যে আমাদের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের অবস্থান কোথায়, সেটি কি কেউ কোনওদিন খুঁজে দেখেছেন?  সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তার দিক থেকে কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পৃথিবীর  অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের অবস্থান অনেক নীচে রয়েছে। নিজেদের মান-সম্মান ও বেতন-ভাতার জন্য তাদের রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে নামতে হয়। এটি সম্ভবত পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।

গত দু'তিন দিন বৃটেনে খুব বেশি গরম পড়েছিল। অত্যধিক গরমের কারণে কয়েকটি শহরে রেড এলার্ট জারি করতে হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয়। লোকজনকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়। বাইরে কোথাও যেতে সাথে পানি রাখতে বলা হয়। ট্রেনে ভ্রমণ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। কোথাও কোথাও পাতাল রেল বন্ধ করে দেয়া হয়। গেল বছর এমন সময়ে এ দেশে সাত মাসের মত ছিলাম। এত গরম দেখিনি। এবার কোনও কোনও দিন তাপমাত্রা ৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। এ দেশে তিরিশ-চল্লিশ বছর ধরে বসবাস করছেন, এমন লোকজনও এতবেশি গরম কোনদিন প্রত্যক্ষ করেননি। গত বছর এমন সময় কোনদিন ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা যায়নি। তা আবার সপ্তাহে এক বা দু'দিন। দিনে দু'-চার ঘন্টা মাত্র। এই কয়দিন দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা অসহ্য গরম আর গরম ছিল। অধিক তাপদাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছিল। কয়েক বছর আগে অক্সফোর্ড শহরে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল। এটি ছিল বৃটেনের ইতিহাসে তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড। এবার সমগ্র বৃটেনে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উন্নীত হয়েছে। এটি এ দেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা। আমি গত দুই-তিনদিনে কার্ডিফ, ব্রিস্টল, ম্যানচেস্টার, লন্ডন প্রভৃতি শহর ঘুরে বেড়িয়েছি। অত্যধিক গরমের কারণে এই শহরগুলো একদম জন মানবহীন বলে মনে হয়েছে। করোনার সময় লকডাউন ছাড়া রাস্তাঘাটে এত কম লোকজন আর কখনও দেখা যায়নি। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যায়নি। এরপরও দু'-চারজনকে প্রচন্ড গরমের মধ্যে হাফ-প্যান্ট পরে রোদে হাঁটাহাঁটি করতে দেখেছি। সচরাচর এদেশে রোদের দেখা খুব কমই মেলে। তাই, রোদ থেকে 'ভিটামিন ডি' পেতে অনেকে রোদে হাঁটাহাটি করেন। পার্কে, সী বীচে কিংবা খোলা জায়গায় অনেককে শুয়ে শুয়ে রোদ পোহাতে  দেখা যায়।

আমাদের দেশে গরমের হাত থেকে বাঁচবার অনেক উপায় আছে। বেশি গরম হলে আমরা বৈদ্যুতিক পাখা কিংবা হাতপাখা ব্যবহার করি। ঘরের বাইরে, পুকুরপাড়ে, গাছতলায় হাঁটা চলা করি। পুকুরে কিংবা নদীতে গিয়ে গোসল করি। ঘরের ভেতরে, দোকানে, অফিসে, গাড়িতে এসি ব্যবহার করি। শীতল আবহাওয়ার দেশ বলে এখানে এসব ব্যবস্থা একদম নেই বললে চলে। এখানে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার নানা ব্যবস্থা থাকলেও গরমের হাত থেকে রক্ষার উপায় নিয়ে কেউ কোনওদিন চিন্তা করেননি। এ দেশের বাড়িঘর, দোকানপাট, অফিস-আদালতে সিলিং ফ্যান নেই। কোনওদিন ফ্যান কিংবা এসি'র প্রয়োজন পড়েনি। ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য প্রত্যেক ঘরে, দোকানে, অফিসে, গাড়িতে হিটারের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু গরমের হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় একেবারে কম।
 

এদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত। এখানে রাস্তাঘাটে কোন যানজট নেই। কোনওদিন জ্যাম চোখে পড়েনি। ট্র্যাফিক পুলিশ নেই। সিগন্যাল ও ক্যামেরা দিয়ে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়। এ দেশে লোকজনের চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। যানবাহনের চেয়ে রাস্তাঘাট বেশি। সারা দেশ জুড়ে আনাচে কানাচে কেবল রাস্তা আর রাস্তা। সারা দেশজুড়ে জালের ন্যায় পাকা রাস্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। রাস্তায় কোথাও খানা-খন্দক বা ভাঙাচুরা নেই। তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত বলে তারা আজ এত উন্নত। বিদ্যুৎ নিয়ে এখানে কোন সমস্যা আছে বলে মনে হয়না। বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা লোডশেডিং এখানে একেবারে অপরিচিত একটি শব্দ। বিদ্যুৎ ব্যবহারে তাদের কোন অপচয় নেই। এর সঠিক ব্যবহারের জন্য এদেশের লোকজন খুবই সচেতন। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারে এতটুকু সচেতন হলে লোডশেডিং অনেকটা কমানো যেত। 

 
গত ১৪ জুন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে বৃটেনে আসি। দুপুর পৌনে একটায় আমাদের ফ্লাইট ছাড়ার কথা থাকলেও এক ঘন্টা দেরিতে ছাড়ে। 'ন'টার গাড়ি ক'টায় ছাড়ে'? আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমানও সেই ঐতিহ্যটি এখনো ধরে রেখেছে! ! পৌনে দু'টার কাছাকাছি সময়ে আমাদের বিমান সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করে বৃটেনের ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর অভিমুখে রওয়ানা হয়। সরাসরি ফ্লাইট। পথিমধ্যে বিরতি নেই। সিডিউল মোতাবেক বৃটেনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় এবং বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া বারটায় ম্যানচেস্টার পৌঁছার কথা। ভেবেছিলাম, যেহেতু এক ঘন্টা বিলম্বে বিমান ছেড়েছে সেহেতু এক ঘন্টা বিলম্বে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু, আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, বিমানটি ঠিকই নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যায়। এ জন্য বাংলাদেশ বিমানকে ধন্যবাদ দিতে চাইলে জনৈক সহযাত্রী বাঁধা দেন। তার মতে, সময়মত না পৌঁছুলে ম্যানচেস্টার বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ বিমান অবতরণ করতে দেবে না। তাই সময় মত পৌঁছতে হয়েছে। বিলম্বে ছাড়লেও সময় মত পৌঁছতে হয়েছে, সেটি এ দেশের সময়ানুবর্তিতার জন্য। এ দেশে সময়ানুবর্তিতার বিষয়ে কোন আপোষ নেই। দুঃখ হয়, 'সময়ানুবর্তিতা' রচনাটি জীবনে বহুবার মুখস্ত করেছি। কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রয়োগ তেমন নেই। ইউরোপ-আমেরিকার দেশে সময়ানুবর্তিতার মূল্য অনেক বেশি। এসব দেশে টাইমিংয়ের বিষয়ে লোকজন খুব সচেতন। এ কারণে তারা আমাদের চেয়ে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পেরেছেন। মানবিকতার দিক থেকেও এ দেশের মানুষ অনেকটা উদার স্বভাবের। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা বলে আজকের লেখাটি এখানেই শেষ করতে চাই। দেশ থেকে আসার সময় চারটি ল্যাগেজ এনেছিলাম। একটাতে নিজের কাপড় চোপড়। বাকি তিনটায় মাছ, মাংশ, শুটকি, লতা, কঁচু শাক কিছুই বাদ যায়নি। পুত্র, পুত্রবধু ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের জন্য গিন্নি তার পছন্দের সবকিছু দিয়েছেন। পঞ্চাশ কেজির ওপরে মালামাল। ম্যানচেস্টার বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশনের জন্য বেশ কিছু সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। অনেক যাত্রী। ঘন্টা খানেকের মত সময় লেগে যায়। ইমিগ্রেশন শেষ করে বেল্ট থেকে ল্যাগেজগুলো সংগ্রহ করে বাইরে নিয়ে আসতে ট্রলির প্রয়োজন পড়ে। এতগুলো ল্যাগেজ। ট্রলি ছাড়া বাইরে নেয়া কঠিন। আমার ছেলে তার বন্ধুকে নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিল। ট্রলি সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যাই। এক পাউন্ড কয়েন নির্দিষ্ট বক্সে ফেলে না দেয়া পর্যন্ত একটি ট্রলি অন্যগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়না। অন্যান্য প্যাসেঞ্জার একটি করে কয়েন যার যার পকেট থেকে নির্দিষ্ট বক্সে ফেলে একেকটা ট্রলি নিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার কাছে কোনও কয়েন  ছিল না। অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। এই সময়ে কোথায় কয়েন পাবো ? বাইরে গিয়ে ছেলের কাছ থেকে  নিয়ে আসব কি-না ভাবছি। এমন সময় বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে আমার ডান-বাম দু'দিক থেকে দু'জন লোক আমাকে কয়েন দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। উভয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে একজনের হাত থেকে একটি কয়েন নিয়ে নেই। আমাকে সহায়তা করতে পেরে ভদ্রলোকের চোখে-মুখে তৃপ্তির এক অসাধারণ হাঁসি দেখতে পেলাম। সে এক অনন্য তৃপ্তি !  নির্দিষ্ট বক্সে কয়েন ফেলে একটি ট্রলি ধরামাত্র সেটি অন্যগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিলম্ব না করে ট্রলিতে মালপত্র উঠিয়ে দ্রুত বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে পড়ি। তুহিন তখন বাইরে তার বন্ধুকে নিয়ে আমার জন্য উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছিল।

লেখক  : অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী, আবাসিক সম্পাদক, দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তা। বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী। তিনি প্রাক্তন অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট। 

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041849613189697