বাকৃবিতে নির্যাতনের কৌশল ‘নৈতিকতা শেখানো’ - দৈনিকশিক্ষা

বাকৃবিতে নির্যাতনের কৌশল ‘নৈতিকতা শেখানো’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী। নেতাদের কাছে 'নৈতিকতা' শিখতে প্রতিরাতে গেস্টরুমে হাজিরা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। সেখানে সারাদিনের কাজের জবাবদিহি করতে হয়। কেউ মিছিলে না গেলে, নেতাদের সালাম না দিলে এবং তাদের আদেশ অমান্য করলেই চলে নির্যাতন। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদল-শিবির সন্দেহেও ধরে নিয়ে মারধর করা হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে অনেকে শিক্ষার্থীই হল ছেড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন বাসা বা মেসে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। গেস্টরুমে নির্যাতন বন্ধে হল প্রভোস্ট ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ছোলায়মান আলী ফকির। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মীর গোলাম মোস্তফা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিটি হলের গেস্টরুম একেকটি নির্যাতনকেন্দ্র। এর মধ্যে শহীদ শামসুল হক হল, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, ফজলুল হক হল ও শহীদ নাজমুল আহসান হলে বেশি নির্যাতন হয়। কারণে-অকারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতা-উত্তর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির কোন্দলে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আজ পর্যন্ত একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। সর্বশেষ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশরাফুল হক হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের পিটুনিতে নিহত হন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা সা'দ ইবনে মমতাজ। অভিযুক্ত ছয় ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং ২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। আটজনকে গ্রেফতার করা হলেও তারা সবাই জামিনে বেরিয়ে আসেন। মামলার তদন্ত শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এর পর পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও ওই মামলা নিষ্পত্তি হয়নি।

গত ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাল হোসেন হলের ছাত্রলীগের সভাপতি দীপক হালদারকে সালাম না দেয়ায় পশু পালন অনুষদের প্রথম বর্ষের ছাত্র মাকসুদুল হক ইমুকে রাতভর নির্যাতন করেছেন শহীদ জামাল হোসেন হল ইউনিট ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিশ শাফি, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শাওন এবং পাঠাগার সম্পাদক রাহাত হোসেন। রাত ১টা থেকে শুরু করে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কক্ষে আটকে রেখে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয় ওই শিক্ষার্থীকে।

দুই বছর আগে আশরাফুল হক হলের গেস্টরুমে নিয়ে ছাত্র ফ্রন্টের দুই নেতা সুজন রায় ও আশিকুর রহমান পুলককে পেটানো হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে শাহজালাল হলের শিক্ষার্থী রাসেল হাসানকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ায় গত বছর বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী আফসানা আহমেদ ইভাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। দিনের কাজকর্ম বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের না জানানোর কারণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের তৃতীয় বর্ষের ইরান মিয়া নামের এক শিক্ষার্থীকে জুতাপেটা করেন এক ছাত্রলীগ নেতা। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও জড়িত কারও বিরুদ্ধে আজও পর্যন্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, উন্নত বিশ্বের কোনো দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নেই। তারা কি চলছে না? আমাদের দেশে কী এত প্রয়োজন ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বুয়েটের মতো আমাদের ক্যাম্পাসেও ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ হোক।

গেস্টরুমে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটে না এবং হলগুলোতে কোনো টর্চার সেল নেই বলে দাবি করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। তারা বলেছেন, ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। নৈতিকতা ও ক্যাম্পাসে চলাফেরার নিয়মকানুন শেখানোর জন্যই নবীন শিক্ষার্থীদের গেস্টরুম করানো হয়। আমরা নিজেরাও গেস্টরুমে সিনিয়রদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সবুজ কাজী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বর্তমানে হলগুলোতে কোনো নির্যাতনের ঘটনা নেই। সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। গত ৪ আগস্টে এক ছাত্রকে নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থী হল শাখার সভাপতির সামনে ধূমপান করায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় বাকৃবি কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক শংকর কুমার দাশ বলেন, হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ধরনের চাপে না থাকে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে- এ লক্ষ্যে সব প্রভোস্ট কাজ শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037038326263428