জাতীয় শোক দিবসে ‘ক্লাস নেওয়ার অপরাধে’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুল হক ভূঁইয়া তারেককে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ মুজিবুর রহমান মজুমদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ এনে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমন পরিস্তিতির মধ্যেই তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন: ছাত্রলীগের অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে উদ্ধুত পরিস্থিতির কারণে তাকে ১ মাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ক্লাস নেওয়া যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্নে উপাচার্য বলেন: তাহলে সে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাসরুমে কী করছিল?
তবে ক্লাস নেওয়া হয়েছিল কিনা তা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদেরকে স্বল্পতম সময়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।
শোক দিবসে ওই শিক্ষক ক্লাস নিয়েছেন বলে শোক দিবসের অবমাননা হয়েছে দাবি করে তার পদত্যাগ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। তাকে বহিষ্কারের দাবি করে উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দেয় তারা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করেন উপাচার্য। বৈঠকের একদিন পরেই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল প্রশাসন।
ছাত্রলীগের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন: যাদের ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে ব্যাচের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। ইতিমধ্যে একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিতও হয়েছে। সুতরাং এখন তাদের কোনও ক্লাস নেওয়ার সুযোগ নেই।
ঘটনার ব্যাখ্যায় তিনি লেখেন: আমি ১৫ আগস্ট সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আসি। এরপর যথারীতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে ফুল প্রদান শেষে ওইখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। এর মধ্যে কিছু স্টুডেন্ট এসে বলে, তারা কিছু বিষয় বুঝছে না, একটু সময় দিতে।
“আমি তাদেরকে ডিপার্টমেন্টে আমার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে বলি। এর কিছুক্ষণ পর ডিপার্টমেন্টে গিয়ে দেখি ওরা সংখ্যায় প্রায় ১০-১২ জন। আর এর মধ্যেই আমার আরেকজন সহকর্মী অন্য ডিপার্টমেন্টের আরও দুজন সহকর্মীসহ রুমে আসেন। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে ওই রুমে বসে কথা বলা সম্ভব ছিল না, কারণে রুমে এত মানুষের বসার জায়গা ছিল না।”
মাহবুবুল হক ভূঁইয়া আরও লেখেন; আমি স্টুডেন্টদেরকে পাশের একটি রুমে বসতে বলি এবং নিজেও একটু পরে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
‘‘আদতে ওই ব্যাচের ক্লাস অনেক আগেই শেষ। সেমিস্টার ক্যালেন্ডার এবং ইতিমধ্যে শুরু হওয়া সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার রুটিন সে প্রমাণই বহন করছে। সুতরাং ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়। এখানে একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।’’
ভিত্তিহীন অভিযোগে ওই শিক্ষককে ‘হেনস্থা’ করা হচ্ছে দাবি করে তার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছে তার সহপাঠী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বক্তারা একজন শিক্ষক যখন শোক দিবসের কর্মসূচী পালন শেষে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ছুটির দিনেও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে একাডেমিক বিষয়ে আলোচনা করেন তাতে অবমাননা হয় কীভাবে? তার এ দায়িত্বশীলতাই বরং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।
উপাচার্যের ভাস্কর্য বিষয়ক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব থাকায় ওই শিক্ষককে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন বক্তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রভাষক কাজী আনিছ, যমুন টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাজমুল হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার মনিরুল ইসলাম, সময় টিভির সহকারী নিউজ এডিটর মানোয়ার হোসেন, আরটিভির রিপোর্টার খান আল আমিন প্রমুখ।
‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।