জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রামে বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির খবরে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ পর্ষন্ত পাঁচ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি) কোর্সে ভর্তি হওয়া সব শিক্ষার্থীর তথ্য চেয়ে জরুরি চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তিন দিনের মধ্যে এ তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ শিক্ষাবর্ষে ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও এসংক্রান্ত আদেশটি প্রকাশ করা হয়। ১৬ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা-২ শাখা উপসচিব বদরুন নাহার স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ পর্ষন্ত ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, রোল নম্বর, ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত জাতীয় মেধা তালিকার অবস্থান, ভর্তির তারিখ উল্লেখপূর্বক শিক্ষাবর্ষভিত্তিক পৃথক পূর্ণাঙ্গ তালিকা পত্র প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ চিঠিটি দেওয়া হয় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বরাবরে। অনুলিপি দেওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন কর্মকর্তাকে।
গত ৪ অক্টোবর বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) ওই মেডিকেল কলেজের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ১২ জন এবং ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ৪৮ জন শিক্ষার্থীর ভর্তিতে অনিয়ম ও জালিয়াতির ভয়াবহ তথ্য পায়। অভিযোগ মতে, এর মধ্যে ৫১ জন বিভিন্ন জাল তথ্য দিয়েছে এবং ৯ জন ভর্তি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বিএমডিসি। চট্টগ্রামের বেসরকারি এই মেডিকেল কলেজটি এখনো এসব তথ্য জমা দেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর এক দৈনিক পত্রিকায় চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ‘জোচ্চুরি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ওই দিনই জরুরি বৈঠক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে তদন্ত কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি বলে জানা গেছে। অভিযোগ উঠেছে তদন্তে নানা ধরনের গড়িমসি চলারও। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে একটি মহল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
একই ঘটনায় বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজও তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এস এম তারেক। তবে এই কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি কর্তৃপক্ষকে। চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এস এম তারেক গতকাল বুধবার বিকেলে বলেন, ‘২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ পর্ষন্ত পাঁচটি শিক্ষাবর্ষের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি জমা দিয়েছি। এসব শিক্ষাবর্ষে ৫০০-এর মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।’
কলেজের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আরো বলেন, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাইয়ান উদ্দিনকে প্রধান করে আমরা তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির কাজ চলমান রয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
গত ৪ অক্টোবর বিএমডিসি থেকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর ১৮ পৃষ্ঠার একটি নথি পাঠানো হয়। কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এ চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রেজিস্ট্রারের কাছে দেওয়া হয়।